এবার সাত লাখ টাকার চেক জালিয়াতির মামলায় সাংবাদিক পরিচয়দানকারী কামরুন নাহার রনক নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ। রনক নিজেকে সিএনএন বাংলা টিভির নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করতো।
সিনিয়র যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ৩য় (অর্থঋণ) আদালতে (সেশন নং-১৪১৬/১৩) দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রেক্ষিতে তাকে রোববার রাতে গ্রেপ্তার করে সদর মডেল থানা পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
মুন্সিগঞ্জ জেলার মীরকাদিম পৌরসভার পূর্ব নগর কসবা এলাকার মৃত মোহনমিয়ার পুত্র মোসলেম উদ্দিন জালিয়াতির এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান। গ্রেপ্তার হওয়ার কামরুন নাহার রনক বন্দর লক্ষারচর এলাকার সাইফুল ইসলাম সাব্বিরের স্ত্রী।
কামরুন নাহার রনকের নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রথম যুগ্ম জেলা জজ এর নাম ব্যবহার করে চুক্তিনামা দলিল তৈরি করে ৬৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তুলে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ‘ক’ অঞ্চলে আরও একটি মামলা (সিআর মামলা নং-১২১০/১৯) দায়ের করেছেন মাকসুদা আজগর নামে এক নারী। এ মামলায়ও আদালত প্রতারণার অভিযোগে ওয়ারেন্ট জারী করেছিলো ।
ঘিটনার বিবরণে জানা যায়, ৯ অক্টোবর বুধবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকার আজগর হোসেন ভূইয়ার স্ত্রী মাকসুদা আজগর বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলার শুনানী শেষে সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমীনের আদালত আসামী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছেন।
মামলার বিবরণীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ, মাকসুদা আজগর পৈত্রিক আমল থেকেই গোদনাইল এলাকায় বহু ভূ-সম্পত্তির মালিক। তিনি গোদনাইল মৌজার সম্পত্তি নিয়া বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে দেওয়ানী ১৪৯/২০০৬ মূলে একটি মামলা দায়ের করেন যা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলার বিবাদী হচ্ছেন নীট কনসার্নের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন মোল্লা। মাকসুদা আজগর তার ফুফাত ভাইয়ের ছেলে রবির কাছে ওই মামলা সম্পর্কে পরামর্শ চাইলে রবি তাকে একজন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকের সাথে কথা বলিয়ে দেন।
আর ওই সাংবাদিক হলেন বন্দরের লক্ষারচর এলাকার সাইফুল ইসলাম সাব্বিরের স্ত্রী কামরুন নাহার কনক। তিনি নিজেকে সিএনএন বাংলা টিভির নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। মাকসুদা আজগর তার মামলার সকল কাগজপত্র দেখালে কামরুন নাহার কনক বলেন, চিন্তার কোন কারণ নেই, তার একজন পরিচিত বিচারক রয়েছেন। ওই বিচারককে দিয়ে তিনি মাকসুদা আজগরের পক্ষে রায় পাইয়ে দিতে পারবেন। তবে এজন্য অনেক টাকা খরচ হবে। কামরুন নাহার কনকের কথামতো টাকা দিতে রাজী হন মাকসুদা আজগর।
সে অনুযায়ী কামরুন নাহার কনক মাকসুদা আজগরের সাথে একটি হাওলাত নামা চুক্তিপত্র দলিল সম্পাদন করে। সে দলিলে মাকসুদা আজগরকে হাওলাত দাতা দেখানো হয় এবং কর্জ গ্রহিতা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম জেলা জজের ১ম বিচারক আমেনা ফারহিনকে দেখানো হয়। সেই হাওলতনামা দলিলের মাধ্যমে মাকসুদা আজগর কামরুন নাহার কনককে ১০ লাখ টাকা দিলে কামরুন নাহার কনক রায়ের জন্য ১০ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছে জানিয়ে গত ১৮ সেপ্টম্বর লিখে স্বাক্ষর করেন। এই টাকা নেয়ার পর কামরুন নাহার কনক জানান আরও ১০ লাখ টাকা দিতে হবে অন্যথায় মাকসুদা আজগরের পক্ষে রায় দিবেন না।
