এনএনইউ রিপোর্ট :
ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার করে দীর্গ ৮ বছর নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন কাঠপট্টি গুদারাঘাট এলাকার রেইনবো ডাইং সম্পূর্ণ চালু অবস্থায় কৌশলে দখল করে নেয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত জসিম ও হাসেম নামে দুই ব্যক্তি । আর তাদের মূল শেল্টার দাতা ছিলেন শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু । এমন অভিযোগ ভূমি মালিক সামিয়া সালাম ও তার ভাই শাকফাত সালামের।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে এবং ম্যাসেজ পাঠালেও কোন বন্তব্য পাওয়া যায় নাই ।
২০১১ সালে বে দখল হয়ে যাওয়া এই ফ্যাক্টরির মূল জমির পরিমাণ ছিলো ৯ বিঘা। গত আট বছর ধরে নানা ভাবেই সামিনা ও তার ভাই শওকত সালাম চেষ্টা করছিলেন দখলদারদের কাছ থেকে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি উদ্ধার করতে। কিন্তু দখলদাররা ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ার কারণে সেটি তারা কোনো ভাবেই উদ্ধার করতে পারছিলেন না।
শেষতক কোনো উপায়ন্ত না পেয়ে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন জমির প্রকৃত ওয়ারিশ শওকাত সালাম ও তার বোন সামিনা সালাম।
এসপি তাদের কাছ থেকে বৈধ কাগজপত্র এবং এই জমির প্রকৃত ওয়ারিশ তারা, সে পক্ষে প্রমাণপত্র চান। সে মোতাবেক যাবতীয় দলিল, প্রমাণপত্র এবং দখল করে নেওয়ার দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করেন তারা। এর প্রেক্ষিতে বুধবার (২১ আগস্ট) রেইবো ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং ফ্যাক্টরীটি পুরো জমিসহ দখলমুক্ত করে দেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ।
জানা যায়, ৩৪ নং উত্তর চাষাড়ার বাসিন্দা এম এ সালাম সদর উপজেলার কাঠপট্টি গুদারাঘাট এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন রেইনবো ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং লিমেটেড। মিলটি চালু অবস্থায় তিনি ২০০৪ সালে মারা যান। পরবর্তীতে ব্যাঙ্ক ঋনের কারণে মিলটি চালু রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না এমএ সালামের পুত্র শওকত সালাম এবং সামিয়া সালামের পক্ষে। ফলে ব্যাঙ্ক লোনও পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাক্টরীটি বিক্রির উদ্যোগ নেন শওকত ও সামিনা।
সামিনার গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১১ সালে জনৈক জসিম নামে এক ব্যক্তির সাথে বায়নাপত্রে চুক্তি করেন তারা। কথা ছিলো তারা ব্যাঙ্কের লোন পরিশোধ করে জমির বাকী টাকা তাদেরকে বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু সে আর তারা করছিলেন না। উল্টো মিলটির সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারিদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে পুরো মিলটিই দখলে নিয়ে নেন।
সামিনার দাবি, তারা যখন দখলবাজদের কাছ থেকে মিলটি ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছিলেন তখন জসিমের পক্ষে এসে দাঁড়ান মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু। মূলত তিনিই গত আট বছর ধরে নানা ধরণের টালবাহানা করছিলেন। এরমধ্যে মিলের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে তারা ২ কোটি টাকাও আত্মসাৎ করেন। জসিমের সাথে আরও রয়েছেন হাশেম নামে এক ব্যক্তি। তিনি এই ফ্যাক্টরীটিতেই কাজ কররেতন।
তিনি বলেন, আমাদের সম্পত্তিতে আমরা কেউ যেতে পারছিলাম না। যতবারই আমরা আমাদের সম্পত্তি ফিরে পেতে চাইলাম ততবারই আমাদেরকে নানা ভাবে থামিয়ে দিলেন সাজনু। তিনি আমাদের ধৈর্য ধরতে বলেন। এমন আরও নানা কথা বলে আট বছর তিনি কালক্ষেপন করেন। এর মধ্যে জসিম নামে ওই ব্যক্তিকে দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে আমাদের আরও কিছু জমি নিজেদের নামে লিখিয়ে নেন হাশেম। জালিয়াতি করে জমি লিখিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করি। মামলায় জসিমের নামে ওয়ারেন্টও ইস্যু হয়। তাদের কাছ থেকে যখন জমিটি উদ্ধার করতে পারছিলাম না তখন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিই। তিনি কাগজপত্র সব দেখে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর এনামুলকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে বুধবার তারা দখলবাজদের কাছ থেকে আমাদের সম্পত্তি উদ্ধার করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেন। জসিম বিভিন্ন জায়গায় ছড়াচ্ছেন তিনি আমাদেরকে দুই কোটি টাকা দিয়েছেন এবং ব্যাঙ্কেও দুই কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ব্যাঙ্কে কোনো টাকা দেননি। দিয়ে থাকলে সে প্রমাণপত্র তিনি দেখাক। তাছাড়া আমাদেরকে সে দুই কোটি টাকা দেয়নি। প্রথমে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। পরে ৫ বছরে আরও ৮০ লাখ টাকা দিয়েছে। আমরা এই টাকাটাও তাকে ফেরৎ দিতে প্রস্তুত ছিলাম।
কিন্তু তিনি কোনো কিছুই করতে রাজি ছিলেন না। শুধু শুধু কালক্ষেপন করছিলেন সাজনুর মাধ্যমে। সাজনুই ছিলেন এর নেপথ্যে।
এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনুর মুঠোফোনে চেষ্টা করে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নাই । নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়েও সাজনুর কোন ফিরতি উত্তর পাওয়া যায় নাই ।
এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর এনাম নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটকে বলেন, পুলিশ সুপারের আদেশক্রমে এই বিষয়টি নিয়ে আমরা যাচাই বাছাই করে প্রকৃত জমি ও ডাইংয়ের মালিক পক্ষের হাতে সম্পত্তি বুঝিয়ে দিয়েছি । মূলত জসিম ও হাসেম চক্রটি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এমন অপকর্ম করে আসছিলো ।যা আজ অবসান হলো ।
জেলা পুলিশের ডিআইও-টু সাজ্জাদ রোমন জানান, “যে যত বড় ভাইয়ের লোক হোকে অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
Discussion about this post