সারা বছর জুড়েই এমন জোড়াতালি দিয়ে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের বিভিন্ন এলাকায় পট্টি দিয়ে মোটা অংকের বিল হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় অনেকেই সমালোচনা করেছেন । নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে একজন ঠিকাদার ক্ষোভের সাথে বলেন, ঠিকাদারদের প্রায় সকলেই কোন না কোন নেতাদের ১০% থেকে ১৫% কমিশন দিয়ে ঠিকাদারী কাজের টেন্ডার নিতে হয় । শুধু নারায়ণগঞ্জের লিংক রোড ই না, দেশের প্রায় সকল সড়কে বৃষ্টি আসার সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে এমন জোড়াতালি পট্টি দিয়ে যাচ্ছে । এই পট্টির ব্যবসা আরো ভালো । বিলও তাড়াতাড়ি আসবে । বিল পাশের সাথে সাথেই আবার এই কাজের অর্ডার আসবে বৃষ্টির কারণে জোড়াতালি পট্টি উঠে যাবার কারণে । এক্ষেত্রে ঠিকাদার / স ও জ এর কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের মজা ই মজা ।
(চলতি মাসে দেশের অধিকাংশ এলাকায় টানা দুইদিন বৃষ্টি হতে পারে । সেইসঙ্গে মাসের ২৪ তারিখে দেশের কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে । তবে ২৫ ও ২৬ তারিখে অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ।)
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
শীত শেষে আসছে ঝড় বৃষ্টির সময় । আর এই ঝড় বৃষ্টি কে সামনে রেখে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক সড়কে চলছে পট্টি মারার কাজ ।
শীতের কয়েক মাসে কয়েক কিলোমিটারের এই সড়কের কোন কাজ না করলেও শীতের শেষে এমন পট্টি মারার কাজ দেখে ভোগান্তির শিকার অনেকেই বলেছেন, “এমন পট্টি মারা হলো ঠিকাদার আর সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তাদের লুটপাটের কর্মযজ্ঞ । একবার বৃষ্টি হলেই উঠে যাবে এই পট্টি, এরপর আবার ভোগান্তি ! এরপর আবার পট্টি । এমন পট্টির পর পট্টি দিয়েই বিশাল বিল হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদার, সরকারি কর্মকর্তা আর রাজনৈতিক নেতাদের চক্র ।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বিআরটিসির দোতলা বাসে বসেই এভাবে কঠোর ভাষায় নারায়ণগঞ্জের এক নেতার কমিশন নেয়ার বিষয় তুলে ধরে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন যাত্রীদের অনেকেই ।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ কিলোমিটার । এই সড়কের চাষাঢ়া থেকে শিবু মার্কেট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার অংশের পিচ ফুলে উঠেছে । সড়কের কোথাও দেবে গেছে। কোথাও পিচ ফেটে গেছে। ফলে যানবাহন চলাচলে সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ছোট যানবাহন চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে ।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি মেরামত করা হলেও ৮ মাসেই সড়কের এই দশায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। কয়েক দফা জোড়াতালি দিয়ে মেরামতের চেষ্টা করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থায়ীভাবে সড়কটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। না হলে বর্ষায় সড়কটি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ১৫ কিলোমিটার । ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৮ কিলোমিটার অংশ ওভার লের মাধ্যমে মেরামতের জন্য দরপত্র জমা ও খোলা হয়। একই বছরের ৬ মার্চ মাসুদ হাই-টেক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী কাজের ব্যয় হবে ১৮ কোটি ১৪ লাখ ২৩ হাজার ১৭ টাকা। কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে সময় দেওয়া হয় ৬ মাস।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সড়কটির ওভার লে সম্পন্ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ।
মাত্র ৬ মাসের মদ্যে দেখা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাঢ়া আর্মি মার্কেটের সামনে ঢাকাগামী অংশে বিভিন্ন স্থানে পিচ ফুলে উঠেছে। আবার কোথাও কোথাও পিচ দেবে গেছে। সড়কটির লম্বালম্বি প্রায় ২ কিলোমিটার অংশে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মালবাহী ও বড় যানগুলো চলাচলের কারণে লম্বালম্বি রেখা তৈরি হয়েছে। যানবাহনগুলো চলাচলের সময় উঁচু পিচের কারণে প্রচণ্ড ঝাঁকুনির সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গাড়িগুলো ওই অংশ দিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। বিশেষ করে রাতে চলাচলের সময় উঁচু পিচের কারণে প্রায়ই ছোট গাড়িগুলো দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোল্যা তাসলিম হোসেন জানান, জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু সড়কটির বিভিন্ন অংশে পিচ ফুলে উঠেছে। গত ঈদের আগেও সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পিচ ফুলে গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গর্তগুলো ভরাট করে দেয়। কিন্তু আবারও সড়কে পিচ ফুলে উঠেছে। এতে সড়কে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাতে চলাচলের সময় ছোট যানবাহন ( মোটর সাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ) দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সড়কটি মসৃণ হলে ওই সড়কে যানজট অনেকাংশ কমে যেত।
স্থানীয় ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া বলেন, রাস্তা খারাপ হওয়ায় দিনের চেয়ে রাতে গাড়ির প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়। যানজট লাগে মূলত পিচ ফুলে ওঠার কারণে। ঈদের আগেও রাস্তাটি জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়। কিন্তু কাজ হয়নি। আবার পিচ ফুলে উঠেছে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক আউয়াল হোসেন বলেন, ছোট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতি রাতেই বিভিন্ন ছোট যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ছে। বিশেষ করে এই রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে ছোট গাড়িগুলো বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। বর্ষার আগে ঠিক না করলে সড়কটি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ের সড়ক ৮ মাসেই বেহাল হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। সংস্কারকাজে গাফিলতি ও নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করায় সড়কটির এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সড়কটি স্থায়ীভাবে মেরামতের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুদ হাই-টেক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক জুলফিকার আলী মাসুদ রানা বলেন, ‘অতিরিক্ত লোড ও সড়কের নকশার ত্রুটির কারণে বিভিন্ন অংশের পিচ ফুলে উঠছে এবং দেবে যাচ্ছে। এ ছাড়া সেখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। তাহলে রাস্তা টিকবে কীভাবে ? তবু আমরা মেরামত করে দেব ।’
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার শেখ বলেন, ‘সড়কটি আমি দেখেছি। সড়কের উঁচু জায়গাগুলো মিলিং মেশিন দিয়ে কেটে সমান করে ওভার লে করা হবে।
Discussion about this post