নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডট :
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্রা থানা এলাকার দেওভোগে স্ত্রী পলি আক্তারকে (২৮) কুপিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন জামাল হোসেন (৩৫)।
মঙ্গলবার মধ্যরাত ২ টায় ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ আদর্শ নগর এলাকায় মোশারফ হোসেন মিয়ার বাসায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফতুল্লা থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী ।
ঘটনার দীর্ঘ সময় পর মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ দুজনের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। তাদের দুজনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মীর্জাগঞ্জ থানার ময়দা শ্রীনগর গ্রামে।
নিহত জামাল হোসেন ও তার স্ত্রী পলি আক্তার ফতুল্লার আদর্শনগর এলাকার মোশারফ হোসেনের বাড়ির ভাড়াটে। উভয়েরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। তবে পলি তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিলেও জামালের প্রথম পক্ষের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। তারা গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
নিহত পলি পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জ থানার ময়দা শ্রীনগর এলাকার শাহজাহান শিকদারের মেয়ে। নিহত জামাল হোসেন একই উপজেলার সুবিদ খালীর সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। জামাল ও পলি সম্পর্কে মামাত-ফুফাতো ভাই-বোনও।
পলি ফতুল্লার পঞ্চবটিস্থ বিসিক শিল্পনগরে অবস্থিত ফকির অ্যাপারেলসের শ্রমিক এবং জামাল নগরের চাষাঢ়া এলাকায় একটি চায়ের দোকান চালাতেন।
নিহত পলির ছোট ভাই মাঈনুল ইসলাম বলেন, তার বড় বোন পলির আগের বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারে শাহাজাদা (৯) নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে। আগের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে মামাতো ভাই জামাল হোসেনকে ৬ মাসে বিয়ে করে সে। বিয়ের পর গত ৪ মাস যাবৎ তারা ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ আদর্শনগর এলাকায় মোশারফ হোসেনের বাড়িতে ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। তাদের সঙ্গে পলির আগের সংসারের একমাত্র ছেলে শাহাজাদাও থাকতো। পলির বড় বোন একই বাড়িতে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন।
মাঈনুল আরও জানান, সোমবার মধ্যরাতে ভাগ্নে শাহাজাদা তার বড় খালাকে গিয়ে খবর দেয় যে বাবা-মা বিছানায় পড়ে আছেন। মায়ের গায়ে রক্ত আর বাবার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। এ খবর পেয়ে তার বড় বোনের জামাই আক্তার হোসেনসহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরা দ্রুত পলির ঘরে গিয়ে দেখেন, পলির মুখের সামনের পাটির দাঁতগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। মাথা দিয়ে রক্ত জড়ছে, আর জামালের দেহের পাশে একটি কাঁচের বোতল। তার মুখ দিয়ে ফেনা বেরুচ্ছে। গুরুতর আহতবস্থায় দ্রুত তাদের উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পলিকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় জামালকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জামালও মারা যায়।
নিহত পলির একমাত্র সন্তান শাহাজাদার বরাত দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, ছোট্ট শাহাজাদা পুলিশকে জানিয়েছে, গত কয়েকদিন যাবৎ বাবা জামাল হোসেন কাজে যায়নি। সোমবার রাতে মা কাজ থেকে ফিরে। তবে তার মন খারাপ ছিল।
এদিকে বাবা বাসায় থাকায় সে রাতে খাওয়ার জন্য আলু সেদ্ধ করে রাখে। মা বাসায় ফিরলে বাবা মাকে আলুর ভর্তা বানাতে বলে। ওই সময় মা বাবাকে বলে, আমিতো রাতে খাবোই না, ভর্তা বানাবো কার জন্য। ওই সময় উভয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে শাহাজাদা ঘুমিয়ে পড়ে। মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে বাবা-মায়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হতে দেখে। এ দৃশ্য দেখে সে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে। আরও কিছু সময় পর হঠাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে গেলে জেগে উঠে দেখে ঘরের বাতি নেভানো, কোন সাড়া শব্দ নেই। সে উঠে বাতি জ্বালিয়ে দেখে ঘরের বিছানায় মায়ের রক্তাক্ত দেহ চাদর দিয়ে ঢাকা, আর বাবা বিছানার এক কোনে জিম মেরে বসে আছেন। তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে সে দ্রুত পাশের ঘরে থাকা বড় খালাকে গিয়ে ঘটনা জানায়।
পরে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ওসি আসলাম হোসেন আরও বলেন, কোন কিছু নিয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দ্বন্দ্ব থেকেই জামাল স্ত্রীকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে। বিষের বোতল দেখে পুলিশ এ ধারণা করছেন।
বাড়ির মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, এতদিন জামাল ও পলির মধ্যে কোন ঝামেলা ছিল বলে তিনি জানতেন না। তবে ঘটনার পর তিনি কানাঘুষা থেকে শুনতে পেরেছেন, পলির সঙ্গে তার তালাক দেওয়া স্বামীর যোগাযোগের বিষয়টি জানতে পেরে জামালের সঙ্গে পলির সম্পর্কের অবণতি ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত পলির ছোট ভাই মাঈনুল ইসলাম বাদি হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আর বাড়ির মালিক মোশারফ হোসেন বাদি হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন
Discussion about this post