এনএনইউ ডেক্স :
‘ভূয়া’ পাওয়ার অব অ্যাটর্নীর মাধ্যমে এক অসহায় সৌদি আরব প্রবাসীর ১২ শতাংশ জমি অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন কামাল প্রধান নামক এক প্রতারক। সারাজীবনের পরিশ্রমের ফসল ওই সৌদি প্রবাসীর শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন ভুক্তভোগী আনিছুর রহমান। আনিছুর রহমান ফতুল্লা থানাধীন দক্ষিণ কায়েমপুর এলাকার মৃত আব্দুল হাকিম মিয়ার ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, এ জমিটি উদ্ধারের জন্য অসহায়ের মত কখনো থানা পুলিশ আবার কখনো বা ভূমি অফিসে ধরণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। কিন্তু যখনি কোনো কিছুতে কাজ হচ্ছেনা, ঠিক তখনি শেষ আশা আর ভরসা নিয়ে হাজির হয়েছেন সাংবাদিকদের কাছে।
বার বার তিনি বলেছেন, আমি যদি সত্য হই, তাহলে আমাকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে সহযোগীতা করুন। এই জমিটাই আমার শেষ সম্বল। আমরা সারাজীবনের পরিশ্রমের টাকা জমিয়ে তিলে তিলে এই জমিটা আমি কিনেছি। এটা হারালে আমি বড় নিঃস্ব হয়ে যাবো, বউ বাচ্চা নিয়ে আমাকে পথে বসতে হবে। প্লীজ আমাকে সাহায্য করুন। এভাবেই তিনি তুলে ধরেন তার শত দু:খ আর কষ্টার্জিত ১২ শতাংশ জমি নিয়ে কামাল প্রধানের প্রতারণার কথা। তার সাথে ঘটে যাওয়া প্রতারণার কথা বলতে বলতে একসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
এরপর আরও কিছুটা সময় নিয়ে চোঁখের অশ্রু মুছে পাঠ করেন তার লিখিত বক্তব্য। যেখানে তিনি বলেন, আমি আজ দুঃখভরাক্রান্ত হৃদয়ে ও দিশেহারা হয়ে আপনাদের কাছে এসে হাজির হয়েছি।
আমি একজন সৌদি আরব প্রবাসী। সেখানে পরিশ্রমের অর্জিত টাকা জমিয়ে তিলে তিলে বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা মৌজাস্থ পৃথক তিনটি দলিল মূলে ১০, ৪ এবং ২ শতাংশ জমি ক্রয় করি ২০০৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই। এরপর আমি সৌদি আরব চলে যাই। সেখানে থাকাকালিন সময়ে ২০১০ সালে পারিবারিক সূত্রে জানতে পারি যে, আমার কষ্টার্জিত টাকায় কেনা জমিটি কামাল প্রধান নামক ব্যক্তি একটি ‘ভূয়া’ পাওয়ার অব অ্যাটর্নীর মাধ্যমে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিক্রি করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এরপর প্রবাসে থেকেই আমার ছোট বোনকে দিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। ওই মামলা এখনো চলমান। সারাজীবনের উর্পাজিত টাকায় কেনা জমিটির জন্য প্রবাসের দিনযাপন আমার কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সারাক্ষণ ওই জমি তথা আমার শেষ সম্বলটুকু হারানোর ভয়ে চিন্তিত থাকতাম। তাই বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে এসে নিজ জমিতে গিয়ে শুনি এ জমির মালিক আমি না! এই জমিটি কামাল প্রধান নামক এক ব্যক্তি অপর একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন!
তিনি আরও বলেন, অমন কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি আমি। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকি নিজের কাগজপত্র নিয়ে। পরে নানা ভাবে খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারি কামাল প্রধান একটি পাওয়ার অব অ্যার্টনীর মাধ্যমে তার জায়গাটি অন্য একজনের কাছে বিক্রি করেছেন। অথচ কামাল প্রধানকে আমি কোন পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দেইনি। এখানে আমার স্বাক্ষর ও টিপ সই জালিয়াতি করা হয়েছে। আদালতে কামাল প্রধানকে পাওয়ার অব অ্যার্টনী দেওয়াতো দূরের কথা এই কামাল প্রধান কে, তা এখনো আমি ঠিক করে চিনিনা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি কামাল প্রধান শুধু আমার সাথেই নয়, আরও অনেকের সাথে জালিয়াতি করে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে।
অসহায় আনিছ বলেন, এ ঘটনায় আমি (আনিছুর রহমান) গত ৩১ অক্টোবর নিজে বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করি। যার নং ৪৫। এ মামলায় বন্দরের বাগবাড়ির প্রধান বাড়ি এলাকার আবুল প্রধানের ছেলে কামাল প্রধান ও উপজেলার ৮৯ নং উইলসন রোড এলাকার মৃত হাজী সদর উদ্দিনের ছেলে আক্তারুজ্জামানসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে।
এর আগে আমি একই ঘটনায় পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। এই অভিযোগের তদন্ত করতে পুলিশ সুপার জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
কামাল প্রধান তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, এদিকে এসপির সাহেবের কাছে নালিশ দেওয়ার কথা শুনার পর থেকেই ওই কামাল প্রধান গংরা আমাকে বিভিন্নভাবে প্রাণ নাশের হুমকি ধমকি প্রদান করছে। বিভিন্ন মাধ্যমে এসপির কাছে দেয়া অভিযোগ ও থানার মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করছে। এখন আমি ভীষণ অসহায়।
আনিছ বলেন, আমার চাইতে আপনারাই খুব ভালো করেই চিনেন এ কামাল প্রধানকে। বহুবার তার কুকৃত্তির কথা আপনাদের পত্র পত্রিকায় উঠে এসেছে। তিনি সমাজের কাছে প্রত্যারক হিসেবেই চিহ্নিত। এবং এ প্রতারণার কারনে বহুবার জেলও খেটেছেন বলে জানতে পারি।
সাংবাদিকদের কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে তিনি সর্বশেষ আরও বলেন, আপনারা সমাজের দর্পন, জাতির বিবেক। তাই আপনাদের কাছে আমাদের মত সাধারন ও অসহায় মানুষের আস্থা অনেক বেশি। কেননা, আপনারা আপনাদের লিখুনির মাধ্যমে অসহায়ত্ব মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং তাদের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সহযোগীতা করেন। তাই, আমি আজ বড় আশা করে আপনাদের কাছে সেই ন্যায় বিচার ও আমার জীবনের শেষ সম্ববটুকু ফিরে পাওয়ার আশা নিয়ে হাজির হয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের লিখুনির মাধ্যমে আমাকে সামান্য পরিমান সহযোগীতা করলে আমি আমার বহু কষ্টার্জিত জমিটি ফিরে পেতে পারি। আপনাদের সহযোগীতা চাই। আল্লাহ্ আপনাদের মঙ্গল করুক।
Discussion about this post