নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে ট্রাক রেখে পথরোধ করে টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকলীগ নেতা কাউছার আহমেদ পলাশ ও তার অনুসারীরা। এ সময় সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য নবনির্মিত ভবনের আশপাশে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
রোববার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ফতুল্লার আলীগঞ্জ এলাকায় এ বিক্ষোভ চলে।
বিক্ষোভকারীদের দাবী আলীগঞ্জ খেলার মাঠে কোন ভবন নির্মান করতে দেয়া হবে না। অপরদিকে জেলা প্রশাসনের দাবী খেলার মাঠে কোন ভবন নির্মাণ হবেনা। তবে মাঠের আশপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। অযথা শ্রমিকলীগ নেতা ও তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করে সরকারী কর্মকর্তাদের আবাসন প্রকল্পে বাধা দিচ্ছে। এরআগে একাধীকবার শ্রমিকলীগ নেতা পলাশের অনুসারীরা ভবন নির্মাণ সামগ্রী জোর করে দেয়ার নামে ভবন নির্মাণে বাধা দেয়। পলাশ ও তার অনুসারীদের বাধার মুখে এপর্যন্ত প্রায় ৭-৮টি বহুতল ভবন নির্মান করা সম্ভব হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্থানীয় মাদ্রাসার শিশু শ্রেনীর কমলমতি ছাত্রদের হাতে ব্যানার দিয়ে আলীগঞ্জ মাঠের কাছে রোধে দাড় করিয়ে বিক্ষোভ করানো হয়। পরে জেলা প্রশাসনের ৩জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সেখানে একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েও স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা কাউছার আহমেদ পলাশের অনুসারীদের মাঠ থেকে সরাতে পারেনি। দুপুর দেড়টার দিকে বিভিন্ন মসজিদের মাইকে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে মাঠ রক্ষার দাবীতে সড়ক অবরোধের অনুরোধ জানানো হয়। এতে এলাকাবাসী এগিয়ে না আসলেও পাথর, ইট, বালু টানা শ্রমিকসহ জাহাজের লোডআনলোডের শ্রমিকরা এসে সড়ক অবরোধ করে। এক পর্যায়ে কয়েকটি খালি ট্রাক দিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। পরে টায়ারে আগুন ধরিয়ে কিক্ষোভ করতে থাকে শ্রমিকরা। এভাবে প্রায় এক ঘন্টা বিক্ষোভের পর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা বারিক ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের বুজানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তখন বিক্ষোভকারীরা অবৈধ স্থাপনা গুলো তাদের দাবী করে বলেন, জেলা পরিষদ থেকে সড়কের পাশের জমি লীজ আনা হয়েছে। লীজকৃত জমিতে তৈরী করা স্থাপনা তারা উচ্ছেদ করতে দিবেনা।
এতে ইউএনও নাহিদা বারিক লীজের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করার জন্য এক সপ্তাহের সময় দেন। যাচাই বাছাই শেষে এক সপ্তাহ পরে ফের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের জমিতে অবস্থিত ফতুল্লার আলীগঞ্জ খেলার মাঠ। এ মাঠসহ ১১ দশমিক ৬৫ একর জমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য ২০১৬ সালের ২২ মার্চ একনেকের বৈঠকে ৮টি ১৫ তলা ভবনে মোট ৬৭২টি ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং বর্তমানে নির্মান কাজ চলছে।
এরমধ্যে ২০১৭ সালের ৬ জুন ওই জমির ৫ একর ৭০ শতাংশের মধ্যে একটি খেলার মাঠ দাবী করে শ্রমীক লীগ নেতা কাউসার আহম্মেদ পলাশ হাইকোর্টে রিট পিটিশনটি দায়ের করেন। এতে মহামান্য হাইকোর্ট খেলার মাঠে কোনরূপ আকৃতি, প্রকৃতি যাতে পরিবর্তন করা না হয় এই মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এরফলে নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ ওই জমিটিতে কাজ করা বন্ধ রাখলেও একই বছরের ২১ আগষ্ট পলাশ তার অনুসারী আরিফুল ইসলামকে দিয়ে সদর উপজেলা পরিষদ থেকে কোরবানীর পশুর হাটের ইজারা আনেন ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পলাশ এ মাঠটি খেলার মাঠের জন্য নয় পশুর হাট ছাড়াও রারা অবৈধ বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্যই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। আর নয়তো মাঠে কোনরূপ আকৃতি, প্রকৃতি যাতে পরিবর্তন করা না হয় এই মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি চেয়ে ফের তিনিই আইনকে অমান্য করে পশুর হাটের ইজারা নেয় কিভাবে ? একজন শিক্ষককে দিয়ে মাঠ রক্ষার দাবীতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলেও তা দুই দফা খারিজ করে দেয় আদালত । এরপরও নানা ভাবে বিতর্কিত কাউসার আহমেদ পলাশ নিজের অবৈধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে এমন কোন পন্থা নাই যা সে অবলম্বনর করে নাই ।
ফতুল্লার আলীগঞ্জ এলাকার অনেকের দাবী, এই খেলার মাঠ নিয়ে খুন খারাপীসহ অনেকে কেলেংকারীই ঘটিয়েছে পলাশ ও তার বাহিনীর লোকজন । ১৯৯৮ সালে মোতাহার হোসেন এই আলীগঞ্জ মাঠ লিজ আনার পর এই মাঠর দখল নিজের আয়ত্মে নিতে বারেক চেয়ারম্যানের ছেলে মাসুদ সহ মোট চারটি খুনের ঘটনাও ঘটায় । এতো খুনের ঘটনার পর মোতাহার হোসেন আর আলীগঞ্জে অবস্তান না করে পলাশের ভয়ে রাজধানীর ডিওএইচএস এ বসবাস করেন পলাশ ও তার বাহিনীর ভয়ে ।
এরপর থেকে শিশুদের খেরার মাঠের নামে পলাশ ও তার বাহিনী বিভিন্ন ইট, বালু, সিমেন্টের গদি ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে নিম্নে ৫০ লাখ টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করে বলে এলাকাবাসীর জোড় অভিযোগ রয়েছে । এমন অভিযোগ ছাড়াও এলাকাবাসীর দাবী আইনশৃংখলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তা ছাড়াও কিছু নামধারী বিশেষ পেশার লোকজন নিয়মিত পলাশ ও তার বাহিনীর কাছ থেকে মাসোয়ারা গ্রহণ করায় এমন বৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস করে না ।
শ্রমিক লীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের বিশাল অপরাধের ফিরিস্তি সকলের জানা থাকলেও মামলা, হামলার ভয়ে কেউ মুখ খুলে না । সংবাদ কর্মীদের চামড়া তুলে নেয়ারও হুমকি দেয় পলাশ । আর মামলা দিয়ে হয়রানী করথে পলাশকে কিছু দালাল নানাভাবে উস্কানী দেয় বলেও এলাকাবাসী মন্তব্য করেছে । এমন অবৈধ দখল ও কেলেংকারীর বিশাল ফিরিস্তির কিছু রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর দপ্তরে ।
Discussion about this post