জনমানুষের নেতা ও সকলের প্রিয়ভাজন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অপ্রতিরোধ্য মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর জন্মদিন আজ (৬জুন)।
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ১৯৬৬ সালের ৬ জুন নারায়ণগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। মাতা-মমতাজ বেগম ও পিতা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা।
বৃহস্পতিবার ৫৮ এ পা দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ আইভী ।
চুনকা পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ডা. আইভী সবার বড়। প্রেস নারায়ণগঞ্জ পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের প্রথম নারী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর দীর্ঘায়ু ও শুভ জন্মদিনে শুভ কামনা রইলো।
আইভী দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলে ভর্তি হন এবং ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। অতঃপর তিনি মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান এবং ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ উত্তীর্ণ হন।
এরপর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসনার অনুপ্রেরনা ও সহযোগিতায় সেলিনা আইভী ১৯৮৫ সালে রাশিয়ান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষাগ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোব মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সাথে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেন। ডা. আইভী তাঁর সুদীর্ঘ শিক্ষা জীবনের পর ১৯৯৩-৯৪ সালে মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। ডা. আইভী ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাজবাড়ী নিবাসী কাজী আহসান হায়াৎ-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী কাজী আহসান হায়াৎ বর্তমানে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে নিউজিল্যান্ডে কমর্রত আছেন। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জননী। কাজী সাদমান হায়াত সীমান্ত ও কাজী সারদিল হায়াত অনন্ত।
তিনি ১৯৯৫ সাল হতে নিউজিল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি সায়েন্সে অধ্যয়ন করেন। অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসেন। তিনি অধ্যয়নকালীন সময়ে ও প্রবাস জীবনের ফাঁকে ফাঁকে ছুটে এসেছেন জন্মভূমিতে। এছাড়া তিনি গরীব ও দুঃখী লোকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং আর্থিকভাবে সাহায্য করেন। তাঁর এই কর্মকান্ডে পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকার দানশীলতা, মানবপ্রেম ও একই সাথে মানব সেবার প্রতিফলন ঘটে।
ডা. আইভী তাঁর শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে পরিভ্রমণ করেছেন, যেমন- জার্মান, হল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইতালি, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল ও ভারত। ১৯৮৬ সালে আইভী বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওদেসা নগরের পিরাগভ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে। আলী আহাম্মদ চুনকার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় হলেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। আইভী স্কুল ও কলেজ জীবন হতে বাবার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের মাত্র ১৭দিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে তাকে দেশে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তাকে শহর আওয়ামীলীগের সব-সভাপতি করা হয়। এরপ ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভী বিপুল ভোটে জয়ী হন। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি করা হয় তাকে। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিপুল ভোটে তৃতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন অপ্রতিরোধ্য আইভী। বর্তমানে তাঁকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়া হয়েছে।
এশিয়ার প্রভাবশালী নারী মেয়রদের তালিকায় তার নাম এসেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য এশিয়ানে এশিয়ার ২০ নারী মেয়রের নাম প্রকাশ করে, যে তালিকায় আইভি আছেন সাত-এ।
Discussion about this post