ভূলতা ফাঁড়ি পুলিশের নাকের ডগায় শাসক দলের এক নেতা ও তার পুত্রের নাম ভাঙ্গিয়ে দেলোয়ার, হানজালা, সজিব মিলাদ সোহেল, জাকিরসহ আরো অনেক সন্ত্রাসী নিজেদেরকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ সকল ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলো। একের পর এক এমন নানা অপরাধের পর গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটার ছাত্রলীগ কর্মী রাকিব হাসান (২২) কে হাতের কজ্বি কেটে কুপিয়ে হত্যাকান্ড চালায় সন্ত্রাসীরা । এমন লোমহর্ষক ঘটনা ধামাচাপা দিতে শাসক দলের নেতা পরিচয়দানকারী ফয়সাল, সৌরভসহ আরো কেউ কেউ নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
এমন চেষ্টাকে ধুলিস্যাৎ করে র্যাব-১১ কজ্বিকাটা দেলোয়ারসহ তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে। র্যাব কর্তৃক এমন অপরাধীদের গ্রেফতারের খবরে টনক নডে উঠে রূপগঞ্জের শাসক দলের নেতাদের কারো কারো। রূপগঞ্জের প্রভাবশালী অনেকেই শুক্রবার রাতভর আইনশৃংখলা বাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের কাছে তদ্বির চালায় আসামীদের ছাড়াতে । র্যাব ১১ এর কঠোর অবস্থানের কারণে কজ্বিকাটা আসামীদের থানায় হস্তান্তর করে।
স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতা আপাততঃ তার নাম প্রকাশ না করা অনুরোধে বলেন, থানা পুলিশ কে এই মামলায় কোন আসামী গ্রেফতার না করতে মৌখিক আদেশও দেন এক নেতা। একই সাথে ওই নেতার পুত্রও তদ্বির চালায়, “পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে দুই পক্ষকে এক সাথে বসিয়ে রাকিব খুনের ঘটনা মীমাংশা করে দেয়া হবে । আপাততঃ কেউ যেন গ্রেফতার না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।”
এতো তদ্বির পরেও ছাত্রলীগ কর্মী রাকিব কে কজ্বি কেটে খুনের ঘটনায় মুল হোতা নানা অপরাধের নিয়ন্ত্রক দেলোয়ারসহ তিন খুনীকে গ্রেফতার করায় টনক নডে উঠে শাসক দলের নেতাদের । সারারাত চালায় তদ্বির। শীর্ষ কয়েকজন নেতার মুঠোফোন যাচাই করলেই বেড়িয়ে আসবে এই কারা কারা এই খুনিদের শেল্টার দিয়ে আসছে ।
র্যাবের তথ্য অনুয়ায়ী যজানা যায় :
রূপগঞ্জে আধিপত্যের দ্বন্দ্বে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী রাকিব হোসেন (২২) হত্যা মামলার প্রধান আসামি শ্রমিক লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনসহ (৪০) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি রিজওয়ান সাঈদ জিকু। এর আগে শুক্রবার রাতে পৌনে বারোটার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার অন্য দু’জন হলেন- রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল পূর্বপাড়ার জাকির হোসেনের ছেলে সজিব মিয়া (২২) ও তারাব বিশ্বরোড এলাকার রুবেল হোসেন (৩৮)। প্রধান আসামি দেলোয়ার হোসেন ওরফে কজ্বিকাটা দেলোয়ার উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিবহন শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
র্যাব জানায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে রাকিব হোসেনকে খুন করা হয়। পরদিন নিহতের বোন আখি আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলার এজাহারনামীয় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তার তিনজনকে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এএসপি রিজওয়ান সাঈদ।
উল্লেখ্য, নিহত রাকিব গোলাকান্দাইল এলাকার হারুন মিয়ার ছেলে। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আতিকুর রহমানের অনুসারী ছিলেন।
পুলিশ জানায়, এক সময় ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও স্থানীয়ভাবে ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে রাকিব অধিক পরিচিত ছিল। তার ভাই মো. কাউসার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও ডাকাত দলের সদস্য। ছিনতাই ও মাদকের মামলায় রাকিব একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছিল। মাদক ব্যবসা ও পরিবহন চাঁদাবাজিসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দেলোয়ারের সঙ্গে রাকিব ও তাঁর ভাই মো. কাউসারের দ্বন্দ্ব চলছিল।
এমন ঘটনায় নিহতের পরিবারের দাবী, হত্যাকান্ডের শিকার রাকিব হাসান, তার ভাই কারাগারে বন্দি কাউসারসহ এই পরিবার এবং হত্যাকারী দেলোয়ার – দেলোয়ারের পরিবারসহ সকলেই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এবং তার পুত্র পাপ্পা গাজীর রাজনীতির সাথে যুক্ত।
Discussion about this post