নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। তারা হলেন- মো. আব্দুল্লাহ (২৪) ও তার সহযোগী মো. মতিন (৩৫), চাঁন মিয়া (২৮) ও মো. আয়নাল (২৫)।
এ সময় উদ্ধার করা হয় ভুক্তভোগীর মোবাইলসহ একটি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান, একটি শাবল, একটি দা, দুটি রামদা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সিএনজি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা ধর্ষণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
র্যাব জানায়, গ্রেফতাররা ঘরের ভেতর মূল্যবান জিনিসপত্র না পেয়ে ক্ষোভে ভুক্তভোগী কিশোরীর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাদের বাড়ির পাশে একটি ফাঁকা ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে গ্রেফতাররা ভুক্তভোগী কিশোরীর মুখ ওড়না দিয়ে পেচিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর ফেলে গ্রেফতাররা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনা সম্পর্কে কাউকে জানালে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় ডাকাতরা।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব।
সোমবার (২০ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
তিনি বলেন, গ্রেফতাররা সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র এবং চক্রের মূলহোতা আব্দুল্লাহ। চক্রে ১০/১২ জন সদস্য রয়েছে। গ্রেফতার আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে তারা ১/২ বছর ধরে নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল। গ্রেফতাররা গত ১৫ মে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ভুক্তভোগীর বাড়িতে যায়। সে সময় গ্রেফতার আব্দুল্লাহ ও গ্রেফতার মতিন ঘরের জানালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
এ সময় ভুক্তভোগী ও তার মায়ের ঘুম ভেঙে গেলে তারা ভয়ে চিৎকার করলে গ্রেফতাররা তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। পরে গ্রেফতাররা ঘরের দরজা খুলে দিলে চাঁন মিয়া ও আয়নালসহ অন্যান্য সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্রসহ ঘরে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীর মাসহ ঘরে উপস্থিত সবার হাত, পা ও মুখ বেঁধে ফেলে।
ভুক্তভোগী এ ঘটনায় মামলা দায়ের করলে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে।
কমান্ডার আরাফাত বলেন, আব্দুল্লাহ এই ডাকাত চক্রের মূলহোতা। সে আগে একটি স্পিনিং মিলে চাকরির সময় থেকে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ডাকাত চক্রটি গড়ে তোলে। সে ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জের ভূলতা-গাউসিয়া এলাকার বাসের হেলপার ও রিকশা চালাত।
এছাড়াও সে তার সিএনজি দিয়ে ডাকাতির আগে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যেত এবং ডাকাতি শেষে চক্রের সদস্যদের সুবিধাজনক স্থানে দ্রুত পৌঁছে দিত। তার বিরুদ্ধে নরসিংদীর মাধবদী থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার চাঁন মিয়া ও আয়নাল ডাকাত চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে যথাক্রমে বাস ও সিএনজি চালাত।
তারা গ্রেফতার আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতো। চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও চুরি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছে। আয়নালের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ সংক্রান্ত একটি মামলা রয়েছে।
Discussion about this post