বন্দরের কুখাত সন্ত্রাসী খান মাসুদের নিয়ন্ত্রিত দুই বাহিনীর দুই বাহিনীর সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ১০/১২ জন আহত হয়েছে। এদের মদ্যে গুরুতর আহত ৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ।
সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে উপজেলার একাধিক স্থানে দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতা এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলার নুরবাগ এলাকার মো. রাজু আহমেদ ওরফে স্ট্যান্ড রাজু এবং চিনারদী এলাকার আকিব হাসান রাজু ওরফে টোকাই রাজু বাহিনীর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় বাহিনীকে বন্দরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী এবং বন্দরের সকল অপরাধের হোতা খান মাসুদ নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার পর হামলাকারী উভয় পক্ষের আহত ও তাদের সহযোগীরা মুঠোফোনে সকল কিছু বিস্তারিত জানায় । এবং কোন পথে পুলিশ আসছে এবং কারা কারা এলাকা থেকে সরে পরতে হবে তার সকল দিক নির্দেশনা দিয়েছে খান মাসুদ নিজেই। উভয় পক্ষের সন্ত্রাসীদের মুঠোফোনে দিক নির্দেশনা দিয়ে কার কার কাছে কোন কোন অস্ত্র আছে কার উপর হামরা করতে হবে সকল আদেশ নিদেশ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে খান মাসুদের বিরুদ্ধে।
আহতদের কেউ কেউ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাতে কাতরাতে মুঠোফোনে খান মাসুদকে জানায়, “ভাই এই হামলায় ওরা আপনের নাম কইয়া হামলা করছে। ওদের হাতে অস্ত্র ছিলো।” এভাবেই সকল সন্ত্রাসীদের নানাভাবে শান্তনা দিয়ে উভয় পক্ষকেই নিজের লোক বলে মুঠোফেনে আলোচনা করেন খান মাসুদ।
এমন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেউ কেউ বলেন, খান মাসুদের মুঠোফোনের কললিষ্ট যাচাই করলেই বেড়িয়ে আসবে অপরাধের সকল তথ্য ।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন- রাজু আহমেদের পক্ষের ছনখোলা এলাকার মামুন, নাসির ও অপু এবং আকিব হাসান রাজুর পক্ষের চিনারদী এলাকার নিলুফা বেগম, কল্যান্দি এলাকার রহিম, হাফেজীবাগ এলাকার মতিন মিয়ার ছেলে আব্দুল, র্যালি আবাসিক এলাকার সামাদ মিয়ার ছেলে রুবেল, জামাইপাড়া এলাকার জাহিদ ও মুখফলদি এলাকার সাইফুল।
আহতদের মধ্যে রহিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, বন্দর উপজেলার নুরবাগ এলাকার রাজু আহমেদ ও বন্দর ইউনিয়নের চিনারদী এলাকার আকিব রাজুর মধ্যে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছে। এই দ্বন্দ্বের জেরে সোমবার দুপুরে রাম দা, চুরিসহ ধারালো অস্ত্র হাতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন রক্তাক্ত জখম হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে এখনও এ নিয়ে বন্দরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। এই ঘটনায় একজনকে আটকও করা হয়েছে।’
তবে স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, নুরবাগের রাজু ও চিনারদীর রাজু উভয়ই যুবলীগ নেতা নামধারী কুখ্যাত সন্ত্রাসী খান মাসুদের অনুসারী। তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এর আগেও একাধিকবার মারামারি হয়েছে। তাদের দ্বন্দ্ব মেটাতে রোববার নিজের অফিসে ডেকে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দেন খান মাসুদ। এর একদিন পরেই উভয়পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়। চিনারদী এলাকার আকিব হাসান রাজু ওরফে টোকাই রাজুর বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা চাঁদাবাজির সহ ৮/১০ টি মামলা রয়েছে।
এই বিষয়ে কথা বলতে খান মাসুদের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার কল করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
মুঠোফোনে সন্ত্রাসীদের দিক নির্দেশনা দিলেও ফেসবুক পেজে দূর্ধর্ষ অপরাধী খান মাসুদ লেখে, ‘আমি অনেক চেষ্টা করেছি সকলকে নিয়ে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করতে। কিন্তু যারা আমার নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজেরাই উপরাধ কর্মকা- জড়িয়ে পরে মানুষের মনে আতংক সৃষ্টি করে মানুষকে অশান্তিতে রাখে, তারা আমার লোক না। দলকে শক্তিশালী করার জন্য রাজু আহমেদ এবং আকিব হাসান রাজুকে আমার ভাইয়ে মতো স্নেহ করতাম। যার কারনে গতকাল (রোববার) রাতে ওদের মধ্যে থাকা দ্বন্দ্ব নিরসন করে ওদের মিলিয়ে দেই। কিন্তু আজ ১৩ মার্চের সংঘর্ষের ঘটনায় আমি মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ। তাই আজ থেকে তাদের কোন দায়ভার আমি আর নিব না। কোন অপরাধীই আমার লোক না, কেউ কোন অপরাধ করলে পুলিশকে কঠোরভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এমন স্ট্যাটাস দেখে বন্দরের অনেকেই বলেছেন শাসক দলের নেতা ও পাতি নেতাদের শেল্টারে খান মাসুদ ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছে । এই খান মাসুদের লাগাম টেনে না ধরলে আরো কঠিন কোন সংবাদের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।
Discussion about this post