শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখার চেষ্টা করে এবার নিজের অনিয়ম আর দুর্নীতি ঢাকতে চান নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান। যিনি নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ । ওই সম্পদ ও চাকরী রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠছেন তিনি। আরো ঢাকতে চান নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের যত অনিয়ম -দূর্ণীতি
তিনি আর কেউ না তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান। সাংবাদিক ম্যানেজ চেষ্টায় টাকার অফার, অফিসের সহকর্মী, কিছু নামধারী সাংবাদিক ও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যবহার করছেন। সাংবাদিক ম্যানেজ করতে গাজী মাহমুদুল হাসানের সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
গণমাধ্যমে ”নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে সাংবাদিকদের ঢুকতে মানা” শিরোনামে নিউজ করার থেকে আজ মঙ্গলবার ৩ টা পর্যন্ত ফোনে এবং হোয়ার্টআপসে বিভিন্ন অফারসহ তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এসব তদবির করা হচ্ছে কখনো অফিস সহকর্মীদের দিয়ে, আবার কখনো কখনো নামধারী সাংবাদিক দিয়ে, আরো আছে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা। কেউ কেউ সুপারিশ করছেন আজ পাসপোর্ট অফিসে দাওয়াত খাওয়ার, আবার কেউ কেউ সুপারিশ করছেন সাক্ষাত করার। আরো তদবির আছে নিউজটি অনলাইন থেকে রিমুভ করার।
এছাড়াও হোয়াটআপসে মাধ্যমে একজন সাংবাদিক আত্নীয় হয় মর্মে পরিচয় দিয়ে টাকার অফার করেছেন। গাজী মাহমুদুল হকের সকল অপচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
এবিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ) মোঃ খায়রুল কবীর মেনন গণমাধ্যমকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসের সাংবাদিকরা ডুকতে পারবে না এরকম কোনো “সরকারি নির্দেশনা নাই।
যিনি এসব নির্দেশনা দিচ্ছেন তার মনগড়া আদেশ। নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে যদি কোনো অনিয়ম হয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং সেই সঙ্গে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিষয়টি নজরের দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
পাসপোর্ট কার্যালয়ের অনেকেই জানান, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে নিজের ইচ্ছায় নতুন নিয়মে পাসপোর্ট অফিস পরিচালনা করছেন। আর তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সকল দালাল চক্র।
নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে সাংবাদিকদের ঢুকতে না দিয়ে লাঞ্ছিত ঘটনায় সাংবাদিকরা মনে করছেন, এই পাসপোর্ট অফিস ” যেনো সোনার খনি’। ঢুকলেই কেঁচো খুড়তে সাপ বের হয়ে আসবে।
টিআইবি’র সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক ) সহ-সভাপতি জানান, দেশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাাসপোর্ট অফিসে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করে দেয়া। গুরুত্বর রাষ্ট্রীয় অপরাধ। সেখানে সাংবাদিকদের ঢুকতে না কারণে হিসেবে দুর্নীতি আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তাই এখনি গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নারায়ণগঞ্জ এক প্রবীণ সাংবাদিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, গাজী মাহমুদুল হক দুর্নীতিতে কলাগাছ হয়ে । নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের মৌমাছির চাক পেয়েছেন। বসে বসে মধু খাচ্ছেন। নিজের দুর্নীতি এবং অনিয়ম ঢাকতে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয় না। সেখানে কর্মকর্তা আনসার কমান্ডারসহ আনসার সদস্যের প্রতি তার ব্যক্তিগত কঠোর নির্দেশ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার গণমাধ্যমের দুইজন প্রতিনিধি অফিসিয়ালি এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে একটি বিষয় অনুসন্ধানে গেলে তাদের গেটে আটকে দেয়া যায়। এসময় আনসার সদস্যরা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান নির্দেশে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে একাধিক বার ফোনে উপপরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান সঙ্গে ফোনে কথা বললেও তার ব্যক্তিগত আদেশেই অঢল থাকেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জের গাজীর টিভি প্রতিনিধি, যুগের চিন্তার প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ বার্তাসহ একাধিক সাংবাদিকদের ঢুকতে না দিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়।
এমন অসখ্য ঘটনার পর এবার নতুন করে উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। তিনি গণমাধ্যমে পাঠানো হয় প্রতিবাদ লিপি । যা প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টালে।
প্রকাশিত প্রতিবাদ লিপিতে ‘সাংবাদিক ম্যানেজ করতে গাজী মাহমুদুল হকের অপচেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে সাংবাদিকদের ঢুকতে মানা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের একাংশের প্রতিবাদ করেছেন নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান।
প্রতিবাদ লিপিতে তিনি বলেছেন, যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। পাসপোর্ট অফিসের সাংবাদিকদের ঢুকতে না দেয়ার আদেশ দেওয়ার আমার কোনই ক্ষমতা নেই। আমি এই নিউজের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, এ ঘটনার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের কিছু দালাল জড়িত রয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করা হয় এমন কোনো ঘটনা ঘটে নাই। তাছাড়া আমরা দালালমুক্ত পাসপোর্ট সার্ভিস দিতে সার্বাক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
এমন প্রতিবাদলিপি প্রকাশের পর স্থানীয় পর্যায়ের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পাসপোর্ট অফিসে কি ঘটে তা কে না জানেন ! র্যাব পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনী কয়েকদিন পর পর দালালদের আটক করে এগুলি কিসের আলামত। শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢেকে রাখা যায় না তেমনি পাসপোর্ট কার্যালয়ের দূর্ণীতি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে বা কাউকে ম্যানেজ করে ধামাচাপা দেয়া যায় না। এই কার্যালয়ে দূর্ণীতি চলছে, অবিরামভাবে এমন দূর্ণীতি চলবে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই। পাসপোর্ট অফিসের দূর্ণীতি বন্ধ করা যাবে না । যার প্রমাণ অসংখ্য রয়েছে। সবচাইতে জ্বলন্ত উদহারণ হচ্ছে সাম্প্রতিক দূদকের মামলা।”
Discussion about this post