বিচিত্র এক রাজনৈতিক অঙ্গন নারায়ণগঞ্জ । বিএনপির সাথে আওয়ামীলীগের বিরোধ তেমন দেখা না গেলেও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে নাসিক মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে শামীম ওসমানের বিরোধ নিয়ে সর্বত্র ও সবসময় আলোচনা সমালোচনা রয়েছে সকলের মুখে মুখে । দেশে পজিটিভ ও গ্রহণযোগ্য রাজনীতিবিদ হিসেবে তরতর করে উপরে উঠেই যাচ্ছেন আইভী, আর একই দলের প্রভাবশালী নেতা সংসদ সদস্য শামীম ওসমান একই অবস্থানে দীর্ঘদিন । কেন এতো বছরের রাজনীতিতে তেমন কোন উচ্চাসন দেয়া হরো না কেন ? এমন প্রশ্ন নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প রয়েছে নগরবাসীর মুখে। এতো কিছুর পর কেমন প্রতিক্রিয়া ছিল শামীম ওসমানের ? কতটা খুশি হয়েছিলেন তিনি ? প্রথম খবরটা শোনার পর তাঁর চেহারায় কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছিল কি ? এমন হাজারো প্রশ্ন গত কয়েকদিন ধরে বন্দর নগরীখ্যাত নারায়ণগঞ্জে।
মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ার পর শামীম ওসমান এমপি কি তাঁকে উইশ করেছিলেন ? ‘বোনের মর্যাদা বৃদ্ধির খবরে ‘ভাই’ ফুল, মিষ্টি পাঠিয়েছেন কি ? না-কি ‘চাপা কষ্ট’ আরও বেড়েছে তাঁর কর্মী, সমর্থক আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের ? খোঁজ নিতে গিয়ে এমন হাজারো প্রশ্নের কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না গণমাধ্যম কর্মীরা ।
নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভীকে সরকার প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার পর এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠদের কাছে শামীম ওসমান না-কি মুখই খোলেননি । এমনকি তাঁর সামনে বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ চর্চা করার চেষ্টা করলে উল্টো থামিয়ে দিয়েছেন ।
কেন ? শামীম ওসমান কি প্রসঙ্গ ভুলে যেতে চান ? কোনো ‘চাপা কষ্ট’ তাঁর মনে ? প্রশ্ন করলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামে ওসমান পরিবারের যে দীর্ঘ সময়ের ত্যাগ, সেই বিবেচনায় মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে শামীম ওসমানের মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন।’ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলর অবশ্য সাংবাদিকদের বলেন, মর্যাদা সমান না-কি বেশি এটা ইস্যু না, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আইভী-শামীম বৈরিতা তৃণমূল পর্যায়ে । এর আদৌ কোনো অবসান হবে কি-না বলা মুশকিল ।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, অতি সম্প্রতি শামীম ওসমান-সেলিনা হায়াত আইভীর মধ্যে বাক্যালাপ, ফুল, মিষ্টি বিনিময় হয়নি। কাছে থেকে দেখা-সাক্ষাৎও না। তবে পরস্পরকে নিয়ে দু’ নেতাই সতর্ক। কেউ প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে একে অপরকে নিয়ে আকারে-ইঙ্গিতেও কিছু বলছেন না।
নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সামাজিক সূত্রগুলো সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় বলেছেন, আগেরবার উপমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া আইভী এবার পদোন্নতি পাওয়ায় তাঁর কর্মী, সমর্থক আর শুভাকাঙ্ক্ষীরা স্বভাবতই খুশি। কিন্তু এখনও পরিষ্কার নয় আওয়ামী লীগের ভেতরে আইভী-বিরোধী গোষ্ঠী কতটা মন থেকে বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহজেই অনুমেয় যে শামীম ওসমান অনুসারীদের মনে ‘চাপা কষ্ট’ আছে। আর এর বিস্ফোরণ ঘটবে না-কি চাপাই থাকবে তার ওপর নির্ভর করবে আগামীতে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কী হবে।
নাম প্রকাশ না করা অনুরোধে নারায়ণগঞ্জের একাধিক আওয়ামীলীগ নেতা বলেছেন, শামীম ওসমান একজন হিংসা পরায়ন ব্যক্তি । তিনি তার ছোট বোন কে কোন অবস্থাতেই সহ্য করতে পারেন না এটি আর নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নাই । একেবারেই রিক্সা চালক থেকে শুরু করে খোদ প্রধানমন্ত্রীও জানেন আইভীকে সহ্য করতে ই পারেন না শামীম । আর এই সময়ে আইভীকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হলো একই সাথে নারায়ণগঞ্জে নতুন পুলিশ সুপার এসেছেন তার কাছে নিজের অবস্থান জানাতেই আজ শনিবার ২৭ আগষ্ট সমাবেশ ডেকেছেন এই সাংসদ।
শামীম ওসমানের অবস্থান কেন্দ্র থেকে শুরু করে নগরীর সকলেই জানেন। তারপরেও শামীম ওসমান নিজেই নারায়ণগঞ্জের ডিসি – এসপিকে বুঝিয়ে দিতে চান তিনি তিনিই নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ঈমাম । তার পিছনেই থাকতে হবে সকলকে। এমন হীনমন্যতা থেকেই আজকের এই সমাবেশ। এটি শুধু শামীম ওসমানের সমাবেশ । এই সমাবেশে আওয়ামীলীগের কোন অংশ গ্রহণ নাই, এমনটিও প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে।
তিনবারের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে কি হুইপ করে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে ? না-কি অন্য কোনো উপায় খুঁজবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা ? নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ভারসাম্য রক্ষার প্রশ্নও যে আছে ।
নারায়ণগঞ্জে এমন সমাবেশ এবং মেয়র আইভীকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার পর নগরীতে কি কি হচ্ছে তার সকল তথ্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পূর্ণাঙ্গভাবে খোজ খবর রাখছেন । মেয়র আইভী এমন মর্যাদা পেয়েও কোন ধরণের আতশবাজী, ব্যানার ফেস্টুন না টাঙ্গানো এবং উচ্ছাস না করার খবরও প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা । অপরদিকে শামীম ওসমানের আজকের সমাবেশ ঘিরে কি কি ঘটছে তার সকল চিত্রও পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।
Discussion about this post