নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়ের সময় ১৫ লাখ টাকা যৌতুক ও ২০ ভরি স্বর্ণলংকার দিয়ে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে সুখের সংসার আর করা হলো না একমাত্র কন্যা বৃষ্টি চৌধুরীর । বিয়ের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই স্বামী ও শ্বশুড়, শ্বাশুড়ী ননদ ডেইজীর নির্যাতনে সুখের পরিবর্তে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে এখন জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ঠাঁই হয়েছে (বৃষ্টি চৌধুরীর) তার।
শুক্রবার ১২ এপ্রিল দুপুর নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজার সাহাপাড়ার গিয়াস উদ্দিনের বাড়ীর ৭ম তলা থেকে অচেতন অবস্থায় বৃষ্টি চৌধুরীকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আনা হলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নূরুজ্জামান মৃত ঘোষনা করে সদর থানা পুলিশকে খবর দেয় । ডাঃ নূরুজ্জামান জানান, মৃত বৃষ্টি চৌধুরীর শরীরে আঘাতের চিহ্নসহ গলায় দাগ পাওয়া গেছে । এতেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় তার মৃত্যু স্বাভাবিক না ।
নিহতের স্বামী নারায়ণগঞ্জ শহরের ডাচ বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তার ও টানবাজারের সুদের ব্যবসায়ী সুভাস চন্দ্র রায়ের ছেলে সুদীপ রায়ের দাবী তার স্ত্রী পারিবারিক দ্বন্ধের জের ধরে আত্মহত্যা করেছে। প্রায় প্রতিদিনই এমন দ্বন্ধ লেগেই থাকতো। দরজা বন্ধ করার পর অনেক ডাকাডাকি করার পর কোন সারাশব্দ না পেয়ে কালীরবাজার থেকে তালা ভাংগার মিস্ত্রী ডেকে নিয়ে দরজা ভেঙ্গে বৃষ্টির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। নারায়ণগঞ্জ সদর থানা থেকে মাত্র কয়েক গজের মধ্যে এমন ঘটনায় পুলিশকে কেন জানালেন না, এমন প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকে সুদীপ রায়।
বৃষ্টি চৌধুরীর এমন মৃত্যুর খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসেন শহরের অবস্থানরত অনকে আত্মীয় স্বজন । এ সময় সকলেই অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টির ননদ ডেজী স্বামী, শ্বশুড় ও শ্বশুড়ী নানাভাবে নির্যাতন করতো। সকালেও ডেইজী সাহাপাড়ার বাবার বাড়িতে এসে নির্যাতনের খবরপেয়েছি । এরপর বৃষ্টির মৃত্যুর পর পালিয়ে যায় ডেইজী সাহা। দায়ী স্বামী, শ্বশুড়, শ্বশুড়ী ও ননদের বিচার চাই ।
নিহত গৃহবধু বৃষ্টি চৌধুরীর ভাই মিঠুন চৌধুরীসহ নিকাটাত্মীয় অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টিকে হত্যা করেছে স্বামী সুদীপ, শ্বশুড় সুভাষ, ননদ ডেইজীসহ পরিবারের লোকজন । কারণ বিয়ের সময় ১৫ লাখ টাকা যৌতুক নেয়ার পর আরো যৌতুক দাবী করে আসছিলো সুদী ব্যবসায়ী সুভাষ, তার ছেলে সুদীপ ও তার বোন ডেইজী । ডেইজীর স্বামী বিশাল ব্যবসায় লিটন সাহার ক্ষমতার প্রভাবে এমনটি করতো বলেও অভিযোগ করে নিহতের স্বজনরা । এক বছর আগে বৃষ্টির সন্তান শুভদ্বীপ জন্মের মাত্র ৮ দিনের মধ্যে বৃষ্টিকে মারধর করে বাবার বাড়ী কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার ছালিয়া কান্দি পাঠিয়ে দেয় । এমন দ্বন্ধের কারণে বিয়ের মাত্র দুই বছরের মধ্যে বহুবার সালিশও হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবৎ যৌতুকের কারণে মারধর করতো বলেও বৃষ্টির বাবা কুমিল্লার মুদি ব্যবসায়ী শ্যামল চৌধুরী জানতে পারেন । বিষয়টি কয়েকবার শ্যামল চৌধুরীর বোন জামাই নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সমালোচিত সূতা ব্যবসায়ী প্রবীর সাহাকে জানায় ।
নিহত বৃস্টি চৌধুরীর পরিবারের জোড়ালো অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর থানার উপ পরিদর্শক আলাউদ্দিন আল আজাদ নিহতের লাশের সুরৎহাল বিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠায় । একই সাথে প্রবীর সাহার জোড়ালো তদ্বিরে নিহতের স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা সুদীপ রায় ও তার বাবা সুদ ব্যবসায়ী সূভাষ চন্দ্র রায়কে আটক করে ।
ঘটনার বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, বৃষ্টি নামের এক গৃহবধু মারা গেছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী ও শ্বশুড়কে থানায় আনা হয়েছে । ঠিক এখনই বলা যাবে না আসলে এটি কি হত্যা নাকি আত্মহত্যা । পিএম (পোষ্ট মর্টাম) রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত গৃহবধুর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা মুস্কিল । এ বিষয়ে তদন্ত করছে দারোগা আলাউদ্দিন ।
Discussion about this post