গত ১৫ বছরে শুধুমাত্র রাজধানীতেই হাজার খানেক মোটরসাইকেল চুরি করে বিক্রি করেছেন চোরচক্রের মূলহোতা হোতা খালেক। একসময় মোটরসাইকেলের মেকানিক ছিলেন। ওই পেশায় কাজের সুবাদে মোটরসাইকেল চুরি চক্রের সদস্যদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে।
সম্প্রতি তুরাগ এলাকায় একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় মামলা হলে তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগ। তারা চোর চক্রটির মূলহোতা খালেকের সন্ধান পায়। গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুর এলাকা থেকে ১২টি চোরাই মোটর সাইকেল (হোন্ডা) উদ্ধার করা হয়।
কে এই খালেক ?
খালেক হাওলাদার ওরফে সাগর আহমেদ। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের হাইমচরে। এক সময় মোটর সাইকেলের মেকানিক ছিলেন। ওই পেশায় কাজের সুবাদে মোটরসাইকেল চুরি চক্রের সদস্যদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর গড়ে তোলেন একটি চোরচক্র। যাদের কাজ ছিল ঢাকার বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও গ্যারেজ থেকে মোটরসাইকেল চুরি করা। এরপর সেই মোটরসাইকেল ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করা হতো। এভাবে গত ১৫ বছরে হাজার খানেক মোটরসাইকেল চুরি করে বিক্রি করেছেন চোরচক্রের হোতা খালেক।
যেভাবে চুরি করা হতো মোটর সাইকেল
বুধবার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন: যে বাড়িতে বাইক চুরি করবে প্রথম চক্রটি সেই বাড়িকে টার্গেট করে। এরপর তাদের দলের কয়েকজন সেই বাড়ি রেকি করে। শেষে একটি নির্ধারিত দিনে বাড়িটিতে প্রবেশ করে বাড়ির গেটের তালা ভেঙে ফেলে। এরপর মোটরসাইকেলের লক ভেঙে নিয়ে যায়। চক্রের সদস্যরা মোটরসাইকেল চুরির পর খালেকের কাছে বুঝিয়ে দিত। খালেক সেই চোরাই মোটর সাইকেলটি চাঁদপুরের ফারুক নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিতেন।
গ্রেপ্তার খালেকের সঙ্গে আরও ৭-৮ জন সহযোগী রয়েছেন। যারা এরই মধ্যে মোটর সাইকেল চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে রয়েছেন। জেল থেকে বেরিয়ে তারা একইভাবে চুরির কাজ করেন।
ডিবি প্রধান বলেন: খালেকের তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার পূর্ব বাজারের একটি গ্যারেজ থেকে ১২টি চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। এর আগে একই চক্রের কাছ থেকে গত মাসে আমরা আরও ৪০টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছি।
মেকানিক থেকে চোর চক্রের হোতা
চোর চক্রের হোতা খালেকের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, খালেক এক সময় মেকানিক্যালের কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার হাইমচরে। মেকানিক থাকা অবস্থায় চোরচক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একসময় মোটরসাইকেল মেকানিকের কাজ ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। এরপর নারায়ণগঞ্জে এলাকায় একটি মোটরসাইকেল চুরি চক্র গড়ে তোলেন।
চোরাই মোটরসাইকেল যার কাছে পাব তাকেই গ্রেপ্তার : ডিবি প্রধান
ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন: ঢাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরির পর ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও হাওর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কম দামে বিক্রি হয়। এসব চোরাই মোটরসাইকেল কাগজপত্র না থাকলেও কিনে নিচ্ছেন অনেকে। আমরা বারবারই বলে যাচ্ছি, কাগজপত্র নেই এমন মোটরসাইকেল কেনা অবৈধ। চোরাই মোটরসাইকেল যার কাছে পাবো তাকেই চোর হিসেবে সাব্যস্ত করবো। কারণ চোরাই মাল কেনাও একটা অপরাধ। কেউ যদি কাগজপত্রবিহীন চোরাই মোটরসাইকেল কেনেন তাদের সবার বিরুদ্ধে আমরা আইগত ব্যবস্থা নেবো।
নকল চাবি যারা বানান তাদের বিরুদ্ধে ডিবির অভিযান অব্যাহত
ডিবি প্রধান বলেন: যে দোকানে ডুপ্লিকেট (নকল) চাবি বানানো হয় তারাও চোরচক্রের সঙ্গে জড়িত। কারণ কেউ একজন ডুপ্লিকেট চাবি বানাতে এলে ওই দোকানি একই চাবি বানিয়ে তার কাছেও একটি রেখে দেন। তারা এই কাজটি নিয়মিত করছেন। যারা নকল চাবি বানান তাদের বিরুদ্ধে ডিবির অভিযান চলছে।
মোটরসাইকেল চুরি হলেই তাৎক্ষণিক নিকটস্থ থানায় জিডির অনুরোধ
হারুন অর রশীদ বলেন: কষ্টের টাকায় কেনা মোটরসাইকেল যার চুরি হয় সেই বোঝেন। অনেক মানুষ ব্যাংক থেকে লোন করে অথবা ধার-দেনা করে মোটরসাইকেল কেনেন। তাই আমি অনুরোধ করবো, গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল চুরি হলেই তাৎক্ষণিক নিকটস্থ থানায় জিডি করুন। এরপর জিডির কপিটি নিয়ে আমাদের ডিবির টিমের সঙ্গে যোগযোগ করলে মোটরসাইকেল উদ্ধারে চেষ্টা করতে পারবো।
Discussion about this post