‘এমন দূর্ঘটনার নেপথ্যে কোন পরিকল্পিত নাশকতা রয়েছে কিনা তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ । কারন ডিপো ঘিরে ভিতরে ও বাহিরে অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক বিশাল শক্ত চোরাকারবারি চক্র সক্রিয় রয়েছে মারাত্মকভাবে । ওই চক্রের কোন নাশকতা থাকতে পারে’
ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী ট্রলারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ফখরুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাতে নদীতে তল্লাশি চালিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে পাগলা নৌ থানা পুলিশ।
এ নিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুইজনে। তবে এ ঘটনায় এখন আর কেউ নিখোঁজ নেই।
শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুরে লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাগলা নৌ থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) ইয়ার আলী।
এর আগে বুধবার (২৬ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এমভি মনপুরা নামে জ্বালানি তেলবাহী ট্রলারটিতে থাকা পাঁচজনের মধ্যে দগ্ধ হয়ে খোকন নামে একজনের মৃত্যু হয়। কামাল নামে আরও একজন দগ্ধ অবস্থায় এবং বাকের মাঝি নামে ট্রলারের চালককে সুস্থ উদ্ধার করা হয়। পরে দগ্ধ কামালকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
তবে এ ঘটনায় বাবুল মোল্লা ও ফখরুদ্দিন নামে দুইজন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হন।
পরে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নিখোঁজ বাবুল মোল্লাকে পাওয়া গেলে তাকে জেলা সদরের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়। ওই রাতেই স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। এরপরও ফখরুদ্দিন নামে একজন ব্যক্তি নিখোঁজ ছিলেন।
পাগলা নৌ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইয়ার আলী বলেন, বৃহস্পতিবার নিখোঁজ একজন ব্যক্তির সন্ধানে বুড়িগঙ্গা নদীতে তল্লাশি চলাকালে রাত দশটার দিকে দুর্ঘটনাস্থল সংলগ্ন ফতুল্লা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করি। খবর পেয়ে স্বজনরা এসে ফখরুদ্দিনের লাশ বলে শনাক্ত করেন। তবে স্বজনরা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের আবেদন জানালে সবার সম্মতিতে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে পাগলা নৌ থানার ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) কামাল হোসেন বলেন, ফখরুদ্দিন নামে উদ্ধারকৃত মরদেহের বিভিন্ন স্থানে আগুনে পোড়া চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার পেট থেকে নাড়িভুঁড়িও বের হয়ে ছিল। তবে মুখমণ্ডল ছিল অক্ষত অবস্থায়।
এর আগে ২৬ জুন (বুধবার) জেলা সদরের ফতুল্লা থানার পঞ্চবটি এলাকায় মেঘনা অয়েল ডিপো থেকে তিন হাজার লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে ট্রলারটি বরিশালের ভোলা থানার মনপুরা এলাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুপুরে জেটি থেকে ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। ট্রলারটির চালক বাকের মাঝি ইঞ্জিন চালু করার সঙ্গে সঙ্গে একটি তেলের ড্রাম বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। এরপর একে একে বিকট শব্দে সবগুলো ড্রাম বিস্ফোরণ হলে পুরো ট্রলারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তেলের ড্রামগুলো বিস্ফোরণের বিকট শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠলে ডিপোর কর্মকর্তা কর্মচারীসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ট্রলারটিতে ৮৬টি পেট্রোল ও ৭০টি ডিজেল ভর্তি ড্রাম ছিল বলে জানায় ডিপো কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ট্রলারের চালক বাকের মাঝি বাদী হয়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাগলা নৌ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইয়ার আলী।
এমন ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও ডিপো সংলগ্ন এলাকায় অনেকের অভিযোগ, এমন দূর্ঘটনার নেপথ্যে কোন পরিকল্পিত নাশকতা রয়েছে কিনা তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ । কারন ডিপো ঘিরে ভিতরে ও বাহিরে অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক বিশাল শক্ত চোরাকারবারি চক্র সক্রিয় রয়েছে মারাত্মকভাবে । ওই চক্রের কোন নাশকতা থাকতে পারে বলেও ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে ফতুল্লাজুড়ে।
Discussion about this post