নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ছিনতাই চেষ্টার সময় কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশ আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুরের দুধঘাটায় নিজ বাড়ির পাশে তাকে দাফন করা হয়।
পলাশের বাবা পিয়ার জাহান বলেন, তার (পলাশ) লাশ নেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু প্রশাসন থেকে ডাকায় সোমবার রাতে লাশ নিতে চট্টগ্রামে যাই। পতেঙ্গা পুলিশের কাছ থেকে লাশ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ছয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ আসি। পরে সকাল নয়টার দিকে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে পলাশের মরদেহ গ্রহণ করেন তার বাবা। এরপর মরদেহ নিয়ে রাতেই নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন।
গত রবিবার বিকালে দুবাইয়ের উদ্দেশে ক্রুসহ ১৪৮ যাত্রী নিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হয় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিমান। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে বিমানটি।
বিমানের চট্টগ্রামগামী ফ্লাইটটি যখন মাঝ আকাশে, তখন এক ব্যক্তি পাইলটকে অস্ত্র ঠেকিয়ে বিমানটি জিম্মি করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের জরুরি অবতরণ করা হয়। জরুরি অবতরণের পর পরই রানওয়েতে বিমানটি ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ। বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী সন্দেহভাজন অস্ত্রধারীকে ধরতে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। পরে ওই অভিযানে গুলিতে মারা যান পলাশ।
কমান্ডো অভিযান শেষে সেদিন রাতেই পুলিশের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এরপর সুরতহাল শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হসেপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষ হয়। নিহতের কেউ চট্টগ্রামে না থাকায় মরদেহটি হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের হিমঘরে রাখা হয়েছিল। সোমবার রাতে পলাশের বাবা মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে তাকে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া।
বিমান ছিনতাইয়ের পর গত রোববার রাতে সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ পলাশের বাসায় এসে একটি ছবি দেখিয়ে তার বাবাকে বলেন-এটা আপনার ছেলের ছবি কিনা । ছবি দেখে বাবা মা ও পরিবারের সকলেই পলাশের ছবি নিশ্চিত করে ।
দারোগা আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে একটি তথ্য আসে যে মেহেদী বা মাহাদী হাসান নামের বা এ ধরনের কেউ দুবাই যাবে এমন কেউ সোনারগাঁয়ে আছে কিনা। পাশাপাশি মৃতদেহের একটি ছবি পাঠানো হয়েছিল। ছবি নিয়ে তিনি রাতে পলাশদের বাড়িতে গেলে তার পরিবার পরিচয় নিশ্চিত করে।” পরে ছবি দেখে এবং দুবাই যাওয়ার বিষয়টি মিলিয়ে পরিবার নিশ্চিত হয় নিহত ব্যক্তি মাহমুদ পলাশ।
ঢাকাই চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা সিমলা তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেছে পলাশের পরিবার।
পলাশের বাবা আরও জানান, প্রায় ১০ মাস আগে চিত্রনায়িকা সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। বাবা-মায়ের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। সিমলার সঙ্গে তাদের কথাও হয়। তিনি বলেন, এক-দেড় মাসের ব্যবধানে দু’বার আসে পলাশ ও সিমলা। দ্বিতীয়বার এসে পলাশ বলেছে-আমি সিমলাকে বিয়ে করেছি। সিমলাও বিষয়টি স্বীকার করেছে।
পলাশের বাবা আরও বলেন, “আমি সিমলাকে তখন বলেছি- তোমার সঙ্গে বয়সের এত ব্যবধান, কীভাবে আমার ছেলেটাকে বিয়ে করেছো ? যাহোক বিয়ে যেহেতু করেই ফেলেছো, আমার ছেলেটা যাতে ভালো হয়ে যায় একটু খেয়াল রেখো।”
তিনি জানান, পলাশের মা রেনু আক্তারের সঙ্গে এরপর তিন মাসের মতো সিমলার কথাবার্তা ও যোগাযোগ হয়। পরে আর যোগাযোগ হয়নি। হয়তো সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল।
পলাশের বাবা বলেন, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে প্রথমে তারা কিছুই জানতেন না। পরবর্তীতে তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার সাতমাথা ভাইপাগলা মাজারের পাশে পলাশ ২০১৪ সালে মেঘলা নামে একজনকে বিয়ে করেন। তাদের আড়াই বছর বয়সী আয়ান নামের একটি পুত্র সন্তানও আছে। মেঘলা বগুড়ার স্থানীয় নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপালের মেয়ে। তার বাবা বগুড়ায় আইন পেশায় জড়িত।
তাহেরপুর আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক নুরনবী জানান, সে মাদ্রাসা পড়ার সময় দুরন্ত প্রকৃতির ছিল। এ জন্য তাকে মাদ্রাসা থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
বিমান ছিনতােইয়ের পর পলাশ আহমেদের লাশ ভোর ৬টায় সোনারগাঁ উপজেলার দুধঘাটাস্থ গ্রামের বাড়ীতে আনার পর ভীর জমে এলাকাবাসীর । সকলেই পলাশের লাশ দেখে একবাক্যেই সমালোচনা করে বলেছেন, অপরাধের মাত্রা এতটাই বেড়েছিলো যে তাকে অল্প বয়সেই চলে যেতে হলো সারাদেশে তোলপাড় করা বিতর্ক নিয়ে । অপহরণ মামলার পর জেলখেটে বাইর হবার পর পলাশ ধূর্ত প্রকৃতির অপরাধীতে পরিণত হয়ে উঠেছিলো ।
Discussion about this post