দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জের ওষুধ ব্যবসায়ীদের ব্যবহার ও শাসক দলের নেতাদের সাথে লিয়াজােঁ রেখে এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা কেমিস্টস্ এণ্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির সদস্যদের জিম্মি করে চাঁদাবাজির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের গাজারিয়া থানার টেঙ্গার চর ইউনিয়নের মৃত হায়দার আলী খানের পুত্র শাহজাহান খান । চাঁদাবাজিসহ নানা কেলেংকারীর কারণে এলাকায় শাহজাহান খান ও তার ভাইদের বিরদ্ধে জুতা ও ঝাড়ু মিছিল করলে গাজারিয়া থেকে পালিয়ে আসা এই অপরাধী নারায়ণগঞ্জে গড়ে তুলেছে অপরাধের বসতি । আর তার পরিবারের সকল সদস্যরাও এলাকা ছাড়া এই শাহজাহানের কারণে।
কয়েক বছর যাবৎ নানা অপরাধে জেল খেটে মুন্সীগঞ্জের নেতাদের হাতে পায়ে ধরে আর এলাকায় যাবে না এমন মুচলেকায় জামিনে মুক্তি পেয়ে বৈদ্যেরগাঁও গ্রামের বাড়িতে আসার পর পুরো এলাকার লোকজন জুতা ও ঝাড়ু নিয়ে হামলা চালায় শাহজাহান খানের বাড়িতে । এর পর পারিয়ে আসা শাহজাহান কান ও তার পরিবার আর গ্রামের বাড়িতে যেতে না পারলেও নারায়ণগঞ্জে চালাচ্ছে অপরাধের সাম্রাজ্য । এতো অপরাধের পরও এই শাহজাহান খান নারায়ণগঞ্জকে নানা অপরাধের আখড়া হিসেবে ব্যবহার করছে নাসির ও জুয়েলের মতো অপরাধীদের ।
এতো কিছুর পর এবার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সদ্য অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা কেমিস্টস্ এণ্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির নির্বাচন বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় পরিষদ।
গত ১০ মার্চ সমিতির কেন্দ্রীয় পরিষদের সভায় এক সিদ্ধান্তে নির্বাচন ও বতর্মান কমিটি বাতিল করে পুনরায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। একই সাথে শাহজাহান খানের উপস্তিতিতে কমিটি বাতিল করার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাব এর কার্যক্রমও স্থগিতের নির্দেশনা দেওয়া হয় ।
১০ মার্চ শাহজাহান খানের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা কেমিস্টস্ এণ্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির নির্বাচন বাতিল করার দুই দিন পর বিলুপ্ত কমিটির সহ সভাপতি নেফাউল ইসলাম জুয়েল এবং সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি জামায়াত ইসলামীর সূরা সদস্য নাসির উদ্দিন ওরফে মাওলানা নাসিরের দস্তখতে সমিতির নামে অগ্রণী ব্যাংকে জমাকৃত প্রায় পৌনে তিন লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মস্যাতের ঘটনা ঘটায় শাহজাহান খান চক্র।
এমন ঘটনায় কেমিস্টস্ এণ্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলার সাধারণ সদস্যরা বিক্ষুদ্ধ অবস্থানের রয়েছে।
সমিতির কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. শাহাজালাল, গত ১৩ মার্চ এক অফিস আদেশে জানান, “সমিতির নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ থেকে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করা হয়। সেই মোতাবেক কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ টিম ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনেক ওষুধের দোকানে ও ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ টিমের নিকট নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি সেই টিম লিখিত প্রতিবেদনে অভিযোগগুলোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানায়।
যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এণ্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ মাসিক সভায় অভিযোগগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনাপূর্বক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সমিতির নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখায় ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন সম্পূর্ণরুপে বাতিল ও বর্তমান কার্যকরি কমিটিও বাতিল করা হলো। এবং সমিতির নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখায় নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উক্ত আহ্বায়ক কমিটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।”
এ ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে বাতিল করা কমিটির সভাপতি মো. শাহজাহান খান নির্বাচন ও কমিটি বাতিলের কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত জাঁকজমক ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের স্বত:স্ফূর্ত উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা কেমস্টিস্ এণ্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত কারো কোন ধরনের প্রশ্ন ছিলো না। হঠাৎ করে গত চলতি মাসে কেন্দ্র থেকে জানানো হলো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এবং এ নির্বাচন ও কমিটি বাতিল। কেন্দ্রের কতিপয় সদস্যের পছন্দের প্রার্থী ছিলো নির্বাচনে। যারা ভোটারদের ভোটে জয়ী হয়নি। তাদের ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছে বর্তমান কমিটি।”
আপনার উপস্থিতিতে ১০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলা কেমিস্টস্ এণ্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির নির্বাচন বাতিল করা করে কমিটি বিলুপ্ত করলেও আপনি শাহজাহান খান কি করে ১২ ও ১৩ মার্চ অগ্রণী ব্যাংকের সমিতির হিসাব থেকে প্রায় পৌনে তিন লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন ?
