১৬ জুন চাষাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলা মামলায় সম্পূর্ক চার্জশিটে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। চার্জশিটে অভিযুক্তরা হচ্ছেন, ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানার ঝিলটুলী গ্রামের নজরুল বারীর ছেলে আনিসুল মোরসালিন এবং তাঁর ভাই মাহবুবুল মোত্তাকিন, ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল নেতা মমিনউল্লাহ ডেভিড ও মাহবুবুল্লাহ তপনের ছোট ভাই ভাই শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, উত্তর চাষাড়া এলাকার ওবায়দুল হক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কিসমত হাশেমের ছোট ভাই ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু।
২০০১ সালের ১৬ জুন চাষাড়ায় আওয়ামীলীগ অফিসে ও ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন সময়ে বিরোধী দলীয় নেতা) শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ । এই দুটি মামলায় ভারতের কারাগারে আটক মোরসালিন এবং তাঁর ভাই মোত্তাকিন প্রধান আসামী হিসেবে তদন্তে উঠে আসে তাদের নাম। চাঞ্চল্যকর দুটি মামলা এক সূত্রে গাঁথা তা আবারো প্রমাণ মিলেছে ।
এনএনইউ রিপোর্ট :
১৩ বছর ধরে ভারতের কারাগারে থাকা যমজ ভাই মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন ও আনিসুল মুরসালিনকে ফিরিয়ে আনতে অবশেষে তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ। হরকাতুল জিহাদের এই দুই জঙ্গি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িত ছিল। এই মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশে দণ্ডিত এই দুই আসামিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতে গিয়ে আলোচনা করে এসেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে তাঁদের ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তর চুক্তি, বহিঃসমর্পণ চুক্তি নাকি পুশব্যাকের মাধ্যমে ফেরত আনা হবে, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
২০০৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরক, পিস্তলসহ মুত্তাকিন ও মুরসালিনকে নয়াদিল্লিতে ভারতের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে তাঁরা দিল্লির তিহার জেলে আছেন। তাঁদের বাড়ি ফরিদপুর শহরে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ কয়েকটি বড় ধরনের হামলায় জড়িত এই দুই ভাইয়ের ব্যাপারে প্রথম আলোতে ২০০৮ সালে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর এই দুজনের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ পায় সিআইডিও। এই দুই জঙ্গিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে সরকারের পক্ষে বলা হচ্ছিল। এরপর ১১ বছর পার হলেও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি।
এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি রয়েছে, তাতে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে তেমন বাধা নেই। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের চিঠি চালাচালি চলছে। শিগগিরই আমরা তাঁদের ফিরিয়ে আনব। এ জন্য বিদেশ থেকে আসামি ফেরত আনতে গঠিত টাস্কফোর্সও কাজ করছে।’
২০১১ সালের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তর (টিএসপি) চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি ভারতে কেবল দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাঁকে দেশে সাজা খাটানোর জন্য ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। আর বহিঃসমর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বিনিময় করার বিধান রয়েছে।
মুরসালিন ও মুত্তাকিনের বাবা বারি জামাল ফরিদপুরের ব্যবসায়ী। যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তাঁর দুই ছেলে তিহার কারাগারে আছেন। তবে তাঁরা কখনো ছেলেদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। তাঁর ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও কেউ তাঁদের সঙ্গে কোনো আলাপ করেননি।
মুত্তাকিন ও মুরসালিন দিল্লির তিহার জেলে আছেন
দুই ভাইকে শিগগির ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদ
ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি
এদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে সে দেশের সরকারের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি করবে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যেই এ–সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের অনুরোধে দক্ষিণ আফ্রিকা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাজউদ্দিনসহ যেকোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে। আগামী মাসেই দুই দেশ মিলে চুক্তিটি সই করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তাজউদ্দিনকে আটক করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ বাংলাদেশকে নিশ্চিত করে মাওলানা তাজউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা না হলেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাঁকে পাঠাতে হলে দুই দেশের মধ্যে বহিঃসমর্পণ চুক্তির প্রয়োজন হবে।
জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন বিগত বিএনপির জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। পিন্টুও একই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, বর্তমানে কারাগারে আছেন।
সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, ইন্টারপোলের দক্ষিণ আফ্রিকার শাখা কার্যালয় বাংলাদেশের পুলিশকে জানিয়েছে, মাওলানা তাজউদ্দিন ‘পাকিস্তানের পাসপোর্ট’ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি জানিয়ে তাজউদ্দিনের প্রকৃত তথ্য যাচাই করতে তাঁর পাসপোর্ট-সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে ইন্টারপোল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি তাজউদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সরকার।
২১ আগস্ট মামলার আরেক আসামি বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেইনকে ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। শাহ মোফাজ্জল হোসেইন সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। এর আগে তাঁকে ফেরাতে বহিঃসমর্পণ প্রস্তাব পাঠানো হলেও যথাসময়ে তা আবুধাবিতে পৌঁছানো হয়নি এবং সেটা অসম্পূর্ণ ছিল। তাই ওই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। শাহ মোফাজ্জল হোসেইনকে ২০১১ সালের ৩ জুলাই দেওয়া এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়। তখন তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে আর দেশে ফেরেননি।
Discussion about this post