নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চাষাড়াস্থ চাদমারী এলাকার একটি মসজিদের তৃতীয় তলায় ৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অপহরণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম ফজলুর রহমান (৪৫) এর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় (নং: ২৬ (৮) ১৯) সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে মূল আসামী ফজলুর রহমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
একই সাথে বাকি ৫ আসামী রমজান আলী (৪৯), মোঃ গিয়াস উদ্দিন (৫২), হাবিব এ এলাহী ওরফে হবি (৫৫), মোঃ মোতাহার হোসেন (৪৮) ও মোঃ শরিফ হোসেন (৪৫) কে দুই দিন করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পরিদর্শক আব্দুল হাই নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আব্দুল হাই জানান, ফতুল্লা থানা পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত মূল আসামী ফজলুর রহমানের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ৭ আগস্ট বুধবার নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত র্যাব-১১ এ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপউদ্দিন জানান, ৬ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় বোরকা পরিহিত অবস্থায় এক ব্যক্তি র্যাব-১১ অফিসে এসে এই মর্মে একটি অভিযোগ দেয় যে, তার মেয়ে বর্তমানে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে এবং মসজিদের ইমাম কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছে ।
ধর্ষণের পর ইমামের অনুসারীরা তার মেয়েকে ও বাবাকে মেরে ফেলার জন্য বার বার হাসপাতালে গিয়ে খুঁজছে। ঘটনা শোনার পর তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব-১১ এর একটি অভিযানিক দল ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যায়। ভিকটিম ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে হাসপাতালে তাদের নিরাপত্তায় নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করে। এরপর আভিযানিক দলটি ঘটনার স্থল পরিদর্শন ও ধর্ষককে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
২ দিনের প্রচেষ্টায় ৭ আগস্ট সকাল ৬টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন উত্তর চাষাঢ়া চাঁদমারীস্থ এলাকা হতে ধর্ষক মোঃ ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়াও বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টায় ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে অপর আসামীদেরগ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন, মসজিদের ইমাম ও নেত্রকোনা কেন্দুয়া থানার সরাপাড়া গ্রামের মৃত রিয়াজউদ্দীনের ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার সহযোগী রমজান আলী (৪৯), মোঃ গিয়াস উদ্দিন (৫২), হাবিব এ এলাহী ওরফে হবি (৫৫), মোঃ মোতাহার হোসেন (৪৮) ও মোঃ শরিফ হোসেন (৪৫)।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার শিশুটির বয়স ৮ বছর। সে মাদ্রাসায় ২য় শ্রেনীতে অধ্যয়নরত। শিশুটি রাতের বেলায় বিভিন্ন প্রকার দুঃস্বপ্ন দেখে কান্না কাটি করত। বিভিন্ন প্রকার কবিরাজি চিকিৎসা করে ভালো না হওয়ায় ভিকটিমের বাবা জানতে পারে যে, অভিযুক্ত মোঃ ফজলুর রহমান রফিকুল ইসলাম দীর্ঘ দিন যাবৎ ঝাড়ফুঁক ও পানিপরা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিমের বাবা ভিকটিমকে এর আগে ২ থেকে ৩ বার ধর্ষক ফজলুর রহমানের কাছে ঝাড়পুক পরিয়ে নেয়। তারপরও তেমন উপকার না হওয়ায় ধর্ষক ফজলুর রহমান ভিকটিমের বাসায় গিয়ে ‘বাড়ী বন্দি’ নামক চিকিৎসা করে আসে।
ঘটনার আগের দিন মাগরিবের সময় ভিকটিমের বাবা ধর্ষক ফজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে মেয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে আসতে চাইলে সে পরের দিন ফজরের আযানের সাথে সাথে মসজিদে আসতে বলে। কথা অনুযায়ী পরের দিন সকালে ভিকটিমের বাবা মেয়ে শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে চলে আসে। ফজরের নামাজের পর ধর্ষক শিশুটি তার বাবাকে নিয়ে মসজিদের ৩য় তলায় ইমামের বেড রুমে নিয়ে যায়। এরপর হালকা ঝাড়ফুঁক করে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বাবাকে ভোর ৫টার দিকে এক প্যাকেট আগরবাতি ও একটি মোমবাতি আনার জন্য বাহিরে পাঠিয়ে দেয়। ওই সময় দোকানপাট খোলা না থাকায় শিশুটির বাবা কোনো ভাবেই মোমবাতি ও আগরবাতি কিনতে পারছিলেন না। এরমধ্যে সময় ক্ষেপন করার জন্য ধর্ষক ফজলুর রহমান শিশুটির বাবাকে ফোন করে একটি পান আনতে বলে ও মসজিদের মোয়াজ্জিনকে ফোন করে নিচের গেটে তালা মারতে বলে। ভিকটিমের বাবা ফিরে আসতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নেয়। এর মাঝে শিশুটির দুই হাত পিছনে বেধে ও মুখে টেপ মেরে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যতন করে তার কাম লিপ্সা চরিতার্থ হাসিল করে এবং প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য মসজিদের ছাদে নিয়ে শিশুটিকে পানি দিয়ে পরিস্কার করে দেয়। এরপরে শিশুটির গলায় ছুরি ধরে তার বাবা মাকে না বলার হুমকি দেয় এবং বললে জবাই করে ফেলবে বলে হুশিয়ার করে। শিশুটি অসুস্থ হয়ে গেলে তাড়াহুড়া করে তার বাবাকে বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেয়। এর পরে শিশুটি বাসায় গিয়ে তার বাবা মাকে সবকিছু খুলে বললে এবং ধীরে ধীরে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়া শুরু করলে ভুক্তভোগী পরিবারটি শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে এসে বিচার দিলে মসজিদ কমিটির কিছু সংখ্যক লোক ও আশেপাশের ধর্ষকের কিছু ভক্ত মিলে সেখানেও শিশু ও পরিবারটিকে মারাত্মকভাবে হেনস্থা করে।
ধর্ষক ফজলুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যে, ভুক্তভোগী পরিবারটি যেন থানা বা হাসপাপতালে যেতে না পারে। এরপর শিশুটির অবস্থা আরো খারাপ হলে শিশুটিকে নিয়ে শিশুটির পরিবারটি নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চুপচাপ ভর্তি করে। ধর্ষক ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে হত্যা ও অপহরণ করার উদ্দেশ্যে কয়েক দফায় চেষ্টা চালায়। হাসপাতালের ধর্ষকের অনুসারীরা হাসপাতালের এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে রেখে শিশুটির বাবা মাকে দীর্ঘসময় ধরে হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে এরই এক পর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের নার্স এর বোরকা পড়ে র্যাব অফিসে এসে অভিযোগ দেয়।
Discussion about this post