অবৈধ দখলদারদের গিরে সরজমিনে ঘরে প্রতিবেদন প্রকাশের পরও টনক নড়ে নাই অবৈধ দখলদার চক্রের । উল্টো এমন সংবাদ প্রকাশের পর শাসক দলের নাম ব্যবহারকারী এই চক্রের অনেকেই এলাকাবাসীকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে ।
আড়াইহাজারে নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কে রেলওয়ে অধিদপ্তরের তিন কোটি টাকা মূল্যের প্রায় পাঁচ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখল করে হাসপাতাল, দোকানপাট ও মার্কেট নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত নরসিংদী থেকে মদনগঞ্জ ট্রেন চলাচল করেছে। ১৯৮৭ সালের শুরুর দিকে তৎকালীন সরকার প্রধান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়।
তারপর গণপরিবহন চলাচলের জন্য পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু রাস্তার দুই পাশে রেলওয়ের খালি পড়ে থাকায় হাসপাতাল, দোকানপাট, মার্কেট ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করে হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এককালীন ও প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করছেন তিনি।
সরেজমিনে আড়াইহাজার চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আড়াইহাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান আড়াইহাজার চৌরাস্তা এলাকায় জবেদ আলী মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও তার দুই পাশে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ বিঘা জমি দখল করে ওষুধ, ওয়ার্কশপ, গ্যারেজ, খাবারের হোটেল, চায়ের দোকানসহ শতাধিক সেমিপাকা দোকান নির্মাণ করে কয়েক কোটি টাকা এককালীন ও মাসে কয়েক লাখ টাকা ভাড়া উত্তোলন করছেন তিনি।
আড়াইহাজার চৌরাস্তা এলাকার সালমান ফার্মেসির মালিক রিপন মিয়া বলেন, ‘আমি ৬০ হাজার টাকা বাৎসরিক ভাড়া দিয়ে হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে দোকান ভাড়া নিয়েছি। ভাড়ার টাকা পরিশোধ করে এ পর্যন্ত কোনো লাভের মুখ দেখিনি। সরকারি জায়গায় দোকান চালিয়েও চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছি না আমরা।’
গ্যারেজ মালিক রোবেল মিয়া ও ফয়সাল মিয়া বলেন, ‘রেলওয়ের জায়গা দোকান বসিয়ে প্রতিবছর ভাড়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন একটি প্রভাবশালী মহল।
ভাড়ার টাকা না দিয়ে আমাদের দোকান থেকে বের করে দিয়ে অন্য মালিকের কাছে দোকান দিয়ে দেবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।’
লাল মিয়া নামের এক ভাতের হোটেলের মালিক বলেন, ‘লাভ হউক আর লোকসান হোক এ বিষয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। দোকান চালালে তাদের অগ্রিম ভাড়া দিতে হবে এটাই তাদের নিয়ম। রেলওয়ের জায়গা দখল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক জায়গা দখল করে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে তারা অঢেল বাড়ি, গাড়ি ও সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
’
রেলওয়ের জায়গা দখল করে কিভাবে হাসপাতাল ও বিভিন্ন দোকানপাট নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে আড়াইহাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি রেলওয়ের কাছ থেকে ইজারা নিয়েই বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছি।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে এস্টেট কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে নতুন করে কারো নামে কোনো জায়গা লিজ দেয়নি। যেসব ব্যক্তির নামে কৃষি লিজ দেওয়া হয়েছে তারাও কৃষিকাজ না করে হাসপাতাল, মার্কেট ও দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ সকল অবৈধ দখলদারদের তালিকা ইতিমধ্যে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এ সকল অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদসহ তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তিতে অবৈধ দখলদারদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে। খুব শিগগিরই অভিযান চালিয়ে এ সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করা হবে।’
Discussion about this post