এনএনইউ ডেক্স :
অত্যান্ত পরিকল্পিতভাবে কোমল পানীয় এর সাথে ঘুমের টেবলেট মিশিয়ে ইমাম দিদারুল ইসলামকে খাওয়ানোর পর মধ্যরাতে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যাকান্ড নিশিচত করে ঘাতক বন্ধু ঈমাম ওহিদুর জামান নিজেই মসজিদের ওজুখানায় ঘোসল করে রক্তমাখা লুঙ্গি পাশের ডোবায় ফেলে ভোরেই পালিয়ে যায় ।
ফজরের আযান শুনতে না পেয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদের ইমামের কক্ষে এসে ডাকাডাকি শুরু করে। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে টর্চের আলো ছড়িয়ে দেখতে পান, ঘরের মধ্যে চকির উপর ইমামের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে তার পাশেই তার বিচ্ছিন্ন মাথা। এরপর তোলপাড়ের সৃষ্টি হলে পুলিশ এসে ঈমাম দিদারুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাটায় । অপরদিকে পুলিশ শুরু করে দ্রুত গতিতে তদন্ত ।
পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ঘটনাটিকে অত্যন্তগূরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করেন মামলার অগ্রগতি ।
এমন ক্লুলেস ওই হত্যাকান্ড নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় পরে পুলিশ। পরবর্তীতে নানা ভাবে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যার নেপথ্যে জড়িত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় পুলিশ । তারা জানতে পারেন এই হত্যায় ইমামের বন্ধু আরেক ইমাম জড়িত। এরপরই আসামীর অবস্থান ও তাকে গ্রেফতার করতে বেশ সতর্কতার সাথে মাদারীপুরের শিবচরে অভিযান চালায় সোনারগাঁ থানা পুলিশ । সেখান থেকে আটক করে ঘাতক ওয়াহিদুজ্জামানকে। তিনি শিবচর এলাকার একটি মসজিদের ইমাম । এবং খুলনার নড়াইল জেলার কলাবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক টুকু শেখের ছেলে।
নিহত ইমাম দিদারুল ইসলাম নড়াইলের কালিয়া উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আফতাব ফরাজীর ছেলে। গত ২৬ জুলাই তিনি সোনারগাঁ উপজেলার মল্লিকপাড়া গ্রামের নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। ২২ আগস্ট দিদারুল ইসলামকে জবাই করে হত্যা করা হয়।
নির্মম এই হত্যাকান্ডের বিস্তারিত জানাতে বুধবার ২৮ আগষ্ট বিকেল তিনটার দিকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ।
পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, খুনের শিকার ইমাম দিদারুল ইসলাম এবং ঘাতক ইমাম ওয়াহিদুজ্জামান একে অপরের বন্ধু। এই সুবাদে দিদারুলের কাছে থেকে স্বর্ণের বার কেনার কথা বলে কয়েক দফায় লক্ষাধিক টাকা নেয় ওহিদুর। পরবর্তীতে এই টাকা নিয়ে দুজনের সাথে কিছুটা মতানৈক্য ঘটে। টাকা ফেরৎ চায় দিদারুল । চাপে পড়ে যান ঘাতক ওয়াহিদ। ফলে টাকা যাতে ফেরৎ দিতে না হয় সে লক্ষ্যে দিদারকে খুনের পরিকল্পনা করে ওয়াহিদ।
তিনি জানান, খুনের পরিকল্পনা মোতাবেক ২০ আগস্ট দিদারুলের সাথে দেখা করে পরদিন ২১ আগস্ট এশার পর পাওনা টাকা ফেরৎ দেওয়ার কথা জানায়। করার জন্য সোনারগাঁয়ের মল্লিকপাড়া মসজিদে আসেন ওয়াহিদ। সে মোতাবেক এদিন ওয়াহিদ আবারও আসে দিদারের মসজিদে। এর আগে তিনি খুনের পরিকল্পনা মোতাবেক শিবচর থেকে চাপাতি এবং সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড় থেকে ঘুমের ওষুধ ও কোকাকোলা কিনে নেয়।
পুলিশ সুপার বলেন, রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেন ইমাম দিদারুল। এসময় ঘুমে ওষুধ মিশ্রিত কোকাকোলা দিদারকে পান করালে সে অচেতন হয়ে বিছানায় ঢলে পড়েন। পরে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক চাপাতি দিয়ে দিদারের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে নৃশংস ভাবে হত্যা সম্পন্ন করেন শিবচর মসজিদের ইমাম ওহিদুর জামান।
এমন নির্মম ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা আজান সংবাদ সম্মেলন শেষে আলাচনার এক পর্যায়ে বলেন, ওহিদুরের কাছে টাকার দেয়ার চাপ দিয়ে দিদারুল ক্ষোভের সাথে জানায় টাকা দিতে না পারলে তোর মাকে (…..গালি……….) দেয়ার পর পরিকল্পনা করে এমন নির্মম হত্যাকান্ডের । পরিকল্পনা মতে হত্যাকান্ড চালিয়ে একটি চিঠি লিখে যায় যাতে লেখা ছিলো ইমাম হত্যাকোন্ডে দায়ী হিজবুল তাওহিদ ।
Discussion about this post