“আমাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষ তো আছেই।”
এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আড়াইহাজারে জাপানের প্রথম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) উদ্বোধন করেন।
এমন আশাবাদের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো আড়াইহাজারে জাপানের প্রথম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ এসইজেডের উদ্বোধন করেছেন।
মঙ্গলবার ( ৬ ডিসেম্বর ) সকাল ১০ টায় গণভবন থেকে ‘শুভ উদ্বোধন’ ঘোষনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ হবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এতে অন্তত ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
এখন পর্যন্ত এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে ৪০টি বিদেশি কোম্পানি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেজা জানিয়েছে, এ অর্থনৈতিক অঞ্চল উৎপাদনে যাচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। জাপানের সুমিতোমো করপোরেশন ১ হাজার একর জমির ওপর এই এসইজেড নির্মাণ করেছে। এতে সহযোগিতা করেছে বেজা। বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) যৌথভাবে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। জাপানের পাশাপাশি ভারত, চীন, সৌদি আরবসহ আরও অনেকগুলো দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যারা আসবে তারা যেভাবে চায় সেভাবেই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সুযোগ দেবো। তারা যেভাবে উন্নয়ন করতে চায়, করতে পারবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। চমৎকার পরিবেশ আছে এখানে। কারণ আমরা সব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব আইন করে দিয়েছি। বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সেবা ও পরিসেবা অনুমোদনে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। কিছু জটিলতা থাকলেও আমরা সেটা নিরসন করছি। সবচেয়ে বড় বিষয়, বাংলাদেশের অবস্থান; বাংলাদেশ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন। এখান থেকে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে সমুদ্রপথ, আকাশ ও রেলপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের সুযোগ আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব মার্কেটের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বড় বাজার রয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ উন্নত করে দিয়েছি, তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, সেখানেও আমাদের বাজার আছে। কাজেই বিনিয়োগের সব থেকে উত্তম জায়গা বাংলাদেশ। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটির বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আমাদের নিজেদেরই। আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি, উত্তর দিকে ১৫০ কোটি, পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার বিদ্যমান। যোগাযোগ অবকামো বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহনের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যারা এখানে বিনিয়োগ করবেন, নিজেরা সমৃদ্ধ হবেন, আমাদের দেশেরও উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, আমি আশা করি জাপানের এই উদ্যোগ অন্যদেরও আগ্রহী করবে। জাপানকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প করে দিচ্ছে। আমাদের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের নিদর্শন। তাদের সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্বে অনেক প্রকল্প আছে। ব্যবসাবান্ধব আরও অনেক প্রকল্প হবে আশা করি।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয়। যত্রতত্র যেন শিল্প কলকারখানা না হয়। সেজন্য (কলকারখানার কারণে) যেখানে ফসল হয় না, সে জমিতে আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিই। পরিবেশবান্ধব যাতে হয়, সে বিষয়টি বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবে। নারী উদ্যোক্তাদেরও বিশেষভাবে আলাদা প্লট দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ১০টি অর্থনৈতিক উৎপাদন শুরু করেছে। তাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করতে পারছি। ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এগুলোর সবই করছি- একদিকে পরিবেশ, অপরদিকে ভূমি রক্ষা করে।
অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
নারায়ণগঞ্জ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন আড়াইহাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নওকি, জাপানের সুমিতুমো কর্পোরেশনের সভাপতি ও সিইও মাসা উকি হিউদো প্রমুখ।
Discussion about this post