বেশ কয়েকদিন ধরেই ফেসবুকের পাতায় অদ্ভূত সব পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছিল বাংলাদেশের বিতর্কতি লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে। কখনও তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেছেন মরণোত্তর দেহ হাসপাতালে দান করার কথা, আবার কখনও লিখেছেন, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। সঙ্গে হাসপাতালের বিছানায় তাঁর ছবি। লেখিকার এই ধরনের পোস্টে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। উদ্বিগ্ন ছিলেন অনুরাগীরা। প্রত্যেকের একটাই প্রশ্ন, কী হয়েছে লেখিকার? অবশেষে সেই রহস্যের পর্দা ফাস হল বুধবার রাতে। মৃত্যুচিন্তা নয়, শল্য চিকিৎসকের ভুলেই স্থায়ী ভাবে পঙ্গু হতে চলেছেন তসলিমা নাসরিন! বুধবার ফেসবুক পোস্টে এমন কথাই লিখেছেন তিনি।
ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট করে তসলিমা লিখেছেন কতটা যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছেন তিনি। এমনকি তসলিমা মনে করছেন যে তিনি পঙ্গুও হয়ে যেতে পারেন। আসলে মৃত্যু নয় এমন বিপদের মধ্যে রয়েছেন তিনি যা তাঁর মানসিক স্থিতির মৃত্যু ঘটিয়েছে। তসলিমার এই পোস্ট একই সঙ্গে বড় প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও।
কী ঘটেছে তসলিমার সঙ্গে ?
লেখিকা জানিয়েছেন, বড় মাপের পায়জামা আর চটি পড়ে ঘরে হাঁটছিলেন তিনি। আচমকাই হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে কেলেঙ্কারি। কিছুদিন বরফ শেঁক, ব্যথার ওষুধ লাগিয়েছেন। ফল না পেয়ে চিকিৎসকের শরণে। তখনই জানতে পেরেছেন বড় কেলেঙ্কারি ঘটেছে। তাঁর ফিমার বোনে চিড় ধরেছে। চিকিৎসকেরা তাঁকে দু’টি রাস্তা দেখান। এক, অপারেশন করে স্ক্রু দিয়ে ফিমার বোন আটকে দেবেন। দুই, আসল কোমরের জায়গায় নকল কোমর লাগিয়ে দেবেন।
এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। লেখিকা প্রথম পথটিই বেছে নিয়েছিলেন। গোল বাঁধল অস্ত্রোপচারের সময়ে। চিকিৎসদের সমবেত দাবি, প্রথম অস্ত্রোপচার সফল নাও হতে পারে। তসলিমা সুস্থ নাও হতে পারেন। তাঁর দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার দরকার। তারপর কী হল ? লেখিকার কথায়, ‘আমার হিপ জয়েন্ট কেটে ফেলে দিয়ে টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করা হলো। একটা পঙ্গু মানুষের জীবন আমাকে দেওয়া হল।’ তসলিমার সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানা যায় তিনি এক্সারসাইজ করা প্রচণ্ড অ্যাক্টিভ মানুষ। সাইক্লিং, সুইমিং, ট্রেড মিল করছেন, দৌড়োচ্ছেন। শরীর থেকে ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশার, ফাইব্রোসিস উবে গেছে। সেই তাঁকে চিকিৎসকেরা সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন, ‘চিন্তার কিছু নেই, তুমি হাঁটতে পারবে, তবে, কোমোডে বসতে পারবে না, উবু হতে পারবে না, পায়ের ওপর পা রাখতে পারবে না, ওজন বহন করতে পারবে না, নরমাল চেয়ারে বসতে পারবে না।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখিকার প্রশ্ন, ‘এ কেমন জীবন আমাকে দেওয়া হল! এই পঙ্গু জীবন পেতে কি আমি প্রাইভেট হাসপাতালে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করতে এসেছিলাম !’ বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই তিনি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে যা হল সেটা অনেকটা এইরকম–কেউ মাথাব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে আর ডাক্তার তার মাথাটাই কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ মাথা না থাকলে তো আর মাথাব্যথা হবে না!
সূত্র : Aajtak Bangla
Discussion about this post