আর কি দেখার বাকি আছে ! কুখ্যাত অপরাধী হয়ে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানববন্ধনের চিত্র দেখতে হলো ! আশ্চর্য না হয়ে আর উপায় কি ? যে শহরে পুলিশ পিটিয়ে শাসক দলের শীর্ষ নেতার আত্মীয়ের শেল্টারে বীরদর্পে শহরে মাদকের পাইকারী ব্যবসা করে সালাউদ্দিন বিটু। বিটু প্রকাশ্যেই বলে বেড়ায় পুলিশ পিটিয়ে ফের পুলিশের ওসিকে টাকা দিলেই তো সব শেষ । আর সাংবাদিকদের টাকা দিকেই তো হয় । নিয়মিত মাসোহারা নেয় পুলিশ আর সাংবাদিকেরা । তাই ব্যবসা করতে আর বাধা দিবে কে ? এলাকার মানুষ যদি মুখ খুলে তাইলে আমার ৫০/৬০ জন পোলাপাইন কি করবো !
একদিকে প্রকাশে এমন হুংকার আর অপরদিকে মাদক ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন প্রমাণ করে প্রশাসনের পেশাদারিত্ব কি অবস্থায় উপনীত হয়েছে তা সহজেই অনুমান করা যায় ।
বুধবার বিকেলে চাষাড়ায় মাদক ব্যবসায়ীর মানববন্ধন করার দৃশ্য দেখে উল্লেখিত মন্তব্য করেন শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকার একজন প্রবীণ পাইকারী ভূষামাল ব্যবসায়ী ।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের মাদক বিরোধী ধারাবাহিক অভিযানকে থামিয়ে দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
মাদকসহ ধৃত মাদক ব্যবসায়ী শাহাজানের স্ত্রী আসমার নেতৃত্বে কুট-কৌশলের অংশ হিসেবে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হয়েছে।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, গত ২০ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে মোঃ মশিউর রহমান নিয়োগ পান ।
থানায় যোগদানের পর থেকে থানা এলাকা মাদক মুক্ত করতে থানার বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যাবসায়ী গ্রেফতারও করা হয়েছে।
এ মাদক বিরোধী অভিযানকে ব্যাহত করতে উঠে-পরে লেগেছে মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের গডফাদাররা। এর অংশ হিসাবে গতকাল বুধবার বিকেল ৪’টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এক মাদক ব্যসায়ীর স্ত্রী নিজেকে গার্মেন্টস কর্মি পরিচয়ে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে।
মাদক ব্যবসায়ী শাজাহানের স্ত্রী মানববন্ধনের নেতৃত্ব দানকারী আছমা বেগমের সন্তান অনিক শিমরাইল এলাকার আলোচিত মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে শুভ হত্যার এজহারনামীয় আসামী। এ আসমার স্বামী শাহাজান মাদকসহ কয়েকদিন পূর্বে থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। কথায় বলে চোরের মায়ের বড় গলা।
স্বামীর পরিচয় গোপন রেখে নিজেকে গামেন্টর্সকর্মী পরিচয় দিয়ে থানা পুলিশের সম্বান হানী করার পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে থানা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের গডফাদাররা।
বিশেষ করে শিমরাইল এলাকার মরহুম রেজা মেম্বারের ছেলে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সুমি বেগমের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মাদক ব্যবসায়ীরা এক জোট হয়ে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে নেমেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে মাদক ব্যবসায়ী শাহাজানোর ন্ত্রী আসমা বেগম বলেন, পুলিশ তার ঘরের তালা ভেঙ্গে মালামাল ক্ষয়-ক্ষতিসহ নগদ ৫০হাজার টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণলংকার নিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক ব্যবসায়ী শাহাজানের বাড়ীতে অভিযান চালানো হয়। ঘরের দরজা খোলা ছিল। টাকা ও স্বর্ণলংকার কিছুই পাওয়া যায়নি। উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের সামনে এ অভিযান পরিচালোনা করা হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান বলেন, আসমাসহ তার পুরো পরিবার মাদক ব্যবসার সাথে জরিত। পুলিশের অভিযান টের পেয়ে আসমা পালিয়ে যায়। তার ঘরের মধ্যে মাদক আছে মর্মে গোপন সংবাদে জানতে পারি।
তাকে না পেয়ে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে ঘরে তল্লাসী চালিয়ে মাদক না পেয়ে আমরা ফিরে আসি। অভিযানে আমি নিজেই উপস্থিত ছিলাম।
চাষাড়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের এমন মানববন্ধনের চিত্র দেখে প্রবীণ এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে তার নাম প্রকাশ না করার বিশেষ অনুরোধে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, এখন হলে আজব কাল, বাঘে চাটে বিড়ালের গাল । শহরের নিতাইগঞ্জ থেকে পুরো শহরের মাদকের ব্যবসা চালায় সালাউদ্দিন বিটু। বিটুরে একবার পুলিশ আটক করলে নিম্নে ৫ লাখ টাকা ঘুষ পায় । বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জ ডিবির ওসি মাহবুবুর রহমান কুক্ষাত মাদক ব্যবসায়ী বিটুকে সাড়ে তিনশো পিছ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করলো । পরদিন এই বিটুকে পুলিশ আইনের ৩৪ ধারায় আদালতে পাঠায় । ঠিক তেমনি গত বছর পুলিশ পিটিয়ে সালাউদ্দিন বিটু পালিয়ে যায় ভারতে । দীর্ঘদিন ভারতের কলকাতায় বসে নারায়ণগঞ্জের মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে বিটু ।
পরবর্তীতে সদ্য বিদায়ী নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান কে মোটা অংকের মাসোহারার চুক্তি ও প্রভাবশালী নেতার বিয়াই পরিচয় দিয়ে ব্যপক তদ্বির চালিয়ে মাদক ব্যবসার গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে বিটু হয়ে উঠে শহরবাসীর আতংকের আরেক নাম ।
উল্লেখ্য, মাদক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বিটুর পক্ষে সাফাই গাইতে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর কাছে একজন সংসদ সদস্যের পিএস পরিচয় দানকারী, অপর একজন সংসদ সদস্যের বিয়াই পরিচয় দানকারী, কয়েকজন বিশেষ পেশার নামধারী, কয়েকজন রাজনীতিবিদ জোড়ালোভাবে তদ্বির চালায় এবং অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয় ।
Discussion about this post