আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি :
চক্ষু নাই। থাকলে পাকা ঘরটা কেমন সুন্দর দেখতাম। অহন কব্বরে গিয়াও শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু। প্রধানমন্ত্রী আমারে একটা পাকা ঘর দিছে। আমি অন্ধমানুষ। জমি পাইলাম লগে ঘরও পাইলাম। শেষ বয়সে আমি সবই পাইলাম। আমিন।’
এভাবেই কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করছিলেন অন্ধ ঝালমুড়ি বিক্রেতা আজগর আলী। ৬৮ বছর বয়েসী আজগর আলী আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার দাইরাদি গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, আজগর আলী (৬৮) একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি। স্বাধীনতার আগে পরে তার দু’টি চোখ অসুখে নষ্ট হয়ে যায়। আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার দাইরাদী গ্রামের বাসিন্দা অন্ধ আজগর আলীকে সবাই ঝালমুড়ি বিক্রেতা হিসেবেই চিনে। ভিক্ষা না করে ঝালমুড়ি বিক্রি করতো বলে আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ তাকে সমীহ করতো। প্রতিবন্ধি হয়েও জীবনে কারো কাছে হাত পাতেন নি। ভিক্ষা না করে কাজ করেছেন।ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। দীর্ঘ ৫০ বছর স্ত্রী খুরশিদা বেগমের কাধে হাত রেখে হাটে বাজারে ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে অভাবের সংসারের চাকা
ঘুরিয়েছেন। রোদ বৃষ্টি ঝড়ঝঞ্জা মাথায় নিয়েই এক সময় ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। জীবন যুদ্ধে কখনো হার মানেনি অন্ধ আজগর আলী। জীবন সায়াহ্নে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঝালমুড়ি বিক্রি করতে পারেন না। এক বছর ধরে বিছানায় ছটফট করে মরেন। মেয়ের কাছে ঠাঁই মিলে ছিল। দু’বেলা খেতে পান। মেয়ে রত্না বৃদ্ধ পিতা মাতাকে ঠাঁই দিয়েছেন স্বামীর বাড়িতে। অনেক গঞ্জনা সহ্য করে পুরনো টিন দিয়ে কোনমতে একটি ছোট একচালা টিনের বানিয়ে দিয়েছিল। বুড়োবুড়ি কোন মতে একটি চৌকি পেতে সেখানে রাত কাটাতেন। মেয়ের আশ্রয়েই দিন কাটাতো আজগর আলী। সেই আজগর আলী জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের নির্দেশে আড়াইহাজারের ইউএনও অফিস বিষয়টি আমলে নিয়ে আজগর আলীকে প্রধানমন্ত্রীর একটি উপহারের ঘর বরাদ্ধ দেয়। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে অন্ধ আজগর আলী খুবই খুশি। তার জীবন সার্থক বলে তিনি মনে করেন।
জানা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলায় মোট তালিকা ভুক্ত ভূমিহীন পরিবার ছিল ৩৪৮ টি। এর মধ্যে বেশ কিছু পরিবার বসবাসে অনিচ্ছুক থাকায় পুনরায় যাচাই বাছাই অন্তে হালনাগাদকৃত প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় দুস্থ পরিবারের সংখ্যা দাড়ায় ২৯৬। এর মধ্যে ২৪৪ টি পরিবার ইতোমধ্যে ১ম পর্যায়ে ৩১ টি, ২য় পর্যায়ে ২৮ টি এবং ৩য় ধাপে ১ম পর্যায়ে ৫০টি ও ৩য় ধাপের ৪র্থ পর্যায়ে ১৩৫টি পুনর্বাসিত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫২ টি পরিবারকে পুনর্বাসনের নিমিত্তে ৪র্থ ধাপের বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং ব্রাহ্মন্দী ও রামচন্দ্রদী আশ্রয়ন প্রকল্পে গৃহ নির্মাণ এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপজেলার হাইজাদী, রামচন্দ্রদী, সাদারদিয়া, কামরানির চর, খাসেরকান্দি,ব্রাক্ষন্দী, ঝাউগড়া, শ্রীনিবাসী, চৈতনকান্দা ও সাতগ্রামে এই সকল ঘর বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পবিত্র দায়িত্ব এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটির কাজ করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসহায়, দরিদ্রদের পাশে দাড়িয়ে যে অনুভূতি তৈরী হয় তা অসাধারণ। সংসদ সদস্য আজহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু ও জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আড়াইহাজার উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) পান্না আক্তার বলেন, আড়াইহাজার উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত নীতিমালা যথাযথ ভাবে অনুসরণ পূর্বক বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোট ভূমিহীন ২৯৬ টি পরিবারের মধ্যে ২৪৪ টি পরিবারকে আমরা ইতোমধ্যে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এই উপজেলায় বিভিন্ন ধাপে আনুমানিক ২১.৭৮ কোটি টাকা মূল্যের ৯.৯০৫০ একর খাস জমি অবৈধ দখলদার হতে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রকৃত ভূমিহীনরাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্ধ পেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকটআড়াইহাজার বাসী কৃতজ্ঞ।
সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, আশা করছি খুব দ্রুতই আড়াইহাজার উপজেলা ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে। ‘একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।
Discussion about this post