শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের সুণাম অক্ষুন্ন রাখতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের কলংক হিসেবে পরিচিতি লাভ করা পুলিশের সেই এএসআই (যিনি নিজেকে দারোগা বলে পরিচয় দিতেন) সাব্বিত খানকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে ।
নানা অপরাধ কার্যক্রমের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শেষে সাব্বিত খানকে আড়াইহাজার থানার কালাপাহাড়িয়া ফাঁড়িতে বদলী করা হয়েছে ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সাব্বিত খানের বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ তাকে বদলীর বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) সোহেল পারভেজ।
প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশ বিগত সময়ে জেলার সকল থানায় এক ভয়ানক আতংকের নাম হিসেবে নিজেদের দূর্ণাম মারাত্মক অবস্থানে উপনীত করে । গত কয়েক বছর যাবৎ এই ডিবি পুলিশসহ সকল পুলিশের দর্ণাম গুছাতে উর্ধতন কর্মকর্তারা চেষ্টা করলেও সেই চেষ্টাকে গুড়েবালি দিয়ে ম্লান করে দিচ্ছে কতিপয় কিছু পুলিশ সদস্য ।
এদের মধ্যে অন্যতম ডিবি পুলিশের দারোগা পরিচয়দানকারী এএসআই সাব্বিত খান । পুলিশের অনেক সদস্যই নাম প্রকাশ না করার অনুরোদে বলেন, “এই সাব্বিত খান যে কত বড় ধরণের অপরাধী তা শুধু সহকর্মী পুলিশ সদস্যরাই জানেন।
সাব্বিত খান নিজে এএসআই হিসেবে ডিউটিকালীন সময়ে সকল মাদক স্পটে উপস্থিত হয়ে চোখ রাঙ্গানী দিয়ে ফিরে আসে। এরপর ডিউটি শেষে সকল পুলিশকে রেখে একা নিজের মটর সাইকেল নিয়ে ফের মহড়া দিয়ে প্রতিটি মাদক স্পট থেকে নিয়েমিত মাসোয়ারা আদায় করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ । এই সাব্বিত খানকে ঠেকানো খুবই কঠিন কাজ ।”
এ ছাড়াও মামলার ভয় দেখিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জোড়ালো অভিযোগ রয়েছে এই সাব্বিত খানের বিরুদ্ধে। তিনি জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী উপ পরির্দশক (এএসআই) হলেও নিজেকে মটর সাইকেল নিয়ে সকল মাদক স্পটে মহড়া দিয়ে মাসোয়ারা আদায় করে যাচ্ছে মাসের পর মাস যাবৎ । একই সাথে সর্বত্র পরিচয় দিয়ে বেড়ান তিনি ‘দারোগা সাব্বিত খান’ ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, উপজেলার ভুলতা ফাঁড়িতে থাকাকালীন সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম ছিল এএসআই সাব্বিত খান। গ্রেফতারি পরোয়ানা কিংবা মামলা ছাড়াই লোকজনকে ফাঁড়িতে নিয়ে যেতেন তিনি। পরে মাদক, ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে ফেলার হুমকি দিয়ে আদায় করা হতো টাকা। প্রতি মাসেই এভাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা আদায় করতেন এএসআই সাব্বিত খান।
ব্যাবসায়ীরা বলেন, কিছুদিন পূর্বে জেলা পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশ রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালান করে । এই অভিযানে ‘স্যারদের ম্যানেজ করতে হবে’ উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নেন এএসআই সাব্বিত। টাকা আদায়ের বিষয়টি কাউকে বললে সে বাঁচতে পারবে না বলেও হুমকি দেয় ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
এমন অভিযোগ ছাড়াও মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সাক্ষাত করে বিকাশের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে টাকা আদায়ের কিছু প্রমাণও পাওয়া গেছে । এমন তথ্য প্রমাণসহ রূপগঞ্জের একাধিক সূত্র আরো জানায়, এএসআই সাব্বিত খান যিনি নিজেকে দারোগা পরিচয় দিয়ে অনেকের কাছ থেকে তার মুঠোফেনে বিকাশ করা নম্বরে টাকা গ্রহণ করে যাচ্ছে নিয়মিত ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিবির সহকারী উপ পরির্দশক সাব্বিত খান গণমাধ্যমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সবই ভিত্তিহীন। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ কাজের সাথে সম্পৃক্ত নন দাবি করে বলেন, ‘আমার সম্পর্কে ওসি সাহেব সব জানেন।’
এমন অসংখ্য অভিযোগের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, এএসআই সাব্বিত খানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে ডিআইওয়ান সাহেব আমাকে জানিয়েছেন । সে আগে কোন ষ্টেশনে কি করেছে সেই বিষয়ে আমার জানা নাই। তবে ডিবি পুলিশে চাকরী করে মাসোয়ারা গ্রহণ করবে মাদক কারবারীদের কাছ থেকে তা করতে পারবে না । আমি সাব্বিত খানকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আবারো সাবধান করে দিচ্ছি। এর আগেও তাকে সতর্ক করেছি । আর সাত দিন সময় চেয়ে নিচ্ছি তাকে সংশোধন যদি হয় তবে ভলো, নইলো উর্ধতন কর্মকর্তাগণ যা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তখন আর কিছু বলার থাকবে না ।
সাব্বিত খানের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) সোহেল পারভেজ নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, সাব্বিত খানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তাকে জেরা করা হচ্ছে । প্রমাণও পাওয়া গেছে । তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ বদলীর আদেশ হচ্ছে ।
Discussion about this post