জি ¦, খেলা হবে ! খেলবেন তো ? আসুন খেলি ? কথাগুলো যেমনি খুবি সুড়সুড়িপূর্ণ তেমনি কোন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবার চূড়ান্ত আহ্বান। এই খেলার মাঠ কোন বিছানা নয়, এই খেলার আহ্বান কোন বিয়াই-বিয়াইনের মাঝেও নয়, এই খেলার আহ্বান কোন খেটে খাওয়া মানুষের জীবন সহজ করে দেবার লক্ষ্যে নয়, এই খেলা শুধু মাথায় কাঁঠাল ভাংগার খেলা, এই খেলা সরাসরি সাধারণ দর্শকদের জন্য উপভোগের নয় বরং জীবন আরো কঠিন করে তোলার খেলা, এটা স্বার্থপর-লুটেরা শ্রেণীর খেলা। খেলার প্রথম অক্ষর ‘খে’-খেসারত আর দ্বিতীয় অক্ষর ‘লা’-লাভ ! অর্থাৎ তারাই খেসারত দেক যারা লাভের মধ্যে ছিলো এবং আছে-আপাতদৃষ্টে সাধারণ মানুষ এরকমি মনে করছেন !
খেলা খেলতে গেলে এর যেমন একটা পরিণাম আছে তেমনি খেলার আগে ভালো খেলোয়ার সাজাতে হয়-নিজস্ব একটা তৃণমুল সর্মথক গোষ্ঠীরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান কোন শক্তির ভিত্তিতে ‘খেলা হবে’ বলে ধোঁয়া তুললেন ? নিজস্ব কর্মীবাহিনী নাকি প্রশাসন বাহিনী নাকি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ? জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উক্তি হলো,“আন্দোলনকে সফল করতে গেলে সে আন্দোলনের সাথে জনগনের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকতে হয় নতুবা সে আন্দোলন কখনও সফলতার মুখ দেখে না”। বঙ্গবন্ধুর এই উক্তির এই ‘জনগন’ হলো যারা কোন রাজনৈতিক দলের কোন কমিটিতে নেই অর্থাৎ কোন রাজনৈতিক সুবিধাভোগী নয় । কিন্তু আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থেকে প্রত্যেকটি সেক্টরে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন করার পরও সাধারণ মানুষ একটাই প্রশ্ন করছে যে, আমরা এত কিছু বুঝি না-আমরা চাই চাউল-ডালের ন্যায্য মূল্য! পেট্রোল-ডিজেল-গ্যাস বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয় তাই এ বিষয়ে জনগন আর কোন প্রশ্নই করছে না।
জনগনের প্রধান বক্তব্য হলোঃ (১) আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থাৎ ধান চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় হলে কেন চাউলের দাম হু হু করে বাড়বে ? (২) কেন হাসপাতাল গুলোতে কোন রোগী ওষধ পায় না ? (৩) কেন ভূমি অফিসের দূর্ণীতিতে সাধারণ মানুষ এসি ল্যান্ড অফিসে গিয়ে বছরের পর বছর ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ? (৪) কেন অধিকাংশ কৃষকের জমিতে আর নদীূর জোয়ারের পানি আসে না ? (৫) কেন রাস্তাঘাটে অটোরক্সিাচালকসহ অন্যান্য পরিবহনে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলছে ?
প্রিয় পাঠক, জনগনের এই পাঁচটি করা প্রশ্নের সাথে কোন আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক আছে কি ? তার মানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ায় বাজার মনিটর করতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কোন ঠেকা নেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করতে! এই পাঁচটি প্রশ্নের সমাধানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপিসহ বাংলাদেশের কতজন এমপি উল্লেখিত বিষয়ে স্পট ভিজিট করেছেন ?
