শহরতলীর ক্রাইমজোন হিসেবে পরিচিত কাশিপুর ইউনিয়ন এলাকায় এমন কোন অপরাধ নাই যা আনিসুর রহমান শ্যামল কর্তৃক সংগঠিত হয় না। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি তিনিই কাশিপুরের সকল অপরাধের কর্তা হিসেবেই সকলেই এক নামে ভয় পায় । এই শ্যামলকে এক নামেই গ্যাস চুরি, বিদ্যুৎ চুরি, ভূমিদস্যু, মাদকের বেচাকেনার হাট পরিচালনা, নিজেকে এলাকার অলিখিত বিচারক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে এক চুলও পিছ পা না হলেও এই শ্যামল ও তার বাহিনী। প্রতি রাতেই এলাকার লোকজনকে দেখানোর জন্য থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সদস্যদের ডিউটি কালীন সময়ে বিশেষ বিশেষ আয়োজন করায় অসাধু পুলিশ সদস্যরা আড্ডা জমায় শ্যামলের আস্তানায় । আর তাতেই আতংক যেন আরো এক ধাপ এগিয়ে এলাকবাসীর উপর ছড়ি ঘুড়ায় শ্যামল ও তার বাহিনী । কাশিপুরে এই শ্যামলের অপরাধের তথ্য জানতে গিয়েও অনেক গণমাধ্যমকর্মীরাও ভয়ংকর হুমকির সম্মুখিন হতে হয়। এতো কিছুর পর আনিসুর রহমান শ্যামলকে বহিস্কার করলেও নিজেকে নেতা দাবী করে নানা অপরাধ করেই যাচ্ছে পুরো কাশিপুরসহ ফতুল্লায় ।
জানা যায়, ধর্ষককে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগের একটি ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটি ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়ন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ থেকে আনিসুর রহমান শ্যামলকে বহিস্কার করলেও বর্তমানে সে নিজের নামে সাথে “সভাপতি” পদ ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বহিস্কারের পর দীর্ঘদিন নিরব থাকার পর আবার কেন বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা কিভাবে নামের পিছনে পদ ব্যবহার করছে ? এমন প্রশ্ন কাশিপুর সহ গোটা ফতুল্লা থানা এলাকার যুবলীগ নেতাদের মধ্যে। এনিয়ে তৃনমূল ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, শ্যামল কাশিপুর ইউনিয়ন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেও সে কখনো ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে পরিচয় দেয়নি। সে নিজেকে সভাপতি হিসাবে পরিচয় দিয়ে নিজেকে জাহিল করার চেষ্টা করে। তিনি কোন ক্ষমতার বলে সভাপতি হিসাবে পরিচয় দিতেন কারো কাছে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
আর বহিস্কার করা হলেও কার ক্ষমতার বলে শ্যামল এখনো নিজেকে কাশিপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদ ব্যবহার করে চলছে। নামের পিছনে সভাপতি পদ ব্যবহার করে ফেস্টুন বানিয়ে নিজের ফেইসবুকে আইডিতে পোস্ট করা হয়।এমনকি তার নিজস্ব লোকেরাও শ্যামলকে সভাপতি হিসাবে দাবি করেন। এমনকি যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনে কাশিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করতে গিয়ে আনিসুর রহমান শ্যামল সভাপতিত্বও করছেন বলে দেখা যাচ্ছে।
সূত্র মতে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে কাশিপুরে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযুক্তকে বাচাতে কাশিপুর ইউনিয়ন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আনিসুর রহমান শ্যামল ঐ কিশোরী এবং তার মাকে হুমকি ধামকি দেয় এবং ধর্ষককে পালাতে সহয়তা করে। ঘটনার অভিযোগে পুলিশ শ্যামলকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি প্রাথমিক অনুসন্ধানে শ্যামলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যতা পায়। ফলে সংগঠনের শৃখলাপরিপন্থী কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শ্যামলকে বহিস্কার করা হয়।কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এর স্বাক্ষরিত এক পত্রে বহিস্কারের আদেশ প্রদান করেন। এছাড়া তাকে কেন স্থায়ী ভাবে বহিস্কার করা হবে না স্থানীয় যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের লিখিত জবাব চাওয়া হয়।
ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কাশপিুর ইউনিয়ন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আনিসুর রহমান শ্যামলকে কেন্দ্রীয় কমিটি বহিস্কার করা হয়েছিল। এমন একটি চিঠি আমি পেয়েছি।
কেন্দ্রীয় কমিটি বহিস্কার করার পর কিভাবে শ্যামল কিভাবে সেই পদ ব্যবহার কিংবা পরিচয় দেয় সেটা আবার বোধগম্য নয়। শ্যামলকে তো বহিস্কার করা হয়েছে কিন্তু বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা আবার জানা নাই।
বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হলেও আমাকে চিঠি দেয়া হতো। কিন্তু আমি কোন চিঠি পাইনি। যুবলীগের একজন বহিস্কৃত নেতা কিভাবে তার সেই ব্যবহার করে মিটিং করে তা আমার জানা নাই।
কাশিপুর ইউনিয়নের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আনিসুর রহমান শ্যামলের ভন্ডামী আর কত সহ্য করতে হবে আমাদের ? মাদকের কারবারীদের কাছে থেকে মাসোয়ারা নিয়ে অবাধে ব্যবসা করার ঘটনা করো কি অজানা আছে ? শ্যামল হাজার হাজার চোরাই গ্যাসের সংযোগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর কোন বাড়ির মালিক আছে যে তারা এমন ঘটনা জানেন না ? চেয়ারম্যানের দোহাই দিয়ে নতুন বাড়ি করতে আসা লোকজন কে নানা পন্থায় চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ করার ঘটনাও অসংখ্য। নতুন বাড়ী করতে হলে ইট, বালি, সিমেন্ট, রড় সাপ্লাইয়ের নামে আরেক দফা চাঁদাবাজি ! নইলে হয়রানীর অভিযোগও রযেছে শ্যামল ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ।” একই সাথে ভূমিদস্যু, চোরাই গ্যাসের সংযোগ, চোরাই বিদ্যুৎ সংযোগ, নারী কেলেংকারীসহ সকল অপরাধে জড়িয়ে এলাকার লোকজনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে শ্যামল ও তার বাহিনী। একে তো চোরাই সংযোগ দিয়ে প্রতিটি সংযোগ থেকে নিম্নে ১ লাখ হিসেবে গ্রহণ করার পর প্রতি মাসে হাজার হাজার সংযোগ দিয়ে মাস শেষে বিল আদায় করারও অভিযোগও করেছে এলাকার অনেকেই।
আইনশৃংখলা বাহিনী বিশেষ করে র্যাবের স্বচ্ছ তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে আনিসুর রহমান শ্যামল ও তার বাহিনী অত্যাচারে কতটা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী । তাই র্যাবের স্বচ্ছ তদন্ত দাবী করেছে ভূক্তভোগি অনেকেই।
Discussion about this post