২০২২ সালের ৬ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট প্রকাশ করে, “গণপূর্তের পীর ! নারায়ণগঞ্জে প্রধান খাদেম হেলাল” শীর্ষক সংবাদে উল্লেখ ছিলো, “যে যায় লংকা, সে ই হয়ে যায় রাবণ !” এমন প্রবাদের সাথে মিল রেখে নারায়ণগঞ্জে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অপকর্মের আখড়া স্থাপন করে চালিয়ে যাচ্ছে লুটপাটের মহোৎসব ।
একই সাথে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী নারায়ণগঞ্জের ভুইঘরের পীর হিসেবে পরিচিত শামীম আখতারের প্রধান খাদেম হিসেবে পরিচিত নির্বাহী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন নিজেকে কখনো পীর সাহেবের খাস লোক আবার কখনো গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিশাল অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা। একই সাথে একটি প্রভাবশালী নেতার হয়ে টেন্ডার বাণিজ্যসহ লুটপাটের আখড়া হিসেবে নাারয়ণগঞ্জে চলছে তুঘলকি কারবার !”
এতো কিছুর পরও গণপূর্ত অধিদপ্তরের পীরখ্যাত শামীম আখতারের গাড়ী কেলেংকারীর ঘটনা এবার ফাস হয়েছে গণমাধ্যমে। ঈদের পর এই ছুটির প্রথম দিনে লুটপাটের আরেক আখড়া হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তর কার্যালয়ে গাড়ী নিয়ে কেলেংকারীর ঘটনায় ানেকেই বলেছেন এই গাড়ী নিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রতি বৃহস্পতিবার পীরের আস্তানা ভূইঘরে আসেন শামীম আখতার ।
যার খরর আর এই গণপূর্ত অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ওই পীরের আস্তানায় শতভাগ বিস্বাসের সাথে খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় ব্যাপক গুঞ্জর উঠেছে নারায়ণগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে । ঈদের ছুটির পর প্রথম অফিসে এসেই কোলাকুলির পরিবর্তে সকলের মুখে একই সমালোচনা, প্রধান প্রকৌশলীর গাড়ী কেলেংকারী !
জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নথিপত্র অনুযায়ী, ১৫টি দামি জিপ নিয়মিত চলছে ভিআইপি প্রটোকলের কাজে। চালক, জ্বালানি আর রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচও দেখানো হচ্ছে মাসে মাসে। সরকারি ১৫টি গাড়ির মধ্যে মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার ব্র্যান্ডের ৬টি জিপ ভিআইপি প্রটোকলে ব্যবহার করার কথা কাগজপত্রে উল্লেখ আছে। কিন্তু বাস্তবে জিপগুলো গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির সভাপতি, সচিব ও প্রধান প্রকৌশলীর পরিবারের সদস্যদের কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে জানা যায়। জ্বালানি ও মেরামত বাবদ সরকারিভাবে নির্ধারিত বরাদ্দের বাইরেও গাড়িগুলোর পেছনে বিশেষভাবে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে।
এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছেন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ আরও ৯ কর্মকর্তা। তাঁরা গণপূর্ত অধিদপ্তরের নামে থাকা আরও ৯টি গাড়ি নিজেরা ব্যবহার করছেন। যদিও সেই কর্মকর্তাদের প্রত্যেকেই ইতিপূর্বে প্রাধিকারপ্রাপ্ত হয়ে গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত সুবিধায় ঋণ নিয়েছেন এবং গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ নির্ধারিত টাকা পাচ্ছেন।
সরকারি গাড়ি পারিবারিক কাজে ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করেন, তিনি নিজের জন্য একটি জিপ আর বাসার জন্য আরেকটি বাহন ব্যবহার করে থাকেন। এভাবে কিছু যানবাহন নিয়মের বাইরে ব্যবহার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়মবহির্ভূত, এটা সত্য। আসলে চলে আসা বিষয়টি আমরা বন্ধ করি নাই।’
তিন ভিআইপির ৬ পাজেরো স্পোর্টস জিপ
গণপূর্ত নগর বিভাগের আওতায় দামি ছয়টি জিপ দীর্ঘদিন ধরে চললেও কারা ব্যবহার করছেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য নেই নথিতে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৭২৩৪ মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার জিপটি ব্যবহার করেন গণপূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা। ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৪২৯৫ মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার জিপটি ব্যবহার করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পরিবারের সদস্যরা। ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৫৯৭৪ মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস জিপটি প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করছেন। ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৬৮৪৭ মিতসুবিশি ইএক্স কার, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৫৫৮৮ পিকআপ এবং ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৬৫৫২ মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার জিপের মধ্যে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কাজে দুটি ব্যবহার হচ্ছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের দপ্তরে গিয়ে জানা যায়, তিনি দেশের বাইরে আছেন।যানবাহনগুলো কারা ব্যবহার করেন, জানতে চাইলে নগর গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মণ্ডল কিছু বলতে রাজি হননি।
৯ জিপ মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের দখলে
জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইডেন বিভাগের আওতায় থাকা বেশ কিছু ভালো মানের গাড়ি নিজেদের কবজায় নিয়েছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-২৮৮৩ জিপটি ব্যবহার করেন সচিবের একান্ত সচিব আ ন ম নাজিম উদ্দীন। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-১৯৯৭ জিপটি মন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৯৯৫৭ জিপটি অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-১) মো. ওয়ালি উল্লাহ, ঘ-১৫-১২৫৭ জিপটি অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) শাকিলা জেরিন আহমেদ, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৬৫৪৩ জিপটি অতিরিক্ত (সচিব উন্নয়ন-১) হামিদুর রহমান খান, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৪৩০১ জিপটি অতিরিক্ত সচিব (অডিট) ড. মোহাম্মদ আশফাকুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা মেট্রো-গ-৩৭-৫২৪২ জিপটি আইন কর্মকর্তা-২ (যুগ্ম সচিব) মুহাম্মদ মোজাম্মল হোসেন খান, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৭২৩৯ জিপটি যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-১) শেখ নূর মোহাম্মদ, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৪২৯৯ জিপটি উপসচিব (প্রশাসন-১) ব্যবহার করেন। গাড়িগুলোর চালক ও জ্বালানি খরচ অধিদপ্তর থেকে নেওয়া হচ্ছে।
উল্লিখিত কর্মকর্তাদের মধ্যে জনসংযোগ কর্মকর্তা ছাড়া বাকি সবাই সুদমুক্ত কোটায় গাড়ি কেনার জন্য সরকারের অর্থ পেয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে গণপূর্ত ইডেন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ধরেননি।
সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি কিনলে আর সরকারি গাড়ি পান না
একাধিক কর্মকর্তা জানান, উপসচিব থেকে সচিব মর্যাদার কর্মকর্তারা বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই গাড়ি কিনতে ৩০ লাখ টাকার সুদমুক্ত ঋণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি ও চালকের বেতন বাবদ মাসে ৫০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। এ সুবিধা পাওয়ার পর বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আর কোনো সরকারি যানবাহন ব্যবহার করার সুযোগ নেই।
Discussion about this post