ফলে কামরুন নাহার কনকের বিশ্বাস করে মাকসুদা আজগর ব্যাংক এশিয়া থেকে এফ ডি আরের বিপরীতে ঋণ নিয়ে টাকা উত্তোলন করে গত ২০ আগস্ট ১০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু কামরুন নাহার কনক সেই টাকা গ্রহণ করে বিচারককে না দিয়ে তিন কন্যা ট্রেডার্স নামী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে জানান বিচারককে টাকা দেয়া হয়ে গেছে। ফলে এই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে এবং ডুকুমেন্ট চাইলে কামরুন নাহার কনক বলেন, ডুকুমেন্ট লাগবে না। আমি রায় করিয়ে দিব।
এরপর কামরুন নাহার কনক মামলাটি মাকসুদা আজগরের নিয়োজিত আইনজীবী জহিরুল হকের চেম্বার থেকে মামলাটি এনে অন্য একজন আইনজীবীকে মামলা পরিচালনা দায়িত্ব দেন। এরপর পুনরায় কামরুন নাহার কনক মাকসুদা আজগরকে জানান জায়গার মূল্য অনুযায়ী যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতকে আরও ৩০ লাখ দিতে হবে। তখন মাকসুদা আজগর আরও নগদ ৩০ লাখ টাকা দেন এবং মামলার পর্চা, মূল নকশা ও অন্যান্য কাগজাদি উত্তোল বাবদ ৫ লাখ টাকা, দেওয়ানী মামলা বিবাদী জয়নাল আবেদীন মোল্লার দলিলের মূল কপি উঠানো বাবদ ৪ লাখ টাকা, দুদককে দেয়ার জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার, কাগজপত্র উঠানোর জন্য ৫ লাখ টাকা সহ মোট ৪৭ লাখ ৬০ হাজার বিভিন্ন তারিখে বুঝে পেয়ে গত ৩০ আগস্ট মাকসুদা আজগরের হ্যান্ডনোটে স্বাক্ষর নেন।
ইতোপূর্বে যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতকে প্রদান করিবার জন্য ২০ লাখ টাকা কামরুন নাহার কনককে দিয়েছিলেন। সবমিলিয়ে মোট ৬৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয়ার কথা স্বীকার ও স্বাক্ষরমূলে গ্রহণ করেন।
এরপর মাকসুদা আজগর জানতে পারেন কামরুন নাহার কনক একজন প্রতারক। সে জেলা জজ ১ম আদালতের বিচারক আমেনা ফারহিনের নাম ব্যবহার করে চুক্তিনামা দলিল তৈরী করে মাকসুদা আজগরের টাকা আত্মসাৎ করে। আর এই টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে কামরুন নাহার কনক মাকসুদা আজগরকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে আসছে।
বন্দর এলাকার অনেকেই আরো জানায়, এই কামরুন নাহার রনকের বিরুদ্ধে এর আগেও প্রতারণার মামলা ছিলো । এবং ওই প্রতারণা মামলায় আদালত থেকে সাজা হওয়ার পর পলাতক থাকাবস্থায় কামরুন নাহার রনককে গ্রেফতার করে বন্দর থানা পুলিশ । এই মামলায় জামিনে বের হয়ে এসে আবার প্রতারনা অব্যাহত রাখে । এই প্রতারক কামরুন নাহার রনক একজন এএসপির আত্মীয় আবার একটি রাজনৈতিক পরিবারের আত্মীয় বলে প্রচার চালিয়ে নানা অপরাধ অভ্যাহতভাবে চালিয়ে আসছিলো ।
এতো কিছুর পর নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ প্রতারক কামরুন নাহার রনককে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর পর কয়েকজন আইনজীবী এই প্রতারককে জামিনে মুক্ত করতে চেষ্টা চালায় । শেষ পর্যন্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নূরুন নাহার ইয়াসমিন প্রতারক কামরুন নাহার রনক কে কারাগারে পাটানোর আদেশ প্রদান করেন ।
সংশ্লিষ্ট আদালতের এএসআই সীমা বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, যেহেত তার বিরুদ্ধে জজ কোর্ট থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে তাই সিডব্লিউ ইস্যু করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালত কামরুন নাহার রনককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ।
Discussion about this post