মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে শেষ পর্যন্ত রাজাকার পুত্রের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ একে এম সেলিম ওসমানও। বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায়, কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এমন কান্ড সমালোচনার ঝড় উঠেছে মুক্তিযোদ্ধাসহ নগরবাসীর মাঝে।
রাজাকার পুত্র সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এই বিদ্যালয়ে সম্পন্ন হয় পরীক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান। রাজাকারপুত্রের সভাপতিত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতির ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে নগরীর বোস কেবিনের চায়ের আড্ডায় অনেক প্রবীন কড়া সমালোচনা করে বলেন, “যে নগরীতে ব্যবসায়ীদের নেতাদের নেতা হিসেবে শুধুমাত্র রাস্ট্র ক্ষমতার জোড়ে কয়েকজন সংসদ সদস্যের কারণে একজন চিহ্নিত একজন রাজাকারপুত্র নারায়ণগঞ্জের পুরো ব্যবসায়ীদের বগলদাবা করে রেখেছে। সেই নগরীতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক রাজাকার পুত্রের সভাপতিত্বে শিক্ষার্থীদের মাঝে বক্তব্য দিয়ে কি উদহারণ রাখবেন তা বোধগম্য নয়। একজন মন্ত্রী কি জানেন না কার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান হচ্ছে । আর স্থানীয় এমপি করেন টা কি ? রাজাকার পুত্রদের বগলদাবায় এখন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি !
বিতর্কিত এই অনুষ্ঠানে প্রদান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক বরেছেন , পৃথিবীর কোনো দেশ আমাদের মতো বিনা মূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিতে পারেনি। এখন শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় শিক্ষা লাভ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ ব্যয় বহন করছে রাষ্ট্র । বছরের প্রথম দিনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ধনী-গরিব নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া হয়।
বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা রাষ্ট্রের পয়সার লেখাপড়া কর। আমাদের সময় আমরা তা পারিনি। তাই রাষ্ট্রের প্রতি তোমাদের দায়িত্ব আছে। রাষ্ট্র আমাকে কী দিল এটা বড় কথা নয়, আমি রাষ্ট্রকে কী দিলাম, সেটাই বড় বিষয়। আমি যখন জন্মেছি, সেদিন দেশের অবস্থা যা ছিল, মৃত্যুর সময় তার চেয়ে উন্নত রেখে যেতে চাই। তাই রাষ্ট্রকে তোমাদের কিছু দেওয়ার আছে। এ জন্য ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে, যাতে দেশ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজে লাগে।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল উল্লেখ করে ‘ভবিষ্যতে আবার যেন সেই পথ হারিয়ে না যায়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রী যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, তা বাস্তবায়নে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কোনো মানুষ যাতে না খেয়ে মারা না যায়, সে জন্য সরকার বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা প্রদান করছে। যাতে মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। যাদের বাড়িঘর ছিল না, তাদের বাড়িঘর তৈরি করে দিচ্ছে সরকার। আবার যাদের জমি আছে কিন্তু ঘর নেই, তাদেরও ঘর তৈরি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রাজাকার পুত্র সেলিম রেজা। যার বাবা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর অন্যতম কুখ্যাত রাজাকার এম.এ ওহাব । নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কলাগাছিয়া গ্রামের (ইউনিয়ন কলাগাছিয়া) এম. ওহাবের ছিলো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ব্যাপক তান্ডব।
এ অনুস্টানে আরো বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইসমত আরা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কুদরত-এ-খুদা, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post