সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন , “এই শহরের কোন বাপ মা নেই !” এমন মন্তব্যকে সামনে রেখে সর্বত্র চলছে ব্যাপক সমালোচনা । মেয়রের এমন বক্তব্য আসলেই কতটা সত্যি ? তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লষন ।
মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর মন্তব্যকে সামনে রেখে অনেকেই বলেছেন, প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে পরিচিত ব্যবসা সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ জেলা দেশের অর্থনীতিতে যে কি পরিমাণ অবদান রাখছে তা সকলের জানা । আর এই নারায়ণগঞ্জ সকল সময় রয়েছে অবহেলিত । ব্যবসার দিক দিয়ে কি নেই নারায়ণগঞ্জে । রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকায় কি পরিমাণ অবহেলার শিকার হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসী তা সহজেই অনুমান করা যায় ।
কেউবা চাকরী আবার কেউবা ব্যবসার প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জে অবস্থানকালে শুরু করে অপকর্ম । অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি করে রাতারাতি অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গিয়ে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলছে নারায়ণগঞ্জে । মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ জনসাধারণ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নানা কারণে নারায়ণগঞ্জে অবস্থান নিয়ে কর্মসংস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন । মোট জনসংখ্যার প্রায় অধিকাংশরাই নারায়ণগঞ্জে অবস্থানকালে কত দ্রুততার সাথে বিশাল ধন সম্পদের মালিক হতে পারবেন তা নিয়ে শুরু করে জঘন্য প্রতিযোগিতা । একই সাথে প্রতিযোগিতার কারণে অপরাধ জগতে পা দিয়ে শুরু করে ঘৃন্য কারবার । সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় ৯০% চাকুরীজীবী অপরাধ প্রবণতায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে রেখেছেন । কোথায় নেই অপরাধ । পুলিশ প্রশাসন ছাড়াও সরকারী সকল সেক্টরেই অপরাধীদের বিষবৃক্ষের শিকড় যেন গভীরে ।
অপরাধীদের দৌড়াত্ম অনন্তকা্ল যাবৎ চলমান থাকালেও বর্তমান পেক্ষাপটে অপরাধ করে কে কার চাইতে এগিয়ে থাকবে তা নিয়েও চলে দর কষাকষি । একজন সরকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জে পোষ্টিং করাতে কোট কোটি টাকা ব্যয় করে ঘুষ বাবদ ! কেন? সকলেই জানেন একজন সামান্য ওসি সমমানের কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের মতো একটি থানায় পোস্টিং করাতে এক কোটি টাকা দিয়ে বদলী হতে হয় । তবে এই টাকা তিনি কোথা থেকে পান আর কেন ই বা এতো টাকা ব্যয় করেন তার হিসেব নিকেষ তারাই করেন সুচারুরূপে । এ যন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে পেদায়ণের ক্ষেত্রে ।
কোথায় নেই অপরাধ ? শহরের প্রতিটি এলাকা, পাড়া মহল্লা, প্রধান প্রধান সড়কে, সরকারী দপ্তরে দপ্তরের রন্দ্রে রন্দ্রে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ । শহরের ডিআইটি এলাকায় সড়কের উপর রিক্সার গ্যারেজ থেকে প্রতি মাসে উত্তোলন হয় বিশাল চাঁদা । সামান্য চটপটি বিক্রেতা চাঁদা না দিয়ে দোকান খুলতে পারেন না।
অপরদিকে নিতাইগঞ্জের হাজার হাজার কোটি টাকার চোরাই গম, হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই লবনের কারবার, ভ্যেজ্য তেলের ভেজাল কারবারসহ অবৈধ স্ট্যান্ডসহ নানা অপরাধ চলছে বিশাল চাঁদাবাজির মাধ্যমেই । যার সকল খবর প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃংখলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সামান্য ওয়াচার পর্যন্ত জানা থাকলেও কে রাখে কার খবর। মাস শেষে আনুপাতিক হারে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যন্ত বখড়া পেলেই সকল পাপ যেন পুন্যিতে পরিণত হয় ।