এমন প্রশ্নে শাহজাহান খান বলেন, ‘আমি কমিটি বাতিলের চিঠি পাই নাই বলেই টাকা তুলেছি সমিতির প্রয়োজনে । সমিতি যেহেতু বাতিল করেছে আপনার উপস্থিতিতে, সেহেতেু কি করে এমন কান্ড ঘটলো এমন প্রশ্নে ফের শাহজাহান খান বলেন, “আপনি আমার সাথে পারসনাল দেখা করেন। তার পরে বলি।”
আপনার বিরুদ্ধে এমন অনিয়ম, দূর্ণীতি, চাঁদাবাজি নানা অপকর্ম নিয়ে অভিযোগরে বিষয়ে কথা বললেই আপনি উল্টো থানায় অভিযোগ করে পুলিশ ম্যানেজে এবং পলাশ নামক একজন বিশেষ পেশার আত্মীয়কে ব্যবহার করে গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানী করার অপচেষ্টা করেন ! তাইলে আপনার এমন অপরাধের বিষয়ে কথা বলার উপায় কি ? এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন নারায়ণগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জের নানা অপরাধের হোতা শাহজাহান খান ।
ব্যাপক চাঁদাবজির কারণে এই শাহজাহান খান ও তার সহযোগী অপরাধী চক্রদের নাম সাধারণ ওষুধ ব্যবসায়ীরা আতংকের সাথে নাম উচ্চারণ করেন। অনেকেই মুঠোফোনে ফোন না দিয়ে মামলাবাজ জামায়াত শিবিরের শেল্টারদাতা শাহজাহান খানের হয়রানীর ভয়ে হোয়াসট অ্যাপ, ইমু ও ম্যাসেঞ্জার ব্যবাহার করে তথ্য প্রদান করেন।
শাহজাহান খান ছাড়াও তার সকল অপরাধের অন্যতম সহযোগী বিলুপ্ত সমিতির সহ সভাপতি নেফাউল ইসলাম জুয়েলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সমিতি বিলুপ্ত করার বিষয়ে আলোচনা তুলতেই বলেন, “আপনি পারসনাল এসে কথা বলেন আমি মোবাইলে কথা বলবো না, বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
চেক দিয়ে যে তিন জনের স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তাদের মধ্যে অপর সদস্য বিলুপ্ত সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি জামায়াত ইসলামীর সূরা সদস্য নাসির উদ্দিন ওরফে মাওলানা নাসির নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, “ব্যাংক থেকে প্রায় পৌনে তিন লাখ টাকা তোলার পরে আমার শুনেছি কমিটি বাতিল করা হইছে। কোন কোন খাতে খরচা হইবো বলে এই টাকা শাহজাহান খানের কাছেই রাখছে। এই টাকার হিসাব আমি জানি না ।
আপনি জামায়াত শিবিরে সূরা সদস্য এমন অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ জেলা কেমিস্টস্ এণ্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির অনেক নেতার এমন বিষয় অস্বীকার করেন নাসির উদ্দিন ওরফে মাওলানা নাসির।”
Discussion about this post