নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
ভোর ৫টা ৩৫ মিনিট । সূর্যের আলো তখনো ঠিক মতো দেখা যায় নাই। এতো সকালে বিভিন্ন বয়সের নারী থেকে শিশু পর্যন্ত অস্যখ্য মানুষের পথচলার গন্তব্যস্থল কবিরাজের বাড়ী । প্রায় ৪০ বছর যাবৎ এভাবেই সহজ সরল সাধারণ মানুষ কবিরাজের বাড়ী আসছে চিকিৎসা করাতে । কিসের চিকিৎসা এমন প্রশ্ন করতেই এক নারী বলেই উঠলেন, জন্ডিসের মাথা ধোয়া !
সহজ সরল বিভিন্ন বয়সী নারী, শিশুদের পিছু ছুটে গিয়ে দেখা মিললো অভিনব কায়দায় জন্ডিসের মতো রোগ সারাতে চুন, লেবু ও হলুদ মিশিয়ে মাথা ধোয়ার কবিরাজি করছে এক বৃদ্ধ নারী । কবিরাজ হনুফার স্বামী মন্নান ছৈয়াল পাশে দাড়িয়ে নানাভাবে স্ত্রীকে সহায়তা দিচ্ছেন । বিশাল লাইনে দাড়িয়ে একে এক অভিনব কায়দায় মাথা ধোয়ার কাজ করছে আর টাকা নিচ্ছে । জন্ডিসের মাধা ধোয়ার পর তিন দিন আসতে হবে এবং পরের দিন থেকে দই নিয়ে আসার জন্যও প্রত্যেককেই বলে দিচ্ছে হনুফা ও তার স্বামী মন্নান ছৈয়াল ।
হনুফা ছাড়াও এমন আরো এক কবিরাজের তথ্য পাওয়া গেলো জন্ডিসের মাথা ধোয়ার জন্য আসা আরেক নারী ভক্তের । তিনি জানালেন । ঋষি পাড়া বস্তিতে একটিই চারতলা ভবনের নীচ তলায় মৃত কানাই লাল ওরফে কাইয়ের স্ত্রী কাশিনাথ ওরফে কাইস্যার বৃদ্ধ মা দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ এভাবেই ৩শ টাকা ভিজিট নিয়ে জন্ডিসের মাথা ধোয়ার কবিরাজি করছেন ।
একের পর এক সহজ সরল বিভিন্ন বয়সী নারী, শিশুর মাথা ধোয়ার দৃশ্য দেখে কবিরাজ হনুফার (৫৫) কাছে প্রশ্ন করতেই রেগে উঠেন প্রতিবেদকের উপর । এরপর তিনি জানান, তার দাদী স্বপ্নের মাধ্যমে এই কবিরাজি পেয়েছেন । টাকা নিচ্ছেন কেন ? এমন প্রশ্নে খুশি হয়ে দেয় তাই নেই । বরিশাল জেলার উজিরপুর থেকে অভাবের তাড়নায় নারায়ণগঞ্জে এসে শহরের সিটি কর্পোরেশনের বাবুরাইল মোবারক শাহ সড়কের (শেষ পান্ত) মৃত ফজল হাজীর ছেলে বাদলের ভাড়াটিয়া হিসেবে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা হিসেবে জন্ডিসের মাথা ধোয়ার কবিরাজি শুরু করে হনুফা ও তার স্বামী মন্নান ছৈয়াল।
জন্ডিস কিভাবে ভালো হয় এমন প্রশ্নে হনুফা ও তার স্বামী মন্নান ছৈয়াল জানায় মানুষ ভালো হয় তাই এই কবিরাজি করি । কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা লাগে না জন্ডিসের ।
একইভাবে ঋষি পাড়া বস্তিতে গিয়ে দেখা যায় লেবু, চুন ও হলুদ দিয়ে জন্ডিস ভালো করার কবিরাজি করছেন মৃত মৃত কানাই লাল ওরফে কাইয়ের স্ত্রী কাশিনাথ ওরফে কাইস্যার বৃদ্ধ মা (৬০) । নানা জনের কাছে জিজ্ঞেস করেও তার নাম জানা যায় নাই । তবে সকলেই তাকে চিনেন কাইস্যার মা হিসেবেই । এই জন্ডিসের মাথা ধোয়ার কবিরাজি করে কাশিনাথের পরিবার কোন কাজ কর্ম না করলেও এখন কোটিপতি । ৬ তলার ফাউন্ডেশন দিয়ে ৪ তলা ভবন নির্মান করেছে এই কবিরাজ । প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে বাথ রুমে প্রবেশের পর আর ফিরে আসেন নাই তিনি । বুঝতে পেরেছেন তিনি ৪০ বছর যাবৎ প্রতারণা করে আসতেছেন । এর আগেও কয়েকবার শহরের মোবারক শাহ সড়কের (বাবুরাইল) বাসিন্দারদের কাছে এমন প্রতারণা আর করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে আবার স্থানীয় ফটকাবাজদের ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে কাশিনাথের বৃদ্ধ মা কবিরাজি বাণিজ্য।
এ বিষয়ে বাবুরাইল এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ লতিফ মেম্বার, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদরা বলেন দেশের মানুষ সচেতন হয়েছে । এই হলো এর নমুনা । সহজ সরল মানুষগুলোকে কিভাবে এই প্রতারকরা প্রতারণার ফাদে ফেরছেন তা চিন্তা করলেই মাথা গুড়ে । জন্ডিসের একমাত্র চিকিৎসা শুধু বিশ্রাম আর সামান্য ওষুধ । এ ছাড়া কোন চিকিৎসা নাই । প্রশাসনের উদাসীনতা আর স্থানীয়দের শেল্টারেই এমন অপকর্ম করার সাহস পাচ্ছে হনুফার মতো প্রতারকরা ।
বাবুরাইলের হনুফা, কাশিনাথের মা ছাড়াও শহরের নিতাইগঞ্জে, পাইকপাড়া ঋষিপাড়াও ফতুল্লার বিসিক এলাকায় এমন অসংখ্য প্রতারণার শিকার হচ্ছে হাজারো সাধারণ মানুষ ।
এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাক্তার খোরশেদ আলমকে তাৎক্ষনিকভাবে পাওয়া গেলে তিনি বিষয়টিকে শুধু মাত্র প্রতারণা বলে মন্তব্য করেন । সহজ সরল মানষকে বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৗশল বলেও জানান তিনি ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিনিয়র হেলথ এডুকেশণ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, এমন প্রতারণার বিষয়টি তো আমাদের নজরেই আসে নাই । আমরা অবশ্যই এমন প্রতারণা বন্ধ করতে যা যা করণীয় করবো ।
চিকিৎসার নামে এমন প্রতারণার বিষয়ে জানতে জেলা সিভিল সার্জন এহসানুল হক মুকুলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এমন প্রতারণা তো আগে জানা ছিলো না । তথ্যটি দেয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটকে ধন্যবাদ জানিয়ে এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বস প্রদান করেন ।
Discussion about this post