ভোগান্তি যেন সর্বত্র । কোথায় নেই এমন দুর্ভোগ। ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে নানাভাবে উর্ধতন কর্তাদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন অবস্থাতেই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার সু খবর খুব একটা দেখা যায় নাই। আর এমন অবিরাম ভোগান্তির শিকার অনেকেই বলেছেন, ‘যে লাউ সেই কদু। অভিযোগ দিয়ে ও কোন সমাধান কি আজো হয়েছে !“
এমন ভোগান্তির খবর নারাযণগঞ্জের প্রতিটি ভূমি অফিসের। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাদের মধ্যে সকলেই এমন ভোগান্তি সৃষ্টি না করলেও ভূমি কার্যালয়ের ভোগান্তি ভূক্তভোগি ছাড়া আর কেউ অনুধাবন ই করতে পারেন না। এবার সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন না করায় প্রতিনিয়তই ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাপ্রার্থীরা। গত দুই মাসে একটিও নামজারির ডিসিআর হয়নি বলে জানিয়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
অনলাইনে নামজারির আবেদন করলে সেই আবেদনের সিরিয়াল নম্বর ছাড়া কোনো কাজ তিনি করেননি। ফলে জমি রেজিস্ট্রি, বিয়ে, বিদেশ গমন থেকে শুরু করে আর্থিক জরুরি কোনো কাজ করতে না পারায় সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে গত ১৮ এপ্রিল যোগদান করেন সৈয়দা সালেহা নূর। তিনি যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অফিসের বাইরে ছিলেন। অফিসে এলেও তেমন কোনো কাজই করেননি তিনি। ফলে সেবাপ্রার্থীরা দিনের পর দিন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তার দপ্তরের ফাইল অনলাইন ও অফলাইনের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে তাঁর আইডিতে এসে আটকে থাকে। নামজারি, মিসকেস মামলা, মামলার শুনানি, হাট-বাজার বন্দোবস্ত, খতিয়ানের ভুল সংশোধন, হাট-বাজারের চান্দিনা ভিটির লাইসেন্স নবায়ন, ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণী আপত্তি নিষ্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তির লিজ নবায়নসহ অন্যান্য কাজ না করায় বিভিন্ন সময় ফিরে যাচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি কর্তকর্তারাও এজন্য ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভূমি কর্মকর্তা।
গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সামনে গেলে ১০-১২ জনের জটলা দেখা যায়। তারা এসিল্যান্ডের গাফিলতির কথা তুলে ধরেন।
শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ছোট কাজিরগাঁও গ্রামের আবুল কাশেম নামের একজন সেবাপ্রার্থী বলেন, এই এসিল্যান্ড আসার পর থেকে তাদের ভোগান্তি বেড়েছে। তিনি একটি নামজারিও সম্পূর্ণ করে ডিসিআর (সরকারি পাওনা আদায় রসিদ) দিতে পারেননি। এতে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বারদী ইউনিয়নের আলমদী এলাকার কাউসার আলম নামের আরেকজন সেবাপ্রার্থী বলেন, এসিল্যান্ড কোনো কাজ করছেন না। এসিল্যান্ড কাজ না করায় বিভিন্ন দপ্তরে টাকা দিয়েও নামজারি শেষ করতে পারছেন না। জমি বিক্রি করে তিনি কুয়েত যাবেন। কিন্তু নামজারি না হওয়ায় জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে পারছেন না।
সোনারগাঁ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার বলেন, উচ্চমূল্যের রেজিস্ট্রি ফির কারণে দলিল রেজিস্ট্রি কমে গেছে। এসিল্যান্ড নামজারি না করায় এখন আর তেমন দলিল রেজিস্ট্রি হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের একজন কর্মচারী জানান, এসিল্যান্ড ভূমির কাজ না বোঝার কারণে কাজ করছেন না। প্রায় তিন হাজারের বেশি নামজারির ফাইল আটকা পড়ে রয়েছে। এগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দা সালেহা নূরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে গত দু’দিন ধরে ভূমি কার্যালয়ে ব্যবহৃত তাঁর সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার বেলা ৩টা থেকে ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত থেকেও তাঁর দেখা মেলেনি।
সোনারগাঁর ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, এসিল্যান্ড দু’দিনের ছুটিতে আছেন। ভোগান্তির বিষয়টি অনেকে বলেছেন। ঈদের এক সপ্তাহ পর থেকে ভূমি সেবা স্বাভাবিক হবে।
Discussion about this post