‘এখন অনেকের টনক নড়েছে। খান বাহিনী চাই না, হোন্ডা বাহিনী চাই না, অমুক বাহিনী চাই না বলছেন। এই চারবছর কী করলেন? এই চার বছর কোথায় ছিলেন? ত্রিশ বছর যাবৎ এই শহরকে জিম্মি করে রেখেছেন আর হঠাৎ ইলেকশন সামনে আসায় এই কথাগুলো বলে জনগণের ভোট পাওয়ার আশা করছেন।’
নারায়ণগঞ্জ সদর আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের প্রতি ইঙ্গিত করে কঠোর সমালোচনা করে শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গুণীজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাসিক মেয়র আইভী এমন মন্তব্য করেছেন ।
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জের রাজধানী কুমিল্লা হয়ে যায় কিনা জানি না। নামও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। নারায়ণগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে ওসমান নগরী হলে বোধহয় বেশি ভালো হতো। এই যে এত অত্যাচার, অবিচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জবাসীই রুখে দাঁড়িয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন যখন রাজা অত্যাচারী হয়ে উঠে তখন প্রজারাও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। প্রজারা যে নারায়ণগঞ্জে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তা দেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো নারায়ণগঞ্জে প্রজা। রাজার রাজত্ব আমরা মেনে নিয়েছি। আমরা নীরিহ প্রজা মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠি, দুয়েকটা কথা বলার চেষ্টা করি। যেমন এইখানে দুয়েকজন বলে গেলেন। দুঃখ, কষ্ট যখন বিশাল আকারে হয়ে যায় তখন প্রতিবাদস্বরূপ কিছু বলে ফেলি। নাহলে আপনাদের কর্তৃত্ব আর নেতৃত্ব মেনে নিয়েই নারায়ণগঞ্জের মানুষ চলছে।’
হকার ইস্যুতে সংঘাত প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নগরী হকারের নগরী। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। সেদিন অনেকেই আহত হয়েছিলেন। সেদিন গুলি করা হয়েছিল, মারা যেতে নিয়েছিলাম। আমার কিছু অকুতভয় কর্মী মানবঢাল তৈরি করে বাঁচিয়েছিল। এই ঘটনায় পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছে, অস্ত্রধারী শাহ্ নিজামের অস্ত্র দেখেছে কিন্তু অস্ত্রটি লাইসেন্স করা, আপাতত ওনাকে পাওয়া গেল না বিধায়, ওনার সাক্ষাৎকার নেওয়া গেল না বিধায়, ওনাকে অস্ত্র মামলা থেকে খালাস দেওয়া হলো। এই রিপোর্ট দিয়েছে গত তিনদিন আগে। আমরা এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেবো। আমরা দুই বছর ঘুরেছি, মামলা নেয় নাই। পরে হাইকোর্টের থেকে আদেশ নিয়ে মামলা করেছি।’
আইভী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহর ঐতিহ্যবাহী শহর। সোনারগাঁয়ে ছিল বাংলার রাজধানী। পাটের জন্য বিখ্যাত ছিলাম। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, লেখাপড়া, খেলাধুলায় নারায়ণগঞ্জ এগিয়ে ছিল। বিগত ত্রিশ-চল্লিশ বছর যাবৎ আমাদের পরিচয় আমরা সন্ত্রাসের নগরী। এই পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না। আমরা আমাদের জামদানি, পাট, বিসিক নগরীর জন্য বিখ্যাত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ছয় দফার আন্দোলন এই নারায়ণগঞ্জ থেকে হয়েছে। এই জেলায় প্রথম মিটিং হয় আওয়ামী লীগের। এইসব ঐতিহ্য আমরা এগিয়ে নিতে চাই।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. ফজলুল হক রুমন রেজা, দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকার সম্পাদক মোরসালিন বাবলা, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাফিজ আশরাফ, মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুজ্জামান প্রমুখ।
সাপ্তাহিক ‘বিষের বাঁশী’ পত্রিকার ত্রিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গুণীজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পত্রিকাটির সম্পাদক সুভাষ সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
Discussion about this post