বিশেষ ক্লাসের ১২ মাসের বেতন ৬ হাজার টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সূচনা দাস নিতুকে নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩ বিষয়ে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষিকা লায়লা আক্তারের বিরুদ্ধে।
“বেতন দিতে পারো না স্কুলে মরতে আইছো কে ?” এমন কটুক্তি সহ নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩ বিষয়ে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে । ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সূচনা দাস নিতুর সঙ্গে নানা বাজে আচরণ করার অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করলে তোলপাড়ের ঝড় উঠে পুরো নগরী জুড়ে । একই সাথে এই মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারি প্রধান শিক্ষিকা লায়লা আক্তারের বিরুদ্ধে এর পূর্বেও শিক্ষার্থী – অভিভাবক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে বাজে আচরণ করারও অভিযোগ থাকলেও তার স্বামী একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ নিয়ে যা খুশি তা করে বেড়ায় এই শিক্ষিকা । যার বিরুদ্ধে আরো অসংখ্য অভিযোগও রয়েছে নগরীজুড়ে ।
একই সাথে বিগত সময়ে মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের কবির নামের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে যৌন হয়রানীর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠলেও ওই লম্পট শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই অজ্ঞাত কারণে। তবে নগরীতে মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা লায়লা আক্তার কিংবা লম্পট শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কোন খবর পাওয়া যায় নাই। ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সূচনা দাস নিতুকে পাঁচ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তির খবর গণমাধ্যমে প্রচারের পর অনেকেই তীব্র সমালোচনা করে বলেন, শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিলেন গাজী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা। কিন্তু যার কারণে এতো সমালোচনা তার / তাদের বিচার কে করবে ?
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, লায়লা আক্তার মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হলেও তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপলকেও তোয়াক্কা করেন না একজন রাজনৈতিক নেতার প্রিয়ভাজন হওয়ার কারণে। ওই রাজনৈতিক নেতার কারণে এবারও রক্ষা পেয়েছেন লায়লা আক্তার। আর কত দূর্ণাম হলে লায়লা আক্তার কিংবা করিব নামের ওইলম্পট শিক্ষকদের হাত থেকে মুক্তি পাবে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ? এমন প্রশ্ন অনেকের।
জানা যায়, জেলার মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সূচনা দাস নিতুকে পাঁচ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছেন গাজী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার খবর প্রকাশিত হলে মেধাবী এই শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকে কার্যালয়ে সূচনা দাস নিতু ও তার পরিবারের হাতে শিক্ষাবৃত্তির চেক তুলে দেন তিনি। এ সময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঞ্জুরুল হাফিজ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা বলেন, ‘গাজী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০০ মাসের ইনস্টলমেন্টে পাঁচ লাখ টাকার বৃত্তি গ্রহণ করতে পারবে নিতু। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর তার চাকরির ব্যবস্থাও করে দেবে গাজী গ্রুপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছোট বেলায় আমাদের পড়াশোনার সময় অনেক সমস্যা ছিল। বর্তমানে সরকার বই থেকে শুরু করে শিক্ষাসামগ্রী বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে এটা হয়েছে। পড়াশোনার আকুতি যার আছে, তার পাশে আমরা দাঁড়াব। সূচনা দাস নিতুর পড়াশোনার সেই আকুতি আছে। তাই গাজী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নিতুকে পাঁচ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা তার সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু নিতু নয় সমাজের সকল শিশু, যারা পড়াশোনা করতে চায়, ভালো রেজাল্ট করে, আমরা তাদের পাশে থাকব। দেশের পরিবর্তন করতে হলে আগে শিক্ষিত হতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের যে উন্নয়ন করেছেন তা আমাদের জন্য নয়, ভাবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। কিন্তু দেশের রূপরেখা পরিবর্তনের জন্য তোমাদের পড়াশোনায় মনযোগী হতে হবে।’
ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘সফল কারও জীবনের পথচলা মসৃন ছিল না। জীবনে বড় হতে হলে অনেক বাধা সামনে আসে। সেই বাধা আবার সুযোগও তৈরি করে দেয়। এই দেশে যে যেই সমস্যাতেই পড়ুক না কেন, তার পাশে দাঁড়ানোর মানুষও আছে। সাংবাদিকরা সূচনার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন বলেই বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং তাকে সহযোগিতা করতে পেরেছি। এজন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ।’
শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া সূচনা দাস নিতু বলে, ‘আমার মতো যারা সংকটে আছেন। তাদের প্রতিও সকলের সহৃদয় দৃষ্টি আশা করব।’ এ সময় জেলা প্রশাসক ও গাজী গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে।
নিতুর বাবা যুবরাজ রবি দাস, মাতা পারু রানী দাস ও মামা কার্তিক দাস জানান, নিতু মেধাবী ছাত্রী হলেও অর্থের অভাবে তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছিলেন না তারা। গাজী গ্রুপ তার পাশে দাঁড়ানোয় গাজী গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেন তারা।
Discussion about this post