হোসেন মনির
‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁন্দে’ বলে বাংলার আবহমান কাল থেকে এই প্রবাদটি মানুষের মুখে মুখে আছে। এখন সেই মাঘ মাস ! কণকণে শীতের দাপটে হাঁড় কাঁপানো কান্নাজড়িত কোন বাঘ আমাদের চোখে এযাবৎকাল না পড়লেও ‘মানুষ’ নামের কিছু প্রাণীর হাঁপানির যন্ত্রণা আর পড়নে তেমন না থাকা শীতবস্ত্র সাথে গলায় ঝোঁলানো সিগারেট বিক্রির ট্রে নিয়ে সকাল ৭ টায় কাঁপতে কাঁপতে শহরের ২ নং রেলগেট এলাকায় যায় দু’মুঠো অন্ন যোগাতে! এরকম প্রাণী আমরা এখন কম দেখলেও মাঝে মাঝে ।
হতভাগ্য-হতভাগা চোখে পড়ে ! তাঁরা জঙ্গলে স্থান পায়নি কারন তাঁদের জঙ্গলের প্রাণীরা মানুষ ভাবে ! আর আমাদের মানুষের সমাজে তাঁদের স্থান হয়না, কারণ তাঁরা আমাদের চোখে প্রাণী বলে ! আর প্রাণী ভাবি দেখেই এরা পায় না কোন বয়স্কভাতা, পায় না সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি ! এই প্রাণীদের পিতা মাতা এমন কোন নাম রাখেননি যার সাথে মিলে যায় বাংলার কাঙ্ক্ষিত কোন স্থাপনা ! তাই,কোন স্থানীয় রাজণীতিক,ইউএনও বা অন্যান্য কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা স্থানীয় নেতা-খেতাও আসেনি তাঁর কোন উপকারে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী জেলা নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরের ১৮ নং ওয়ার্ডের নিতাইগঞ্জ দাফন কমিটির গলিতে থাকা এই প্রাণীর নাম শংকর কুমার গুপ্ত । বয়স ৭০। তাঁকে ওখানে জামাই নামে সবাই নাকি চিনে।
সকাল ৭ টায় নিতাইগঞ্জের নলুয়া দাফন কমিটির গলিতে অটো পৌঁছাতেই এক বৃদ্ধ গলায় ঝোঁলানো ট্রে নিয়ে কোনো রকমে বলেছে,বাবা আমায় নে”! ধীরে ধীরে এসে ওঠার চেষ্টা করছে। গলায় ঝোঁলানো ট্রে নিয়ে কোন রকমে বসলো। ভীষণ হাঁপাচ্ছিলো শ্বাসকষ্টে ! তাঁকে জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে কেঁদে বলে উঠলো,”বাবা,আমার কেউ নেই”! আমার ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী কেউ নেই ! আপনি সরকারি কোন সাহায্য পান না ? তিনি বললেন,কাউন্সিলরকে বলেছিলাম, এখনো হয়নি ! মাস্ক পড়লে শ্বাসকষ্ট কম হতো ? তিনি বললেন, বাবা,দম বন্ধ হয়ে আসে-তাই মাস্ক পড়তে পারি না। কারবাড়িতে থাকেন ? বাবা, বাড়ির মালিকের নাম জানিনা ।
২নং রেলগেট এ নেমে গেলে তাঁর একটি ছবি তুলে রাখি কিছু লিখবো বলে।
শংকর কুমার গুপ্ত বেঁচে থাকার একটু আশা খুঁজছেন। ছবি তোলার সময় তিনি কি কি ভেবেছেন তাঁর গভীরে যেতে না পারলেও এটা বুঝেছি যে,”তিনি কিছু আশা করছেন নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের কাছে।
ভীষণ শ্বাসকষ্টে বাবা,আমার কেউ নেই- কথাটি বুকের মাঝে কঠিনভাবে বিঁধে আছে!এরকম পথেঘাটে যেখানে এরকম অসহায় মানুষগুলোকে দেখা যায় সেখানকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নেতৃত্ব, পরিবেশ, জন সচেতনতা, মানবাধিকার, স্বেচ্ছাসেবক মানবিক সংগঠন সম্পর্কে বিরুপ ধারনাই ফুটে ওঠে-ফুটে ওঠে প্রশাসনিক তদারকিরও !
পথেঘাটে এরকম অসহায় মানুষদের সহযোগিতার ইচ্ছেগুলো আকাশ তাড়িয়ে বেড়ায় ! ভেসে বেড়ায় আত্ম প্রশ্ন, কি জবাব দেবো মৃত্যুর পর মহান সৃষ্টাকে ? আসুন, এগিয়ে আসি এরকম অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ।
Discussion about this post