উল্লেখিত পাঁচটি বিষয়ে স্পট ভিজিট এবং নির্দেশনা দিলেই জনগনের সাথে জন প্রতিনিধিদের ভালোবাসার বন্ধন তৈরী হতো-তারপরে ‘খেলা হবে’ বললে মানাতো ! এখনও সময় আছে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জনগনের দোড়গোড়ায় পৌঁছাবার সহজসরল পথে এগিয়ে তৃণমুল থেকে খেলোয়ার সংগ্রহ করার ! আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পারছেনা খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা-এটাই আওয়ামীলীগের জন্য বড় অভিশাপ ! তাই খেলা হবে বলার আগে জনগনের এই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তারপর মাঠে ঘাটে আরও কোথাও খেলুন জনগন পাশে থাকবে।
জনগন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মানে বিশ্বাস করে কিন্তু তাঁর নেতাকর্মী ও প্রশাসনের লোকজনদের খুব কমই বিশ্বাস করে যেমন, রুপগঞ্জের চনপাড়ার মতো বস্তিতে ১১৪টা মাদক স্পট এবং সেখানে প্রকাশ্যে মেয়েদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ ডজনখানেক হত্যার মতো ঘটনা কি প্রমান করেনা সেখানকার এমপি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, প্রশাসনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রের চরম নির্লজ্জ ব্যর্থতা ? এখানে কি খেলা হবে আর উন্নয়নের কথা বললে হবে ? অথচ দেশে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রচার করতে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতারা বারবার শুধু উন্নয়ন প্রচার করতে নির্দেশ দিচ্ছেন! কি মাথা তাঁদের !
আসলে গতরে খেটে কামাই করেতো ভাত খায় না ! একা একা চলেও না ! বাজারে গিয়ে বাজারও করেনা ! দেশের হাসপাতালে একা একা ডাক্তারও দেখায় না ! তাই,আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের চোখে জং বা মরিচিকা পড়ে গেছে-অহমিকায় শুধু প্রশংসা শুনতে ব্যস্ত-সমালোচনা নয়! আচ্ছা,আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ কেন তারা বুঝতে পারছেন না যে, উন্নয়নের প্রচার অনেক হয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবেই হচ্ছে। আর এ জন্য দেশের মানুষও শেখ হাসিনার উন্নয়নকে প্রাণভরে উপভোগ করে দোয়াও করছে কিন্তু তাঁদের কষ্ট আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের কারণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না-এটা কেন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ভাবতে পারছে না ? ও, তারাতো সাধারণ মানুষের মতো গতরে খেটে খায় না,তাই না ?
অপরপক্ষে, দেশের সাধারণ জনগন বিএনপিকে রাজাকার-গুজব নির্ভরশীল এবং দূর্নীতির শিরোমনিতে ঘেরা বলেই জানে ! আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে-বিরোধীদের ওপর গ্রেনেড হামলা করে আর পাশ্ববর্তী দেশকে অশান্ত করার জন্য দশট্রাক অস্ত্র এনে ধরা পড়ে দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে আজ কোন কিছুতেই সফল হচ্ছে না তাই বাধ্য হয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাবার খেলায় মেতেছে সেই ১৯৭১ইং সালের পরাজিত অশুভশক্তিগুলো আর তারা ক্ষমতায় গেলেই ইতিহাসের সেরা হত্যাযজ্ঞ খেলা খেলবে এবং পরাজিত পাকিস্তানী শক্তির কলোনী করে দেশটাকে আফগানিস্তান বানাবেই-এটি উপলব্ধি করে দেশের স্বাধীতার স্বপক্ষের দল ও সাধারণ মানুষগুলো শত কষ্টের মাঝে থেকেও আওয়ামীলীগকেই সমর্থন করবে-এই গোপন চিরসত্য উপলব্ধিটিকে উপজীব্য করে আওয়ামীলীগের দূর্ণীতিবাজরা, ‘আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও সাধারণ বিবেকবান নাগরিকদের এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে জিম্মী করে ফায়দা লুটছে’ বলেই তারা সাধারণ মানুষের সেবা প্রাপ্তীর স্থানগুলোতে স্পট ভিজিট করতে যায় না এর মানেই অপরাধ জিঁইয়ে লাভবান হচ্ছে! বিএনপি এবং তাদের সমর্থনকারীরা মূলত একটি জায়গায় অধিকাংশের সাথে বড় মিল আর তা হলো পাকিস্তানী মানসিকতা যা সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীণতার বিরুদ্ধাচারন ও জাতীর জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে তাই এদের মানসিকতাগুলো অটোমেটিক জন্ম নিতে থাকে এবং আরও জন্মাতে সাহায্য করে মুক্তিযুদ্ধের দলের নাম ভাংগিয়ে চলা রাজনৈতিক ব্যাবসায়ীদের কারণে।
তাই, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘খেলা হবে’ এই স্লোগানের গুরুত্ব বড় বাঁচা ও মরার ! কিন্তু বাস্তবেই খেলা শুরু করেছে বিএনপি অনেক আগেই –যা উপলব্ধি করে ‘মুল খেলোয়ার জনগনকে’ কাছে টানতে স্থানীয় এমপি বা আওয়ামীলীগ এখনো ব্যর্থই বলা চলে! শুধু উন্নয়ন বন্দনা করে খেলায় জেতা যাবে না-খেলায় জিততে সাধারণ জনগনের সম্পৃক্ততা দরকার জাতীর জনক শিখিয়ে গেছেন কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার আওয়ামীলীগই তাঁকে ধারণ করে না !
