শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে সিমেন্ট উৎপাদনকারী একাধিক কারখানা। এসব সিমেন্ট কারখানা পরিবেশ দূষণ করছে নিয়মিত। বিপর্যস্ত ও ক্ষতির মুখে পড়ছেন স্থানীয় হাজারো মানুষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খোলা ক্রেনে করে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে খালাস হচ্ছে ক্লিংকার। বয়লারের চিমনি থেকে ধোঁয়া আকারে বের হয়ে আসছে ফ্লাইঅ্যাশ। যা বাতাসের সাথে মিশে দূষিত করছে আশপাশের পরিবেশ।
নদী দূষণ এবং বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থায় অবহেলার জন্য বিভিন্ন সিমেন্ট ফ্যাক্টরিকে অনেক সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে। জরিমানার পরও সতর্ক হয়নি শাহ সিমেন্ট, এ্যামিরেটস সিমেন্ট, ক্রাউন, প্রিমিয়ার সিমেন্টসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। সিমেন্ট ফ্যাক্টরি গুলোর পাশেই আবাসিক এলাকা রয়েছে। কয়েক লাখ মানুষের বসবাস এখানে। প্রায় প্রতিনিয়ত সিমেন্ট ফ্যাক্টরি গুলোর এমন আচরনে অতিষ্ট ও মানবেতর জীবন কাটছে স্থানীয়দের। জনজীবন চরম হুমকির মুখে। সিমেন্ট ফ্যাক্টরির পাশেই রয়েছে বাচ্চাদের প্রাইমারি স্কুল মাদ্রাসা সহ রেস্টুরেন্ট। খুব কাছাকাছি এবং নদীর এপাড়েই রয়েছে প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সব মিলিয়ে এখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে এখানে। ফ্যাক্টরিগুলোর পরিবেশ দূষণের ফলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের নদীর তীর ঘেষা একাধিক সিমেন্ট কারখানার কালো ধোঁয়ায় মাথা ব্যাথা, শ্বাস কষ্টসহ আমাদের নানা সমস্যা হয়। নরায়ণগঞ্জের বন্দর ও সদর উপজেলাবাসী ছাড়াও মুন্সীগঞ্জের পূর্ব-পশ্চিম মুক্তারপুর, হাটলক্ষীগঞ্জ, নয়াগাঁও এলাকার মানুষজন খুব কাছে হওয়ায় তারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। নদীর পাড়গুলোতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ করা হলেও তা কোন কাজে আসছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহ সিমেন্টের একজন শ্রমিক জানান, প্রায়ই কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পরি। ভেতরের পরিবেশ এতটাই খারাপ যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও মাঝে মাঝে কষ্ট হয়। এসব থেকে রক্ষার জন্য আমাদের কোনো ব্যবস্থা নেই।
শাহ সিমেন্টে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছু এক কর্মকর্তা জানান, আমরা এ বিষয় গুলো নিয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা চেষ্টা করছি সিমেন্টের ডাস্ট এর বিষয়টি আমাদের প্রতিষ্ঠান মালিক কর্তৃপক্ষকে জানানোর। এটা পরিবেশ ও মানবজীবনের জন্য ক্ষতিকর। আশা করছি মালিক পক্ষ তারা খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নিবে।একদিকে যেমন এই অঞ্চলের দূষণের জন্য প্রধান কারণ সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, বিভিন্ন কারখানা। অন্যদিকে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের একটা বড় অংশ এই এখানে।
পরিবেশ অধিদফতরের উপ পরিচালক আখতারুজ্জামান টুকু বলেন, কাঁচামাল আনলোডের ব্যাপারে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দূষণ কিভাবে কম হয় তা সে ব্যাপারে তাদের অবগত করেছি। তবে আমাদের অভিযান করার কোন নিয়ম নেই। সদর দপ্তর থেকে এসব প্রতিষ্টান মনিটরিং করা হয়। আমরা শুধু ফিজিক্যাল দেখাশুনা করি।
মুনীগঞ্জ ঝেরা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শীলু রায় জানান, এ বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে খুব দ্রুতই আমরা ফ্যাক্টরিগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অভিজ্ঞ মহলের পক্ষ থেকে বারংবার পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সিমেন্ট ফ্যাক্টরী গুলির পরিবেশের ক্ষতিকর বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ করলেও কেউ কোন অবস্থাতেই তা আমলে না নিয়ে উল্টো সারা বছর জুড়েই মাসোয়ারা আদায় করে পরিবেশ ধ্বংস করে বাণিজ্যিক অপকর্ম চালাতে উৎসাহিত করে আসছে বলেও জোড়ালো অভিযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধৃু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংংশ্লিষ্ট এক কর্তা বলেন, চোরে চোরে যেমন মাসতুতো ভাই হয় তেমনি প্রমাণ করেছে নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ ধ্বংসকারী হাজারো প্রতিষ্ঠান আর পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক অসাধু কর্মকর্তারা ।
আর নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা সহসাই উত্তর দিবেন, “উৎকোচ বা মাসোয়ারা কাকে বলে তা তারা জানেন ই না । এই প্রথম এই শব্দের সাথে পরিচিত হলেন তারা !”
Discussion about this post