রেস্টুরেন্টের আড়ালে অবৈধ মদের ব্যবসা করেন মো. মুক্তার হোসেনের। ওয়েটার থেকে হয়েছেন শতকোটি টাকার মালিক। রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় গড়ে তুলেছেন ৫টি বার। তার যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি-বাড়ি আছে। সেখানে বসবাস করেন তার স্ত্রী ও সন্তানরা
যদিও মূল হোতা মুক্তারকে ধরতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ। তবে তার পরিচালিত উত্তরার গরীবে নেওয়াজ রোডের কিংফিশার বার থেকে আটক করা হয়েছে ৩৮ জনকে।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতেই রেস্টুরেন্টের ভেতরেই কেনাবেচা হতো নামিদামি ব্র্যান্ডের মদ।
তিনি জানান, লাইসেন্স না নিয়ে রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ডের আড়ালে দেশি-বিদেশি মদের রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করা হতো। রাজধানীর রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করা মুক্তার মাদকের ব্যবসা করে বনে গেছেন কোটিপতি। বৃহস্পতিবার রাতে সেই কিংফিশার বারে অভিযানে মিলেছে ৫ হাজার ৪০০ দেশি-বিদেশি মদের বোতল ও বিয়ার।
ডিবি জানায়, ছয়তলা একটি ভবনে দীর্ঘদিন ধরে বারটি চলছে। বারের কর্তৃপক্ষ কোনো নির্ভরযোগ্য অনুমোদন দেখাতে পারেনি। বারটি থেকে শতাধিক মানুষকে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় বার ম্যানেজারসহ ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মুক্তার হোসেন পলাতক। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন: আবু সালেহ, মো. মোহন, মুকুল, মো. সিব্বির আহম্মেদ, রাসেল, আবুল কাসেম মিন্টু, নাহিদ দারিয়া, শান্ত ইসলাম, আলিম উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেন, রহমত আলী, খালেক সাইফুল্লাহ, ইমরান, মো. সাহান শেখ, মো. মোফাজ্জেল, ওবায়েদ মজুমদার, ইবাদত খান, রাইস উদ্দিন, রায়হান, মো. রুবলে, রিফাত, ফয়সাল, শরিফুল ইসলাম, রাসেল, জাহিদ হাসান, রওশন জামিল রাসেল, হুমায়ুন কবির, তোফাজ্জেল হোসনে, মো. রিয়াদ হোসেন, আল আমনি, কাইয়ুম, নয়ন দাস, শাওন দাস ও মাহমুদুল হাসান।
হারুন অর রশীদ জানান, ওই বারে প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষের যাতায়াত ছিল। তাদের মধ্যে সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষ রয়েছেন। শুধু মদ বিক্রি নয়, বারটিতে নারী নিয়ে অসামাজিক কার্যক্রমের অভিযোগের কথাও জানান তিনি।
ডিবি জানায়, মুক্তার হোসেনের আরও বার রয়েছে। মিরপুর, গুলশান ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি বার চালান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ২৯ জানুয়ারী পুরো নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রবল বাঁধার মুখে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সামছুল আলমসহ স্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও জেলা পর্যায়ের অসাধু কিছু উচ্ছিষ্ঠভোগিদের সহায়তায় বিতর্কের ঝড় তোলা চাষাড়ার ব্লু পিয়ার নামক মদের বার মিলাদের মাধ্যমে উদ্বোধনের করা হয়। আর মদ/বিয়ারে আপ্যায়ন করা হয় অতিথিদের। এমন ঘটনায় মুসুল্লীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী বুধবার নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মদের বার আনুষ্টানিকভাবে বন্ধ ঘোষনা করলেও এখনো পর্যন্ত গোপনে এই মদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে মহা চতুর মুক্তার হোসেন।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল রাতে নারায়ণগঞ্জের দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন এসপি (বর্তামান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ফতুল্লার পাগলা এলাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান পর্যটন জাহাজ মেরিএন্ডারসন থেকে ৬৮ জন মাদক সেবী ও ব্যবসাযীকে গ্রেফতার করে। একই সাথে উদ্ধার করা হয় ৪২ বোতল বিদেশী মদ, ৭৫ বোতল দেশী কেরো মদ, ১৯২০ ক্যান বিভিন্ন প্রকারের বিয়ার এবং মাদক বিক্রির ৪৮ হাজার ৯২০টাকা উদ্ধার করা হয়। এমন ঘটনায় তৎকালীরন সময়ে এক রাঘাববোয়ালের নাম উঠে আসলেও ওই ঘটনার মূল অপরাধীদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারে নাই পুলিশ ।
পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসপি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বদলী হলে ওই মামলার দৃশ্যপট পাল্টে যায় নানা কারণে। আর ওই রাঘববোয়ালরা এখন ধরা ছোয়ার বাইরে। একই কায়দায় ওয়েটার থেকে শত কোটি টাকার মালিক মুক্তার আইনশৃংখলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সাথে বিদেশ ভ্রমণ করে ছবি পোস্ট করে তার ফেসবুকে। এমন ছবি দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, “পাগলার মেরি এন্ডারসনের রাঘববোয়ালের মতো মুক্তারও এখন আরেক রাঘববোয়াল । তার টিকিটিও স্পর্শ করা কঠিন। আর অচিরেই ডিবি পুলিশের এমন সাহসী অভিযান ঝিমিয়ে পরতে পারে নিমিষে। যেমনটি িএসপি হারুন নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের চক্ষুশূলে পরিণত হলেও পরবর্তীতে অন্যান্য এসপি চুপসে গেছে মেরি এন্ডারসনের মামলার ক্ষেত্রে ।
Discussion about this post