বাংলাদেশের বাকি ৬৩ জেলা চলে একভাবে। আর নারায়ণগঞ্জে চলে ওসমানীয় রাজত্ব। এ রাজত্বে প্রশাসন কিছুই করে না। তারা গডফাদারদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করে। প্রশাসনের লোকজন কার হুকুম পালন করতে নারায়ণগঞ্জে আসে, সরকারের নাকি স্থানীয় গডফাদারদের ? এটা আমি এখনও বুঝতে পারি না। পুরো শহর ওসমানীয় সাম্রাজ্য হয়ে গেছে। দশ (১০) বছর যাবৎ আমরা আমাদের সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে আসছি। আরও কত বছর এই বিচার চাইতে হবে জানি না। ঘাতকদের চিনি, তাদের গোষ্ঠী চিনি, বাড়ি চিনি। ছোট একটা বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষ পর্যন্ত জানে কে ত্বকীকে হত্যা করেছে। তাহলে কেন তাদের বিচার হবে না সেইটাই প্রশ্ন।
সরকারের কাছে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে এভাবেই সোমবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১০ বছর পূর্তিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির হিসেবে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বক্তব্য প্রদান করেন।
ত্বকীর ঘাতকদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে আইভী বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার হবে, অবশ্যই হবে, হতেই হবে। আমি আমার সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবো, আপনি অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছেন। দয়া করে ত্বকী হত্যারও বিচার করেন। সারাদেশের মানুষ জানে কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে । সুতরাং হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হোক।
একাত্তরের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের মানুষকে ভয় দেখাতে, তাদের অন্ধকারে রাখতে একটি মহল হত্যার রাজনীতি করেছে বলেও মন্তব্য করেন সিটি মেয়র।
তিনি বলেন, এই শহরকে ভূতের রাজ্য, সন্ত্রাসের রাজ্য বানানো হয়েছিল। এখন মানুষ জেগে উঠেছে। তারা প্রতিবাদ করে, খুনিকে খুনি বলতে পারে। ত্বকীকে আমরা হারিয়েছি। কিন্তু ত্বকী আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে।
ওসমান পরিবারের সমালোচনা করে মেয়র বলেন, নতুন নতুন ইতিহাস রচনা করে শহরকে অস্থির করতে চায় তারা। মার্চ মাস আসলেই যেন পাগল হয়ে যায়, মাথা খারাপ হয়ে যায়। কি রেখে কি বলবে তাদের কোন হুঁশ থাকে না। সত্যকে চাপা দেয়ার জন্য একশত মিথ্যা সামনে এনে দাঁড় করায়। সেই মিথ্যা শুরু হয়েছে ৯৬ সাল থেকে। এমন এমন মিথ্যা বলেছে যে অনেক সত্য বিদায় নিয়েছে। অবাক লাগে টাকার বিনিময়ে পোষা কুকুরেরাও সেসব অবলীলায় বলে যাচ্ছে। সবকিছুর অবসান হবে। নারায়ণগঞ্জে চলে ওসমানীয় রাজত্ব। এই রাজত্বের মধ্যে প্রশাসন এখানে কিছুই না। তাদের কোন কর্মকান্ড নেই। তাদের যেভাবে প্রেসক্রিপশন দেয়া হয়, সেভাবেই তাদের কাজগুলো হয়।
এই শহর থেকে জুলুম শেষ হবে বল আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সিটি মেয়র বলেন, নারায়ণগঞ্জ ইতিহাস, ঐতিহ্যের শহর ছিল। কিন্তু এখন সারা বাংলাদেশের সব জায়গার মানুষ জানে, এই শহরে দিন-দুপুরে হত্যা করা হয়। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এটা আমরা পাল্টে দিতে চাই। তাদের পজেটিভ নারায়ণগঞ্জ উপহার দেবো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, লেখক ও গবেষক মফিদুল হক ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ থামবো না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই হত্যার দাবি প্রবাহিত হবে। রাসেল হত্যার বিচার যেমন হয়েছে, এই হত্যার বিচারও হবে। দলের নাম করে পার পাওয়া যাবে না।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাসুম, সদস্যসচিব হালিম আজাদ, খেলাঘর আসরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল।
বিকেলে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিশু-কিশোরদের মাঝে উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন স্কুলের শিশু থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। সন্ধ্যায় তিন বিভাগ থেকে নির্বাচিত মোট ২৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
Discussion about this post