খেলার এই আহ্বান আসলেই বড় এবং শ্রেষ্ঠ আহ্বান বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। এরচেয়ে কঠিন সত্য ও চ্যালেঞ্জ ১৯৭৫ইং এর পর এত অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠেনি । এ খেলা টিকে থাকার।
এই ‘খেলা হবে’র প্রেক্ষাপট’ একটি প্রয়োজনীয়তার দুটি পথের ধারাবাহিকতা ! যাকে ধরে রাখতে চেষ্টা রক্তের স্বয়ংক্রিয় নির্দেশনায় বংশ পরম্পরায় যুগ থেকে যুগান্তরে ! চলে সেই নির্দেশনা জিঁইয়ে রাখতে গুজব- সত্য-মিথ্যা -যুক্তি-খুন-খারাবি !
’৭১ এ পরাজিত শক্তির মানসিকতায় বয়ে চলা এই উগ্রতা ভুলিয়ে দেয় সত্য-আপন-আমিত্বকে! রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যার কোন শেষ নেই তবে আছে বহুরুপ। আর এ বহুরুপী রুপগুলোই একেকটি মানসিক-অমানসিক-পরোপকারী-আত্মকেন্দ্রিক অস্তিত্বের অবয়ব হয়ে দেখা দেয়-চেনা দেয়-ধরা দেয় আপন বিশ্বাস, আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পেছনে ক্লান্তিহীন ছুটে চলা কিছু মানুষের। এ মানুষের মানসিকতা বাংলার স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে দুটো ধারায় প্রবাহিতের পরাজিত শক্তিটি আজও আশ্চর্যভাবে যেন সেই রক্তে রক্তে থাকা বেঈমানী, লোভ, আত্মসাৎ এ বুঁদ হয়ে সব এলোমেলো করে দিচ্ছে ! বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামে মহান আত্মত্যাগের এবং বিজয়ী মহান নেতার বংশপরম্পরাকে অত্যন্ত সুকৌশলে খতম করে দিয়ে যে বিদেশী পাকিস্তানী মানসিকতা বাংলায় গেঁড়ে বসেছে তাকে বহুবার সময় দিয়েও শুধরাতে পারেনি এই বাংলার আকাশ-বাতাশ-সংস্কৃতি। কারন, সত্য মিথ্যার খেলায় আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়ে সেই খেলা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেনা ! তাই এ খেলা থেকে জিতে বের হয়ে আসতে ‘খেলা হবে’ ঘোষণাকারী শামীম ওসমানরা তৃণমুল জনসম্পৃক্ততার জন্য জনগনের মনের ভাষা বুঝে বাজার ও সরকারী-বেসরকারী সেবা প্রতিষ্ঠানে জনগনের ভোগান্তি দেখতে ও সমাধানের নির্দেশ দিতে স্পট পরিদর্শন করবে বলে অভিজ্ঞ দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
Discussion about this post