এনএনইউ রিপোর্ট :
আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি । রাত পেরোলেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন । বোটের পর গণনা মেষে চূড়ান্ত হবে নতুন বছরে নতুন কাউকে পেতে চলেছে নাকি পুরাতন কেই নতুনভাবে বরণ করে নিবে নারায়ণগঞ্জবাসী। শুক্রবার নানা নাটকিয়তার মধ্যে দিয়ে সকালেই শেষ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা।
নির্বাচন কমিশনের পর জেলা প্রশাসন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নারায়ণগঞ্জের সব নির্বাচনী এলাকায় বিকেলের মধ্যেই পৌঁছে গেছে ভোট সরঞ্জাম, ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, থ্রেড, পিন, অমোচনীয় কালি, ব্রাশ ও সিল।
মাঠে নামানো হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। মাঠে নামানো হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদেরও। সড়কে সড়কে বসানো হয়েছে চেকপোষ্ট। সব মিলিয়ে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকেছে নারায়ণগঞ্জ নগরী।
অন্যদিকে আগামীকালে উচ্ছ্বাস আর শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করছে ভোটাররা। প্রথমবারের মত ভোট দিতে চলেছে অনেকেই। ভোট নিয়ে ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
এই নির্বাচনে ভোটাররা নির্বিগ্নে ভোট দিতে যেতে পারবেন কিনা ? ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা? কোন হামলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে কিনা? তাছাড়া ভোটের পর নির্বাচনের পরিবেশই বা কেমন থাকবে? আবারো কী সেই জ্বালাও পোড়াও ঘটনা ঘটবে কি না সব কিছু নিয়ে ভোটারদের মাঝে রয়েছে নানা সংশয়।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে এবার মোট ভোটার ২০ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৫ জন। ভোটারদের মধ্যে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৮০ জন পুরুষ। নারী ভোটার ১০ লাখ ২০৪ জন। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ মানুষ নতুন করে ভোটার হয়েছেন।
আসন ভিত্তিক ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব থেকে বেশি ভোটার রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন (ফতুল্লা- সিদ্ধিরগঞ্জ)। এই আসনে মোট ভোটার ৬ লাখ ৫১ হাজার ১৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৬৩ জন আর মহিলা ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৫০০ জন।
তারপর রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনে ভোটার হল ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৬ জন।এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৫ হাজার ২১৪ জন আর মহিলা ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৪০২ জন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ভোটার হল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৭৮হাজার ৩৯৪ জন আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৭ জন।
এরপর নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে ভোটার হল ৩ লাখ ৩ হাজার ৮৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭০১ জন আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ১৭১ জন।
সর্বনিম্ন ভোটার রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে। এ আসনের ভোটার হল ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৪৪হাজার ১৩৪ জন আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩৪ জন।
পাঁচটি উপজেলায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪৫ টি ভোটকেন্দ্রে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৪১৮ টি কেন্দ্র। এছাড়া ভোটগ্রহণের কাজে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় ১৩ হাজার ৩’শ ১০ কর্মকর্তা। এর মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ৭৮২ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ৪ হাজার ১৯৯ জন, পোলিং অফিসার হিসেবে ৮ হাজার ৩২৯ জন কর্মকর্তা। বুথ রয়েছে ৩৯৯৯ টি।
নির্বাচনে দীর্ঘ ১০ বছর পর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রাজনীতিতে চিরপ্রতিদ্বনদ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এবারের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৩৬ প্রার্থী। প্রতীক বরাদ্দ অনুযায়ী আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত ৫ প্রার্থী লড়বেন ধানের শীষ প্রতীকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের ৩ প্রার্থী লড়বেন নৌকা প্রতীকে , জাতীয় পার্টির ২ প্রার্থী লড়বেন লাঙ্গল প্রতীকে , ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫ প্রার্থী লড়বেন হাতপাখা প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে লড়বেন ১ জন আর বাকিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা।
ভোটের প্রস্তুতি
কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনের সকল সামগ্রী ইতিমধ্যে ৫ টি উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ৫টি উপজেলায় ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স প্রতি উপজেলার সহকারী রিটানিং অফিসারের ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারের দ্বারা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৫টি উপজেলার জন্য ৫ বস্তা পোস্টাল পেপারসহ ১৩৯ বস্তা ব্যালট পেপার নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের (রূপগঞ্জ) ২৪ বস্তা, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে (আড়াই হাজার) ১৫ বস্তা, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে (সোনারগাঁও) ২১ বস্তা, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের (সদর- বন্দর) ৩০ বস্তা ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে (ফতুল্লা – সিদ্ধিরগঞ্জ) ৪৪ বস্তা ব্যালেট পেপার পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতি শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) জেলা সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতাউর রহমান জানান, সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। বিকেলে কেন্দ্র কেন্দ্রে ব্যালেট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ ছাড়া গতকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে ভোটের দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছোট-বড় (অ্যাজেন্ট ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট) সব ধরনের লেনদেন বন্ধ থাকবে। তবে শনিবার বিকেল ৫টা থেকে রোববার তথা নির্বাচনের দিন ৫টা পর্যন্ত ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে দিনে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে।
এদিকে ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সারাদেশে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ এবং ২৯ ডিসেম্বর বারোটার পর থেকে সড়ক ও নৌপথে যানচলাচল বন্ধ থাকবে।
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি:
নারায়ণগঞ্জে ৭৪৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৮ টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তথ্যসূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ১২৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫১টি কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে ১১৩টি কেন্দ্রের ৪০টি কেন্দ্র , নারায়ণগঞ্জের-৩ ( সোনারগাঁও) আসনে ১১৮টি কেন্দ্রের ৫২টি কেন্দ্র , নারায়ণগঞ্জের-৪ (সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা) আসনে ২১৬ টি কেন্দ্রের ১৬৭টি কেন্দ্র ও নারায়ণগঞ্জের-৫ (সদর-বন্দর) আসনে ১৭১টি কেন্দ্রের ১০৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেলার সকল ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র গুলোতে পুলিশের নজরদারী জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে কালাপাহাড়িয়া, বক্তাবলি এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নজরদারী জোরদার থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার হারুন উর রশীদ এ সকল কথা জানান।
আগামীকাল নির্বাচনী পরিবশে সুষ্ঠু রাখতে দুই হাজার পুলিশ মাঠে থাকবে। আজকে রাত থেকে প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করবে এবং নির্বাচনের দিন জেলায় আনসার বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচটি টিম কাজ করবে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে ইতিমধ্যেই ১৬৯৯ জন পুলিশ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জে ৩০ প্লাটুনে সাড়ে ৪৫০ বিজিবি, ৪০০ সেনাবাহিনী, ৮ হাজার আনসার, গ্রাম পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। রয়েছে ২৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও।
এছাড়া ৭ থানায় ৭টি ও জেলা সদরে ২টি স্ট্রাইকিং পার্টি এবং স্ট্যান্ডবাই পার্টি মোতায়ন থাকবে। পাশাপাশি ৩১টি মোবাইল পার্টি জেলা মোতায়েন করা হয়েছে ।
এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৫ জন ও অস্ত্রসহ তিন থেকে চারজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন কমপক্ষে দুজন। পাঁচটি উপজেলা সেনাবাহিনীর প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে ।
এছাড়া এসব এলাকার বাইরে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৪ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ একজন, আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের দু-একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন।
এছাড়া আজকে রাত থেকেই থানাগুলোতে সেক্টর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে সেক্টর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. নূরে আলম। নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আব্দুল্লাহ্ আল মামুন, নারায়ণগঞ্জ-৩ ( সোনারগাঁ) আসনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ অঞ্চল) মো. খোরশেদ আলম, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লায়-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. ফারুক হোসেন এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মনিরুল ইসলাম।
Discussion about this post