নারায়ণগঞ্জ শহরের ব্যস্ততম শায়েস্তা খান সড়কটির উভয় পাশেই কয়েক শত অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এতে এ সড়কটিতে প্রতিনিয়তই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে শহরবাসীকে চলাচলের সময় চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বাদ পড়ছে না স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়ক তো বটেই ফুটপাতগুলো দিয়ে হাঁটার কোন সুযোগ নেই। জরুরী ভিত্তিতে ব্যস্ততম শায়েস্তা খান সড়কটি থেকে সকল ধরণের অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের দাবি জানান নগরবাসী।
জানা যায়, শায়েস্তা খান সড়কের পাশেই এক সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ছিল। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়টি ফতুল্লার চানমারী এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে এ সড়কের উভয় পাশে রয়েছে সরকারী-বেসরকারী অফিস। বিশেষ করে এ সড়কের পাশে সদ্য উদ্বোধন হওয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা গণগ্রন্থাগার, র্যাব-১১’র সিপিসি-১’র কার্যালয় ও জেলার প্রধান ডাকঘরসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর অবস্থান রয়েছে। এ ছাড়াও বিদেশগামী ব্যাতক্তদের জন্য জরুরী কোভিড পরীক্সা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ।
প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরাও আসা-যাওয়া করছে। এছাড়াও এ সড়কের পাশে রূপালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের শাখাও রয়েছে। সব মিলেই এ সড়কটি খুবই ব্যস্ততম সড়কের পরিণত হয়েছে। অথচ এ সড়কের পুরো অংশ জুড়েই উভয় পাশে গড়ে উঠেছে কমপক্ষে দুইশতাধিক অবৈধ দোকানপাট।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ফল, কসমেটিকস, জামা কাপড়, জুতা, লেপতোষকের দোকান ও বিভিন্ন খাবারের দোকানসহ নানা ধরণের অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠেছে। তবে সবচেয়ে বেশি গড়ে উঠেছে জামাকাপড়ের দোকানপাট। অবৈধ দোকানপাটের কারণে এ সড়কের প্রশ্বস্ততা কমে গেছে। ফলে পথচারীসহ যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, ফুটপাতে এসব দোকান বসিয়ে দোকানীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। সেই চক্রের দাপটেই প্রশাসন ফুটপাত দখলে থাকা অবৈধ দোকানদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন।
আর এই এলাকার শত শত সকল অবৈধ দখলদারদের কারণে যে কেউ কোন প্রতিবাদ করলেই উল্টো নানাভাবে খড়গ নেমে আসে প্রতিবাদকারীর উপর। অবৈধ দখলদারদের একবারেই সাফ কথা, “আমরা থানার ওসিকে টাকা দেই, নেতাদেরকে টাকা দেই, প্রতিদিন দুই বেলা টহল পুলিশকে টাকা দিয়েই আমরা দোকানদারী করি। এখানে আর বলার কি আছে। বঙ্গবন্ধু সড়ক নিয়ে ডিসি অফিসে নিষেধ করছে। আমদের এই শায়েস্তা খান (পুরান কোর্ট) রোডে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই । দেখেন না এই র্যাবের অফিসের সামনেই দোকানদারী করি । তারা তো কিচ্ছু কয় না । আপনেরা কন কে ?“ এভাবেই প্রতিদিন নানাভাবে হকাররা নগরবাসীকে হুমকি দিতেও দেখা যায়।
নগরীর আমলাপাড়া বাসিন্দাি এমরান হোসেন বলেন, প্রতিদিন বেশ কয়েকবার এ সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এ সড়কটিতে বেচা-কেনায় ধুম পড়ে যায়। এ সড়কের অবৈধ দোকানপাট বসার কারণে নির্বিঘ্নে চলাচল করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা সাঈদ বলেন, তার এক মেয়ে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে লেখাপড়া করছে। অথচ এ সড়কটির উভয় পাশে অবৈধ দোকানপাট বসার কারণে সময়মতো রিক্সা দিয়েও চলাচল করতে পারছেন না।
বিশেষ করে বিকেল হলেই এ সড়কে শুরু হয় হাটের মতো কেনা-বেচা। মঙ্গলবার ও বুধবার সন্ধ্যায় গিয়েও এ সড়কে তীব্র যানজট দেখতে পাওয়া যায়। বিকেল থেকে পুরুষ ক্রেতাদের সঙ্গে সঙ্গে নারী ক্রেতাদেরও ভিড় জমে যায়।
এ সড়কের পাশে জুতার দোকান বসিয়ে জীবিকা নির্বাহী করছেন দুই ভাই। ছোট ভাই ইয়াছিন জানান, তারা দীর্ঘ ৩-৪ বছর ধরে এ সড়কে জুতার দোকান বসিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মডেল সদর থানার ওসি মোঃ আনিচুর রহমান মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, নির্দেশ পেলে শায়েস্তা খান সড়কের অবৈধ দোকান-পাট উচ্ছেদ করা হবে। পুলিশের নাম করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন জায়গা থেকে সদর থানার নামে কোন চাঁদাবাজি হয় না। সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে পারলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান ছাড়াও বিগত সময়ে যে সকল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অথরা তদন্ত ইন্সপেক্টর কিংবা থানার সেকেন্ড অফিসারের বক্তব্য জানতে চাইলে সকলেই এক বাক্কেই মন্তব্য করেন কোন অনৈতিক কর্মকান্ডে হকারদের সাথে পুলিমের কোন সম্পর্ক নাই।
অথচ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অসংখ্য হকারদের বক্তব্যের স্বীকার করা রেকর্ড সংরক্ষণে রয়েছে । এবং হকার নেতাসহ চাঁদা আদায়কারী পুরো শায়েস্তা খান সড়কটির নাটের গুরু লাইনম্যান সোহেলের বাবা নিজেও বক্তব্য দিয়ে বলেছেন আমার পোলা সোহেল এই পুরান কোর্ট এলাকার লাইনম্যান। সোহেল টাকা তুলে নিজে তো একা খায় না । চাষাড়ার এক নেতা, থানার ওসি, প্রতিদিন দুই বার পুলিশের টহল গাড়ীতে টাকা দিতে হয় । এমন বক্তব্যের রেকর্ড বিগত সময়ে প্রকাশর পর সোহেল ও তার চাঁদা উত্তোলনকারী র্যাবের হাতে গ্রেফতার হলেও সদর থানা পুলিশী প্রতিবেদনের কারণে এই চাঁদাবাজ সোহেল ও তার সহযোগিরা দ্রুত জামিনে রেব হয়ে এসে ফের বীরের বেশে সকলের নাকের ডগায় চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে একেবারেই প্রকাশ্যেই। আর হংকার দিচ্ছে নগরবাসীকে।
সোহেলসহ এই দখলদার হকারদের এমন দখলদারীর ঘটনায় অনেকেই আরো বলেন, “এ যেন সোহেলের পৈত্রিক সম্পত্তি । শহরে বঙ্গবন্ধু সড়ক মাত্র কয়েক কিলোমিটার ফুটপাত দখলকারী সোহেল যেন নগরীর সড়কের মালিকানা পেয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে। চাঁদাবাজ সোহেল যেন এই শহরের বিশাল কর্তা । পুলিশ ও র্যাবের নাকের ডগায় বছরের পর বছর জুড়ে সোহেল ও তার বাহিনীর চাঁদাবাজি চলছে পুরোদমে। মেয়র, এমপি, ডিসি, এসপি, ওসিসহ নগরীর কর্তা ব্যাক্তিরা যেন অসহায় এই পুচকে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ সোহেলের কাছে ।”
Discussion about this post