এমন অস্ত্র মামলা ছাড়াও আন্ডারগ্রাউনন্ডের অধিপতি এই জিকে শামীম বিএনপি সরকারের শাসনামলে মির্জা আব্বাস কে ব্যবহার করে বিশাল অপকর্মের পাহাড় গড়ে তুলে ।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর হাই সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মোঃ বাদল ছাড়াও প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের সাথে সখ্যতা করে গণপূর্থ নিয়ন্ত্রণ করাসহ নানা অভিযোগ উঠে নগরজুড়ে।
এমন অসংখ্য অভিযোগ ছাড়াও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে এই জিকে শামীম ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান কে সাথে নিয়ে বিতর্কিত ঠিকাদার সালাউদ্দিন কে নিয়ে বৈঠকের ঘটনায় সমালোচনা ঝড় উঠে বারবার ।
এমন ছবি প্রকাশের পর নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর অনেকেই বলেছেন, শামীম ওসমানকে বিতর্কে ফেলতে ঠিকাদার সালাউদ্দিন ছিলো নাটের গুরু । এমন অভিযেগ ও গুঞ্জন এখনো চলছেই ।
আজ রায় :
রাজধানীর গুলশান থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় জি কে শামীমসহ তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ রোববার দিন ধার্য রয়েছে।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করবেন।
এর আগে, গত ২৮ আগস্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেন আদালত।
এ মামলার বাকি আসামিরা হলেন- জিকে শামীমের ৭ দেহরক্ষী মো. জাহিদুল ইসালাম, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. মুরাদ হোসেন।
২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিজ কার্যালয়ে ৭ দেহরক্ষীসহ গ্রেফতার হন জি কে শামীম। পরে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচার আইনে তিনটি মামলা হয়। মামলায় শামীমকে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক ও জুয়া ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করা হয়। একই বছরের ২৭ অক্টোবর আদালতে অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১ এর এসআই শেখর চন্দ্র মল্লিক।
২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। এ মামলার বিচার চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে ১০ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি আমিনুল ইসলাম জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছেন মর্মে ডকুমেন্ট দেখালেও যাচাইয়ে তার সঠিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি মূলত অবৈধ অস্ত্রটি ৭০ হাজার টাকায় ক্রয় করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করেন। ঐ অস্ত্রের নকল কাগজপত্র নিয়ে ২০১৭ সালে প্রথমে এস.এম বিল্ডার্স কোম্পানিতে যোগদান করেন। পরে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে যোগদান করেন।
অন্য আসামিরা নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও তারা শর্ত ভঙ্গ করে অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসা করে স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।
নিম্নে দেয়া হলো কে এই জিকে শামীম
বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, এফডিআর, মদ ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দেহরক্ষীসহ জি কে শামীম হয়েছে।
জুমার নামাজের পর তাকে গ্রেফতারের খবর স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকার সুবাদে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কে এই জি কে শামীম ? জনমুখে ফিরছে এ প্রশ্ন।
যুবলীগের সমবায় সম্পাদক হিসেবে পরিচয়দানকারী জি কে শামীমের পূর্ণ নাম এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম। নারায়ণগঞ্জ শাখা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও হিসেবে পরিচয় দিলেও জিকে শামীমের কোন পদ পদবী ছিলো না ।
বিএনপি সরকারের শাসনামলে জিকে শামীম ঢাকা মহানগর যুবদলের সহ-সম্পাদক ছিলেন। জি কে শামীম বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাসের খুবই ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।
যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে জি কে শামীম পরিচয় দিলেও শুক্রবার উভয় সংগঠন থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।
যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান বলেন, জি কে শামীম যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পদে নেই। তবে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে থাকতে পারেন। নারায়ণগঞ্জেও কোজ নিয়ে জানা গেছে সবাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোঃ বাদল নানা বাবে এই জিকে শামীমকে জেরা আওয়ামীলীগের কোন একটি পদে অধিষ্ঠিত করতে চেষ্টা চালালেও মেয়র আিইবলি বিরোধীতায় তা আর করতে পারে নাই ।
তৎসময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাই যুগান্তরকে বলেন, ৭১ সদস্যের জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির কোনো পদে জি কে শামীম নামে কেউ নেই। সহ-সভাপতিসহ ছয়টি পদ নানা কারণে শূন্য আছে। ওইসব পদে কারও নাম প্রস্তাব করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। সুতরাং এ নামের কেউ দলীয় পদে থাকার কথা নয়।
জি কে শামীমের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তার বাবা মো. আফসার উদ্দিন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সন্মানদী ইউনিয়নে বাড়ি হলেও শামীম ১০ম শ্রেণী পাসের পর ঢাকায় চলে আসেন।
ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় তিনি বড় হয়েছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজ। বড় ভাই গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন। অপর ভাইয়ের সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি।
বনানীতে বসবাসকারী জি কে শামীমের অফিস নিকেতনে। নিকেতনের অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাসাবো এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন।
জানা গেছে, বাসাবোর কদমতলার ১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়ি জি কে শামীমের। বাড়িটি ম্যানেজার হিসেবে দেখাশোনা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি। বাসাবোতে তার আরও তিনটি ভবন আছে। ডেমরা ও দক্ষিণগাঁও ছাড়াও সোনারগাঁ উপজেলা, বান্দরবান ও গাজীপুরে কয়েকশ’ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।
রাজনীতি ও ঠিকাদারি করার কারণে বেশ প্রতাপ আর প্রভাবের অধিকারী শামীম। অস্ত্রধারী দেহরক্ষী পরিবেষ্টিত হয়ে তিনি চলাফেরা করেন। তিনি গাড়িবহর নিয়ে চলাফেরা করেন। তার গাড়ির আগে-পরে থাকে একাধিক গাড়ি।
তিনি নিজেই অনেকটা ভিআইপি মর্যাদার পরিস্থিতি তৈরি করেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠান যেখানেই তিনি যান সঙ্গে থাকে দেহরক্ষী।
সবুজবাগ-বাসাবো এলাকায় জি কে শামীম বেশ পরিচিত। তার ক্ষমতা ও অর্থের দাপট সম্পর্কে এলাকাবাসী ওয়াকিবহাল। তাই কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না।
শুক্রবার সরেজমিন শামীমের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার অভয়ারণ্য গণপূর্ত বিভাগের পরিচিত ঠিকাদারের কাছ থেকেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার নাম শুনেই অনেকে আঁতকে ওঠেন। কথার জবাব না দিয়ে তারা চলে যান।
তবে নাম প্রকাশ না করে বাসাবো ও সবুজবাগ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, যুবদলের ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজনীতির মাধ্যমে শামীমের উত্থান। মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা কালু ও মির্জা খোকনের ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেন শামীম। তাদের হাত ধরে তিনি গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু ও পরে নিয়ন্ত্রক বনে যান। এক পর্যায়ে ঢাকা মহানগর যুবদলের সহ-সম্পাদকের পদ তিনি লাভ করেন। বর্তমান সময়ের মতো বিএনপি আমলেও গণপূর্ত ভবন ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।
Discussion about this post