স্টাফ রিপোর্টার :
প্রবাদে আছে, “কারো ঘর পুড়ে আর কেউ মজা করতে সেই ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়া দেয়।”
এমন প্রবাদের সত্যতা পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জের নিষিদ্ধ পলিথিন করবারীদের ক্ষেত্রে । ২১ ফেব্রুয়ারী রাতে পুরান ঢাকার চুরিহাট্টার ওয়াহিদ ম্যানসনের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সর্বত্র যখন তোলপাড় আর সেই সময় পুরাণ ঢাকার পাইকারী অসংখ্য পলিথিন ব্যবসায়ীরা যখন তোপের মুখে তখন নারায়ণগঞ্জের অসাধু পলিথিন ব্যবসায়ী বাবুল, সাগর ও রুবেল চক্র মিলিতভাবে কোটি কোটি টাকার নিষিদ্ধ পলিথিন গুদামজাত করেছে।
কোটি কোটি টাকার এমন নিষিদ্ধ পলিথিন নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি গুদামে মজুদ রাখা হলেও প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তারা এমন ঘৃন্য ব্যবসা থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করায় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো সতর্ক থেকে অবৈধ মালামাল গুদামজাত করতে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে বলে ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের এক কর্মচারী জানান, প্রতিটি সরকারী দপ্তরে অলিখিত একজন করে ক্যাশিয়ার থাকেন । যিনি সরকারী দপ্তরের কর্তা ব্যক্তির বিশ্বস্থ হন তাকেই এই ক্যাশিয়ারের কাজটি দিয়ে থাকেন স্ব স্ব দপ্তরের কর্তারা ।
এমনই নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দুইজন ক্যাশিয়ার খ্যাত কর্মচারী নিষিদ্ধ পলিথিন ছাড়াও জেলার সকল অবৈধ ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত যোগায়োগ রেখে নানাভাবে পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেয় কি করে, কোথায়, কিভাবে অবৈধ ব্যবসা চালাতে হবে !
২২ফেব্রুয়ারী রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হলো প্রায় ৭০/৭৫ জন । এই সময় নারায়ণগঞ্জের নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম বাবুল, সাগর ও রুবেলসহ আরো কয়েকজনের কাছে ফোন আসে পুরান ঢাকা থেকে । “পলিথিনের মজুদ রাখা যাচ্ছে না, বিশাল মজুদ রয়েছে পুরান ঢাকায়, যতটুকু পারেন নিয়ে যান, দরদাম পরে করা যাবে, প্রশাসন অনেকে ঝামেলা করতেছে । যে কোন ভাবেই পুরান ঢাকার সকল গুদাম খালী রাখতে হবে। নইলে মামলাসহ নানা ঝক্কি ঝামেলায় পোহাতে হবে ।”
এখন খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসার গডফাদার বাবুল ও তার মেয়ের জামাই রুবেল এবং এই ব্যবসার ক্যাশিয়ার সাগর (যিনি প্রত্যেক পলিথিনের দোকান থেকে নিয়মিত আইনশৃংখলা বাহিনীর নামে বিশাল চাঁদা আদায় করে দপ্তরে দপ্তরে বন্টন করেন) মিলিত হয়ে পুরান ঢাকা তেকে কোটি কোটি টাকার নিষিদ্ধ পলিথিন নাারয়ণগঞ্জে এনে গুদামজাত শুরু করে । একই সাথে পুরান ঢাকায় কোন পলিথিন না থাকায় চড়ামূল্যে শুরু করে নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি ।
গত এক সপ্তাহে পুরান ঢাকায় কোন নিষিদ্ধ পলিথিন না থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে হুমরি খেয়ে পরে নিষিদ্ধ পলিথিন কারবারীরা। ফলে নারায়ণগঞ্জে চড়ামূল্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন।
নিষিদ্ধ পলিথিনের এক পাইকারী ক্রেতা কুমিল্লা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেল গেইট এলাকার বাবুল ট্রেডার্সসহ অন্যান্য দোকানে ঘুরে আপেক্ষ নিয়ে বলেন, “কারো ঘর পুড়ে আর কেউ আলু পোড়া দেয়।”
অনুসন্ধানকালে আরো জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র ২ নং রেল গেইট এলাকর নিষিদ্ধ পলিথিনের মূল গডফাদার বাবুল ষ্টোর, জালাল এন্টারপ্রাইজ, সাগরের মালিকানানধীন আজমীরী এন্টারপ্রাইজ, সাকিল এন্টারপ্রাইজসহ শহরের দিগু বাবুর বাজারের অঞ্জন, সিদ্ধিকসহ চারটি নিষিদ্ধ দোকান, খানপুরের বৌ বাজারের পলিথিনের কারখানার মালিক সবুজের কারখানা, গোডাউন ও দোকান, নয়ামাটির শ্যামা সুন্দর সাহার গোডাউন, দোকান ও কারখানা, টানবাজারের রাজিব কারখানা ও গোডাউনে, লিটনের কারকানা ও গোডাউনে, এক্সপোর্ট ব্যবসায়ী বাদল সাহা অবৈধ কারখানা এবং গোডাউনে, জে জে পলি ফ্যাক্টরীর লোকমানের কারখানা ও গোডাউনে, সদর উপজেলার নাগবাড়ী এলাকার কারখানা সংলগ্ন বিশাল গোডাউনে, জালকুড়ি, জামতলা ও বন্দরের একাধিক গোডাউনে কোটি কোটি টাকার নিষিদ্ধ পলিথিনের মজুদ করেছে চিহ্নিত এই অপরাধীরা ।
Discussion about this post