প্রতিনিয়তঃ এমন মৃত্যু এবং আইসিইউ/ সিসিইউসহ লাইফ সাপোর্টের নামে নবজাত শিশু ছাড়াও নানা বয়সী অসুস্থদের সেবা দেয়ার নামে এবং মৃত্য ব্যাক্তিকে গুরুতর অসুস্থ্য দেখিয়ে প্রতিদিন হিসেবে বিশাল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে । প্রো-অ্যাকটিভ ক্লিনিক হলেও এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় প্রায় শতাধিক চিকিৎসক । যারা বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে এই ব্যবসা শুরু করে । আর এই ক্লিনিকটি সেবার পরিবর্তে ব্যবসা শুরু করায় সর্বত্র দালাল নিয়োগ দিয়ে রোগী ভাগানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে গত তিন বছর যাবৎ। এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালের স্পেশাল আয়া/ওয়ার্ড বয়/নার্স/ব্রাদার ও চিকিৎসকদের ৩৫% কমিশন দিয়ে রোগী ভাগিয়ে আসছে ।
আর সিভিল সার্জনসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরিচালক চিকিৎসকদের তদ্বিরেই চলেন বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ । যার কারণে যত অঘটন ই ঘটুক তাদের কিছু হয় না বলে মন্তব্য করেছেন ম্যানেজার সালাউদ্দিন ভূঁইয়া ।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
আবারো সদর উপজেলা সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
রেবাবার ১৯ জানুয়ারি সকালের দিকে ১৬ দিন এনআইউসিতে নবজাতককে রেখে সিজার, ওষুধ, টেস্ট বাবদ প্রায় আড়াইলাখ টাকা আদায় করে শিশুটিকে রিলিজ করার পরপরই এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ।
গত ৩ জানুয়ারি সোনারগাঁ উপজেলার আমবাগ এলাকার বাসিন্দা একটি বায়িং হাউজ কর্মকর্তা জায়েদুল ইসলামের প্রসূতি স্ত্রী তানিয়া আক্তারকে ভর্তি করা হয় সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ হাসপিটালে । এদিনই দিবাগত রাত চারটার দিকে প্রসূতির সিজার শেষে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। এরপরই শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো নয় জানিয়ে, নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) রাখা হয়। নিওনেটোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. মজিবুর রহমান মজিবের তত্বাবধায়নে ছিল শিশুটি ।
তানিয়া আক্তারের মামা সালামত গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বোনের মেয়ে তানিয়া । ৩ জানুয়ারি তাকে ভর্তি করা হয় প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ ও হসপিটালে। এদিনই দিবাগত ভোর চারটার দিকে তানিয়া আক্তার সিজারের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। এর পরপরই ডাক্তার জানান, শিশুটি প্রিমেচিউরড, তাকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) রাখতে হবে । এরপর শিশুটিকে টানা ১৬ দিন এখানে রাখা হয়। যার বিল ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এবং সিজার বাবদ ২৭ হাজার ও বিভিন্ন পরীক্ষা, ওষুধ খরচ বাবদ সর্বমোট প্রায় আড়াইলাখ টাকা হসপিটাল বিল পরিশোধ করি।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে ১৭ জানুয়ারি হসপিটাল থেকে আমাদেরকে জানানো হয় শিশুটি ভালো আছে । দুদিন পর রিলিজ দেওয়া হবে । সে মোতাবেক ১৯ জানুয়ারি ১১ টার দিকে আমাদেরকে রিলিজ করা হয় এবং হসপিটাল থেকে জানানো হয়, আমাদের ডাক্তার মজিবুর রহমান মজিব সোনারগাঁয়ে বসেন, সেখানে গিয়ে একবার যেন তাকে দেখিয়ে আসি। কথামত আমরা হাসপাতাল থেকে যেয়েই ডাক্তারকে দেখাই। কিন্তু ডাক্তার শিশুটিকে দেখেই জানান, অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে। তাকে আবারও প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে নিতে হবে। পরে আমরা হাসপাতালে আসলে এখান থেকে জানানো হয়, শিশুটি মৃত ।
শিশুটি পুরোপুরি সুস্থ যেহেতু ছিল না, তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন রিলিজ দিলেন, প্রশ্ন তুলে সালামত বলেন, সম্ভবত হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছিলেন শিশুটি প্রায় মৃত। তাই তারা তরিঘড়ি করে হসপিটাল বিল উত্তোলনের জন্য শিশুটিকে রিলিজ দিয়েছেন। আমি মনে করি নবজাতকের এই মৃত্যুর জন্য হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ অবহেলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি কামরুল ফারুক আমাদের অভিযোগটি আমলে নেননি এবং কোনো ধরণের সহযোগিতাও করেননি ।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের ম্যানেজার সালাউদ্দিন ভূঁইয়া পুরো বিষয়টিই এক রকম ডাক্তারের উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে বলেন, এখানে আমাদের কোনো অবহেলা নেই। ডাক্তার বলছেন তাই রিলিজ দিয়েছি । রিলিজ দেওয়ার সময় শিশুটি সুস্থ ছিলো। পরে ডাক্তার দেখিয়ে হসপিটালে আসার পথেই শিশুটি মারা যায়।
তবে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিওনেটোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. মজিবুর রহমান বলেন, ১৬ দিন শিশুটি আমার তত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিয়েছিলো। শিশুটি প্রিমেচিউর ছিল। এ কারণে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) রাখতে হয়েছিলো । কিন্তু শিশুর অভিভাবক খরচের কথা বিবেচনা করে আরও ৭দিন আগেই ছুটি নিয়ে চলে যেতে চাইছিলেন। আমরা তখন ছাড়তে পারিনি । কারণে, তার কন্ডিউশন ভালো ছিল না। পরে, শিশুটি যখন একটা লেভেলে আসলো তখন ১৯ জানুয়ারি ছুটি দিই ।
তিনি আরও বলেন, শিশুটি মারা গেছে এটি দুঃখজনক। অন্যদের থেকে বেশি কষ্ট আমার হচ্ছে কারণ সে আমার তত্বাবধায়নে ছিল। এটাকে একটি দুর্ঘটনাই বলবো। কোনো না কোনো ভাবে শিশুটির শ্বাঃসনালি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেনি। তাই আমার কাছে নিয়ে আসার সাথে সাথেই তাকে নিজের গাড়ি দিয়েই হসপিটালে পাঠিয়ে শেষ চেষ্টা করা হয়েছিলো। এখানে ডাক্তার বা হসপিটাল কর্তৃপক্ষের কোনো রকম অবহেলা ছিলো না। এরপরও যদি তারা মনে করেন আমাদের অবহেলা রয়েছে তাহলে শিশুটির ময়না তদন্ত করে যে রিপোর্ট পাবে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারে।
প্রসঙ্গত, সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে প্রায় সময়ই প্রসূতি কিংবা নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই থাকে। এসব নিয়ে গণমাধ্যমে প্রায় সময়ই হসপিটাল কর্তৃপক্ষ শিরোনামও হয়েছে। হয়েছে হইচইও। তাছাড়া এই হসপিটালটি ‘কলেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও তারা দিব্যি মেডিকেল কলেজ দাবি করে সাধারণ মানুষদের ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে।
যদিও হসপিটাল ম্যানেজার সালাউদ্দিন ভূঁইয়া দাবি করেছেন, তারা মেডিকেল কলেজের অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন। কর্তৃপক্ষ তাদেরকে অবজারভেশন করছে ।
Discussion about this post