বাবা – মা – ভাই – ভাবীসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকান্ডের পর শোকে স্তব্ধ হয়ে পরেছিলো সব হারানো আজকের শেখ হাসিনা। সেই কঠিন শোককে পুরো জাতির মতো বুকে ধারণ করে দেশে ফিরে এসে কঠিন রাজনৈতিক লড়াই শুরু করেছেন তিনি। ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে বিপরীত মেরুর স্বার্থাণ্বেষী চক্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। সব হারানোর সেই শোক কে শক্তিতে রূপান্তর করে এখনো দেশের মানুষকে বিশ্বের দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড় করাতেই দিন রাত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। দেশের মানুসের ভাগ্যের পরিবর্তদন ঘটলেই সেই শক্তি সফেল্যের আলো ছড়াবে ।
সেই মনোবল নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া আওয়ামী লীগ
শোকাবহ ১৫ই আগস্ট আজ। শোকের দিন। জাতীয় শোক দিবস।
১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে শাহাদতবরণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাকে হত্যা করে পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্য ও কলঙ্কময় কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল বিপদগামী সেনারা। আজ পুরো জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ই আগস্টে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল।
ইতিহাসের নৃশংস ও মর্মস্পর্শী সেই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ৪৭তম বার্ষিকী আজ সোমবার। গভীর ও বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতি আজ তার শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধুসহ সেদিনের শহীদদের স্মরণ করবে। দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে—জাতীয় শোক দিবস হিসেবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। দিনটি সরকারি ছুটির দিন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করেনি, তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, একমাত্র সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, কৃষক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বেবী সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, সাংবাদিক শহিদ সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আব্দুল নঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে ঘাতকরা এই দিনে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলও খুন হন তার ‘সহকর্মী’ সেনা সদস্যদের হাতে। ঘাতকদের কামানের গোলার আঘাতে মোহাম্মদপুরে একটি পরিবারের বেশ কয়েকজন হতাহত হন। ওই সময় দেশের বাইরে থাকায় ঘাতক চক্রের হাত থেকে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
স্বাধীন বাংলাদেশে কোনও বাঙালি তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে না বলে দৃঢ়বিশ্বাস করতেন বঙ্গবন্ধু। সে জন্য তিনি গণভবনের পরিবর্তে থাকতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে। যে বাড়িটি বাঙালির স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে অসম্ভব প্রিয় ছিল বঙ্গবন্ধুর। এখান থেকেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে সর্বশক্তি নিয়ে ব্রতী ছিলেন। সেদিন ঘাতকদের বুলেটের মুখেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অকুতোভয়। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে ?’
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে হত্যাকারীদের প্রতি ঘৃণার বিষবাষ্প। হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সেদিন বাঙালির ইতিহাসে এক কালিমালিপ্ত অধ্যায় রচিত হয়েছিল। এই বর্বর হত্যাযজ্ঞ ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে নোবেল বিজয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যেকোনও জঘন্য কাজ করতে পারে।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিলেন, ‘বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।’ দ্য টাইমস অব লন্ডনের ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বলা হয় ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনও অস্তিত্ব নেই।’
সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিষয়টি বর্ণনা করেছেন এভাবে—‘সবচেয়ে বিশাল ও ভারী যে লাশটি বাংলাদেশের নিজের বুকে কবরে বসে চলেছে, সেটি মুজিবরের লাশ।’
সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি দেশের বিকাশকে রুদ্ধ করে দেওয়াই ছিল ওই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড জাতির অস্তিত্ব ও মননে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। তবে সে ক্ষতের কিছুটা উপশম হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে খুনিদের বিচারের মাধ্যমে। অনেক বাধা-বিপত্তির পর বিলম্বে হলেও ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। এই বিচার এবং বিচারের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতি তার কলঙ্কের দায় লাঘব করতে সমর্থ হয়েছে।
কবি অন্নদাশঙ্কর তার কবিতার শেষাংশে বাঙালিদের পাপমোচনের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ! থেকো নাকো নীরব দর্শক/ ধিক্কারে মুখর হও/ হাত ধুয়ে এড়াও নরক।’ তবে, কবির আহ্বানে সাড়া দিতে বাঙালির লেগেছিল দীর্ঘ ২১টি বছর। ১৯৭৫ সালেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রদ করে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাজ। বিচার শেষের দিকে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবারও থমকে পড়ে বিচার প্রক্রিয়া। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকে ত্বরান্বিত করে। পরে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালতের চূড়ান্ত রায় কার্যকর হয়। খুনিদের পাঁচ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়। দণ্ডিতদের মধ্যে কয়েকজন এখনও পলাতক রয়েছে। সরকার টাস্কফোর্স গঠন করে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
শোকাবহ ১৫ আগস্টে গোটা জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর আর বেদনাবিধুর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন হাতে নিয়েছে নানা কর্মসূচি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরগুলো পালন করবে নিজ নিজ কর্মসূচি। বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতেও শোক দিবসে কর্মসূচি পালন করছে। পত্রপত্রিকাগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ সংখ্যা। টেলিভিশনগুলোকে প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—সূর্য উদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৬টায় জাতির পিতার স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল, দুপুর ১২টায় টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। এছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করবে। দুপুরে সারা দেশে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন করা হবে।
Discussion about this post