শ্বশুড় বাড়ী থেকে মটরসাইকেল কিনে দিতে দেরী হওয়ায় রূপগঞ্জে স্ত্রী সুমি আক্তারকে হত্যার ৭ বছর পর ঘাতক স্বামী মো. জুয়েল মিয়া (২৮) নামের এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার জরিমানা করা হয়েছে। রোববার (৩০ জুন) বিকেলে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল এ রায় ঘোষণা করেন।
তথ্য সূত্রে প্রকাশ, রূপগঞ্জে দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন সুমি আক্তার নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যায় স্বামী জুয়েল মিয়া। পরবর্তীতে ঘাতক স্বামী মো. জুয়েল মিয়া (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গৃহবধূ সুমি আক্তার উপজেলার নগড়পাড়া এলাকার সিরাজ ভুইয়ার মেয়ে।
সুমি আক্তারের পিতা সিরাজ ভুইয়া জানান, তিনি একজন মাটি কাটার শ্রমিক। অতি কষ্টে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় মেয়ে সুমি আক্তারকে লেখাপড়া করিয়েছেন। ইছাখালী এলাকার মারফত আলীর ছেলে জুয়েল মিয়া অপহরণ করে নিয়ে সুমি আক্তারকে বিয়ে করে। এছাড়া জুয়েল একজন মাদকাসক্ত। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক হিসেবে সিরাজ ভুইয়ার কাছে একটি মোটরসাইকেল দাবি করে আসছিল জুয়েল। এছাড়া কয়েক দফায় প্রায় এক লাখ টাকাও নিয়ে নেয়। ইদানিং আরো এক লাখ টাকা যৌতুক ও সুজকি কোম্পানির একটি মোটরসাইকেলের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল জুয়েলসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
দাবিকৃত যৌতুকের টাকা ও মোটরসাইকেল না দিতে পারায় সুমি আক্তারকে শারীরিক নির্যাতন করত।
শনিবার রাতে স্বামী জুয়েল মিয়া, শ্বশুর মারফত আলী, শাশুড়ি মিনারা, ভাসুর সোহেলসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন শ্বাসরোধে হত্যার পর সুমি আক্তারকে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে বলে বাবা সিরাজ ভুইয়াসহ পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন। তারা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান।
সুমি আক্তারের মা খাদিজা বেগম অভিযোগ করে জানান, মেয়ের সুখের চিন্তা করে মাদকাসক্ত জামাই জুয়েলসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন যখন যা চেয়েছে, সাধ্যমত দেয়ার চেষ্টা করেছি। এছাড়া জোরপূর্বক বিয়ে করার কারণে শ্বশুর-শাশুড়িসহ ওই বাড়ির লোকজন পছন্দ করত না। সুমিকে জামাই জুয়েলসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তিনি মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক রুবেল জানান, ইছাখালী এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে গৃহবধূ সুমি আক্তারের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তবে, এটি হত্যা না আত্মহত্যা এখন বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে।
আদালত কতৃক ঘাতক স্বামী মো. জুয়েল মিয়া (২৮) কে মৃত্যুদন্ডের আদেশের পর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, নগরপাড়া এলাকার মো. সিরাজ ভূঁইয়ার মেয়ে সুমি আক্তারের সঙ্গে ইছাখালি এলাকার মো. মারফত আলীর ছেলে মো. জুয়েল মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সুমি আক্তারকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে দাবীকৃত যৌতুক বাবদ জুয়েলকে ৯০ হাজার প্রদান করা হয়। কিছুদিন পর আবার দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল দাবি করে।
পরবর্তীতে মোটরসাইকেলের বিষয়ে সুমি আক্তার প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করে। তিনি বাবার বাড়ি চলে গেলে বাবা মো. সিরাজ ভূঁইয়া টাকা যোগাড় করে মোটরসাইকেল কিনে দিবেন বলে মেয়েকে স্বামী বাড়িতে পাঠান। কিন্তু মোটরসাইকেল কিনে দিতে দেরি হওয়ায় ২০১৭ সালের ১৭ জুন সন্ধ্যায় শ্বাসরোধ করে সুমিকে হত্যা করে। এ ঘটনায় বাবা মো. সিরাজ ভূঁইয়া রূপগঞ্জ থানায় মামলা করলে ৭ জনের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পুলিশের পরিদর্শক মো. আবদুর রশিদ বলেন, রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলায় জুয়েল মিয়া নামে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাদীপক্ষ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
Discussion about this post