বুধবার রাত ৮ টা থেকে এ রিপোর্ট লেকাকালীন পর্যন্ত ( বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ) রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইলের কাঠপট্টি এলাকাসহ আশেপাশে থমথমে পরিস্তিত বিরাজ করছে । সাধরণ মানুষের মাঝে বিরাজমান এমন আতংক নিরসন করতে সারারাত পুলিশ র্যাব ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।এতো কঠোর ব্যবস্থা থাকার পরও কয়েকটি এলাকায় এর প্রভাব পরেছে মারাত্মকভাবে । সারারাত নির্ঘূম রাত্রি যাপন করেছে আতংকগ্রস্থ এলাকাবাসী ।
সকালে ভূলতা এলাকার নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার অনুরাধে বলেন, পূর্ভ থেকেই এই এলাকার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ । দেলোয়ার বাহিনী ভূলতা গোলাকান্দাইল এলাকার বিশাল মাদক ব্যবসা ও স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি নিয়ে এই দ্বন্ধ দীর্ঘদিনের। দেলোয়ার বাহিনী দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ও স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি করতো । মূলতঃ এই দেলোয়ার ও হারুনের পোলা কাউসার বিএনপির সমর্থক হলেও এখন নিজেদের আধিপত্য ঠিক রাখতে কখনো ছাত্রলীগ, কখনো যুবলীগ আবার কখনো নিজেদের কে মন্ত্রীর লোক বলে প্রচার করতো। অথচ এই কাউসার – হারুন বাহিনী, দেলোযার বাহিনী কিংবা স্যৗরভ বাহিনীর কেউ স্কুলেও যায় নাই কখনো ।
এই কাউসারের ছোট ভাই হারুনের পোলা (পুত্র) নিহত রাকিব সম্প্রতি দেলোয়ার বাহিনীর সাথে বিরোধে জড়িয়ে পরে কয়েকটি মটর সাইকের নিয়ে মহড়াও দেয়। হারুনের পুরো পরিবার এমন কি নিহত রাকিবের মা ৫০০ পিছ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলো । আর বাবা, চাচা, ভাই সকলেই অপরাধী। চুরি, বাস ডাকাতি, ছিনতাইসহ সকল অপরাধের সিদ্ধহস্ত দেলোয়ার, কউসার, সৌরভ বাহিনী । আর নিহত রাকিবের পরিবারকে পাগলনীর পরিবার হিসেবেই চিনে সকলেই। অপরদিকে সৌরভ নামের আরো একটি সক্রিয় গ্রুপ নানা অপরাধ সাম্রাজ্য চালিয়ে আসছে সমানতালেই ।
মূলতঃ দেলোয়ার বাহিনীর হামলার পর নিহত রাকিবের লাশ নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে সৌরভ বাহিনী কৌশলে দেলোয়ার বহিনীর বাড়িতে আগুন দিয়ে তান্ডব চালায়। দেলোয়ার বাহিনী খুনের আসামী হয়ে পলাতক আর রাকিব খুন হলেও কাউসার জেলে এই সুযোগে পুরো এলাকার অপরাধ সাম্রাজ্য নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে সৌরভ বাহিনী চারেয় যাচ্ছে দৌড়ঝাপ। এই সুযোগ দেলোয়ারের বাড়িতে আগুণ দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নানা কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে নাটের গুরু সৌরভ ।
জানা যায়, পূর্ব বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রাকিব হাসান নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা।
উপজেলার গোলাকান্দাইলের কাঠপট্টি এলাকায় বুধবার রাত ৯ টার দিকে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত রাকিব হাসান (২২) গোলাকান্দাইল এলাকার হারুক মিয়ার ছেলে।
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (রূপগঞ্জ) আবির হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পূর্ব বিরোধের পাশাপাশি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে নিহত রাকিবের সাথে দ্বন্ধ চলছিলো গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। নিহত রাকিবের বিরুদ্ধে মাদক আইনের মামলা রয়েছে। দেলেয়ার গংয়ের বিরুদ্ধেও মামলা আছে। তারা জেলেও খেটেছেন। উভয় বিরুদ্ধে এলাকার নানা অর্পকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তাদের দ্বন্ধের জেরে রাত ৯ টার দিকে রাকিবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৮টায় দিকে ৮ থেকে ১০ জনের একটি মোটরসাইকেল যোগে কাঠপট্টি এলাকায় দিকে যায়। তাদের হাতে রামদা ও চাপাতি সহ দেশীয় অস্ত্র ছিলো। রাকিবকে সামনে পাওয়া মাত্রই তারা রামদা ও চাপাতি দিয়ে মাথায়, হাতে ও শরীরে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। রাকিব মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মাহাবুবুর রহমান জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাকিবের বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারি ভাবে কুপিয়ে জখম করে তাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়েছে হত্যাকারীরা। পরে তার স্বজন ও স্থানীয় লোকজনরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিলে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ ভূইয়া মাছুম বলেন, নিহত রাকিব ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আতিকুর রহমান মঈনের অনুসারী। রাকিব ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে বিভিন্ন সভাসমাবেশে যোগদান করতেন। আর দেলোয়ার শ্রমিক লীগের নেতা। আমরা দুজনই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীর রাজনীতি করেন। যারা নির্মম ভাবে ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি দাবি করেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনায় রাত সাড়ে ১০ টার দিকে নিহত রাকিবের অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ারের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে চারপাশ ঘিরে রাখে। ওই সময় আশপাশে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ফায়ার সাভির্সের একটি ইউনিটের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভায়।
কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাষ্টার রফিকুল ইসলাম জানান, হত্যাকান্ডের পর সেখানে ৬ টি টিন শেটের ঘর ও একটি দোকানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সেখানে আগুন নেভাতে গেলে বিক্ষুব্ধ বাধা সৃষ্টি করে। তখন পুলিশ ও র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। রাত ১ টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভায়। তবে আগুনে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
রূপগঞ্জ থানার পুলিশ পরির্দশক হুমায়ুন কবির জানান, ঘটনার পরপর হত্যকারীরা পালিয়ে যায়। হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পাশপাশি আগুন জ্বালিয়ে যারা অন্যের জানমাল ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিধানী বলে জানান তিনি।
Discussion about this post