দুর্নীতি দমন কমিশন এখন দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দেওয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে । সরকার জনগণের ওপর নির্ভর করে না বলেই, জনগণের সমর্থন তাদের প্রয়োজন নেই। জনগণকে ছাড়া সরকারের টিকে থাকতে প্রয়োজন হয় মাফিয়াদের। তাই মাফিয়াদের ওপরই সরকার নির্ভর করে। পাশাপাশি বিদেশি প্রভুদেরও খুশি করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। গণতন্ত্রের সরকার এখন রাজতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। আর গণতন্ত্র হয়েছে স্বৈরতন্ত্র। বাংলাদেশ আজ পাকিস্তান স্টাইলে চলছে। এ জন্যই বাংলাদেশ এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের অস্তিত্ব আরও ভয়াবহ বিপদে রয়েছে।’
মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার দশ বছর পূর্তিতে আয়োজিত সমাবেশে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ করেছেন এমন মন্তব্য ।
‘ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না দশ বছর। সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না এগারো বছর। তনু ধর্ষণ ও হত্যার বিচার হচ্ছে না সাত বছর। খুনিরা শক্তিশালী ও সরকারঘনিষ্ঠ হলে তার বিচার হয় না। দেশের মানুষ এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে কী মনে করছে তাতে সরকারের কিছু আসে যায় না।’ এমন বক্তব্যও প্রদান করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকেলে শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘এই দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডসহ মাফিয়াদের আক্রমনে অনেকে নিহত হয়েছেন। অনেক জায়গায় আন্দোলন নানা কারণে ধরে রাখা যায়নি। কিন্তু এই নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ত্বকী হত্যার আন্দোলন এখন পর্যন্ত চলমান। এই হত্যাকান্ডে জড়িতরা শাস্তির মুখোমুখি হয়নি বরং আন্দোলনকারীদের অব্যাহত হুমকি দিচ্ছে। হুমকি দিলেও তারা জানে, যেকোন দিন তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এই আতঙ্কে তারা সবসময় থাকে। ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি অব্যাহত আন্দোলন খুনিদের ব্যাপারে মানুষকে বারবার মনে করিয়ে দেয়। ত্বকীকে কারা খুন করেছে তা মানুষের স্মৃতিতে গেঁথে গেছে।’
সরকার জনগণের বাইরে গিয়ে সন্ত্রাস, দখলদার, টেন্ডারবাজদের উপর ভরসা করে টিকে আছে বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খুনিদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য রূপান্তরিত হয়েছে। কারণ সরকার জনগণের উপর নির্ভর করছে না। সরকারের নির্ভরতা সারাদেশের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাফিয়া, দখলবাজ, চাঁদাবাজের উপর। একইভাবে দেশের বাইরে তাদের আদানী, মোদি, চীন, রাশিয়াকে খুশি করতে হয়। তাদের শামীম ওসমানের মতো লোক দরকার। যারা শুধু খুন করে না, মানুষকে আতঙ্কিত করে রাখে।’
সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, ‘যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম করা হয়েছিল সেই পরিবেশ এখনও এদেশে তৈরি হয়নি। ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর বাবা-মা-ছোট ভাইসহ সকলকে হত্যা করা হয়েছিল। দেশে ফিরে তিনি এই হত্যাকান্ডের বিচার করলেন। প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, ছোট রাসেল হত্যার বিচার আপনি করলেন তাহলে ত্বকীর হত্যাকারীরা কেন ছাড় পাবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘ঐতিহাসিক শহর নারায়ণগঞ্জ যখন একটি পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে যায় তখন আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। একটি পরিবার চাইলে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে- এটা চলতে দেয়া যায়না। স্বৈরাচারী ব্যবস্থা আজীবন টিকে থাকে না। এর পতন হবেই।’
সমাবেশে মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ ওসমান পরিবারের কাছে জিম্মি। আমরা কোনো মাস্তানের রাজত্ব চাই না। আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে এগারোজন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে বলে র্যাবের খসড়া চার্জশিটে এসেছে। আজমেরী ওসমানসহ ত্বকীর খুনিদের বিচার করতে হবে। এই বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না।’
ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘আড়াইমাসের মধ্যে কে, কোথায়, কীভাবে ত্বকীকে হত্যা করেছে তা উদঘাটন করে পুলিশ। পরে র্যাব তৈরি করে রাখা অভিযোগপত্র আর দাখিল করেনি। র্যাব জানিয়েছিল, ত্বকীকে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেল উইনার ফ্যাশনে রাত নয়টায় নেওয়া হয়। কিন্তু ত্বকী অপহরণ হয় বিকেলে। বিকেল থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ত্বকী কোথায় ছিল সেই তদন্তও প্রয়োজন।’
‘১৬৪ ধারায় এক আসামি আজমেরী ওসমানসহ অন্যদের নাম প্রকাশ করে। কিন্তু আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করে তার জবানবন্দি নিয়ে এই হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসছি দশ বছর ধরে। এর কারণে অনেক হুমকি-আক্রমন এসেছে, কাজ হয়নি। আমরা নারায়ণগঞ্জকে খুনিদের আস্ফালন থেকে মুক্ত করবো।’
সমাবেশ শেষে চাষাঢ়া থেকে একটি মিছিল বের হয়ে শহরের দুই নম্বর রেলগেইট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, বাসদের আবু নাঈম খান বিপ্লব, গণসংহতি আন্দোলনের অঞ্জন দাস প্রমুখ।
Discussion about this post