নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জয়নাল আবেদিনের বাড়ি ঘেরাও করে নারীসহ তিনজনকে আটক করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা । সকাল থেকে চলমান অভিযানকালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস তা হয়েছে বোমা তৈরীর সরঞ্জাম
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ভোররাত থেকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে। এ সময় দম্পতিসহ একই পরিবারের তিনজনকে আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক ফরিদউদ্দিন রুমি (২৭), কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জামালউদ্দিন রফিক (২৩) ও ফরিদউদ্দিনের স্ত্রী অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা জান্নাতুল ফোয়ারা অনু (২৭)। এদের মধ্যে রফিক ও রুমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
এদিকে আটক ফরিদ উদ্দিন রুমি ও জালালউদ্দিন রফিক জেএমবির সদস্য বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজমের প্রধান মনিরুল ইসলাম। সোমবার দুপুরে অভিযান নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
জানা গেছে, দুপুর ১২টা ৫৮ মিনিটে ওই বাড়ি থেকে একটি বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যায়। দুপুর ১টা ১০ মিনিটে আরও একটি বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। দুপুর ১টা ২৪ মিনিটে আরও একটি বিস্ফোরণের শব্দে এলাকা কেঁপে উঠে। এবং সর্বশেষ ২টা ১১ মিনিটে চতুর্থ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।মনিরুল ইসলাম বলেছেন, এ বাড়িটিতে বিস্ফোরণ ও বোমা তৈরির কিছু সরঞ্জাম রয়েছে যা বিগত সময়ে ঢাকায় যেসব বিস্ফোরণে উদ্ধার করা হয়েছে তার সঙ্গে মিল রয়েছে। অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সরঞ্জামের আলামত পাওয়া গেছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সহকারী কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা কাজ করছেন। প্রাথমিকভাবে আমরা যেটুকু তথ্য পেয়েছি, ওই বাড়ির ভেতরটা ল্যাবরেটরির মত সাজানো। ভেতরে ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসও (আইইডি) রয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আসলাম হোসেন জানান, সোমবার ভোররাত থেকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ফতুল্লার তক্কার মক্কার মাঠ এলাকার জয়নাল আবেদীনের একটি টিনশেড বাড়ি ঘিরে রাখে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। পরে জেলা পুলিশসহ বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
যেভাবে আটক হলেন তিন নব্য জেএমবি সদস্য : কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে ঢাকা থেকে যন্ত্রকৌশলী জামালউদ্দিন রফিককে (২৩) আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে ফতুল্লার দাপার একটি বাড়ি থেকে তার বড় ভাই আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক ফরিদউদ্দিন রুমিকে (২৭) আটক করা হয়।
সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন আটকরা সবাই নব্য জেএমবি সদস্য। তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। তাদের ধরতে চেষ্টা চলছে।
যেভাবে শুরু অভিযান : দীর্ঘ তিনমাস ধরে নজরদারির পর নব্য জেএমবির সদস্য রুমিকে আটকের পর তার দেওয়া তথ্য মতে বাড়িটিতে ভোর থেকেই অভিযান শুরু করে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। যে বাড়িটি ঘেরাও করা হয়েছে, মাঝেমধ্যে সেখানে এসে থাকতেন তিনি। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ভোরেই সেখানে পৌঁছায়।
সকালে প্রথমেই বাড়িটিকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখে আশ-পাশের বাড়িগুলো থেকে মানুষদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সকাল ১০টার মধ্যেই বাড়িটির আশ-পাশের ১৭ থেকে ২০টি ঘর খালি করে ফেলা হয়। পরে জেলা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, পুলিশের সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট, পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, পিবিআই, পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ গাড়ি ও যন্ত্রপাতি, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, ট্রাফিক বিভাগসহ বিভিন্ন ইউনিট পুলিশের সদস্যরা এখানে উপস্থিত হন।
নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড তামিম নিহত হয়েছিল নারায়ণগঞ্জে : নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় একটি বাসায় আস্তানা ছিল নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড তামিমের। ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয় নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরী। এ সময় তামিমের সঙ্গে মারা যায় তার আরও দু’সহযোগী। তাদের একজন ধানমন্ডির তওসিফ হোসেন ও যশোরের ফজলে রাব্বী। তামিম হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন
তিনি জানান, তারা মূলত পুলিশের ওপর হামলা করে তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া, তাদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্যই এ ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।মূলত নব্য জেএমবির সদস্যদের টার্গেট ছিল পুলিশের নিরস্ত্র সদস্য যেমন ট্রাফিক পুলিশ, পুলিশ বক্স এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশের সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম। তাদের কাছে যে পরিমাণ সরঞ্জাম রয়েছে তার মধ্যে খেলনা পিস্তল ও বোমা তৈরির সরঞ্জামগুলোর বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। এছাড়াও তাদের আরও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
Discussion about this post