নিতাইগঞ্জে বিশাল কেলেংকারী ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সামান্য কয়েক কিলোমিটারের এই শহরের টানবাজারে হাজার হাজার কোটি টাকার চোরাই সূতা ব্যবসা করে একেকজন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন । শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে তুলা, সূতা, ক্যামিকেল (রং) কাগজ, পলিথিনের দানা আমদানী করে প্রতিমাসে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একেজন বন্ড লাইসেন্সধারী রাতারাতি বিশাল অর্থ বিত্তের মালিক বনে যাচ্ছে । এমন চোরাই কারবারের সাথে যুক্ত থেকেও অনেকেই কোটিপটি । সামান্য খিলিপান দোকানীও কয়েকটি বহুতল ভবনের মালিক । টানবাজারের এমন চিহ্নিত চোরাই সূতা কারবারীদের বিরুদ্ধে একাদিক মামলা থাকলেও তাদের টিকিটিও কেউ স্পর্শ করতে পারে না নানা কারণে । একদিকে রাজনৈতিক নেতাদের কালো হাত অপরদিকে থানা ও ডিবি পুলিশের ক্যাশিয়ার থেকে শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাথে গোপন সখ্যতা থাকায় বিনা বাধায় বিরামহীনভাবে অবৈধ চোরাই কারবারী চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীদের বিশাল সিন্ডিকেট ।
উল্লেখিত অপকর্ম ছাড়াও ব্যবসাসমৃদ্ধ ছোট্ট এই নারায়ণগঞ্জ শহরে কত ই না অপরাধীদের দৌড়াত্ম রয়েছে তার হিসার আইনপ্রয়োগকারী সকল সংস্থার জানা থাকলেও কোন সংস্থাই ঠিক মতো তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না নানা কারণে । কোন কোন কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জর অপরাধ দমনে কাজ করার ইচ্ছে পোষন করলে প্রভাবশালী নেতাদের কালো হাত অপরাধীদের মাথার উপর বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে থাকে । আবার অপরাধীদের অনেকের সাথে আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্তাদের সাথে গোপন সখত্যা থাকায় বিনা বাধায় অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে ।
বিশ্বের উন্নত শহরেও ফুটপাতে দোকানীদে;র পসরা সাজিয়ে বিক্রির দশ্য দেখা যায় । দরিদ্র শ্রেণীর অনেকেই পেটের তাগিদে ফুটপাতে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন । কিন্তু নারায়ণগঞ্জে কি ঘটছে ? দরিদ্র শ্রেণীর হকাররা পুরো শহরের সকল ফুটপাত সড়ক দখল করে পসরা সজিয়ে ব্যবসা করছেন । নগরবাসী চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে এই হকাররাই । নগরবাসীর এমন প্রতিবন্ধকতার জন্য কি শুধু হকাররাই দায়ি ? এক বাক্যেই সকলেই বলেছেন “না “। এই হকারগণ পেটের দায়ে ফুটপাতে ব্যবসা করেন । রোদ বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নীচে ব্যবসা করে সংসার চালান তারা । কিন্ত তাদের এই কষ্টার্জিত উপার্জনে কারা চাঁদার কালো থাবা বসাচ্ছে ? একদিকে পুলিশের ওই ক্যাশিয়ার, কথিত নেতা ও তাদের নিয়েজিত কয়েকজন লাইনম্যান খ্যত শহরের কুক্ষাত ২০/২৫ জন চাঁদাবাজ নিয়মিত বখড়া আদায় করে যাচ্ছে । আর এই কয়েকজন অপরাধীদের খপ্পরের কারণে পুরো নগরবাসী একেবারেই জিম্মি । ফুটপাতে একেকজন বিক্রেতা তার পসরা নিয়ে বসতে কমপক্ষে ১০ হাজার টাঁকা সালামী দিতে হয় লাইনম্যান খ্যাত এই চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত অপরাধীদের কাছে ।
এমন অপরাধের বিষয়ে অসংখ্যবার আলোচনাকালে চাঁদা আদায়কারীরা বলেন, “খোদ নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র আমদের ফুটপাত থেকে উঠাতে পানে নাই । মেয়রের লোকজনগো বারবার পিটানী দিছি । আর একবার মেয়র নিজেই তো পিটানী খাইছে । কে উঠাইবো আমাদের ? পুলিশ ? পুলিশের পকেটে প্রতিদিন/প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা নেয় । তারা আমাদের উঠাইতে আইবো না । আর নেতা ? আওয়ামীলীগের নেতারা ? তাদের অনেকেই তো এই ফুটপাতের টাকায় অফিস চালায়, নিজেদের পকেট খরচা চালায় । দেওভোগের কে কে এই চাঁদার ভাগ পায় তা কে না জানে । চাষাড়ার কোন কোন নেতা এই ফুটপাতের টাকার ভাগ নেয় তা সকলেই জানেন । চাঁদার এই ভাগাভাগি ছাড়াও তাদের মিটিং মিছিলে আমাদের লোক শোডাইন করে । তাইলে আর আমাদের কে ঠেকাইবো? মেয়র একলা কি করবো ? মাইর তো তার খাইতেই হইবো !“
নারায়ণগঞ্জের অপরাধীদের সামান্য ফিরিস্তি তুলে ধরা হলেও প্রতিটি প্রশাসনিক দপ্তর, আদালত চত্তর, পেসকার পিয়ন,ওমদার কতটা ভয়ংকর পন্থায় অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তার খবর কারোর ই রাখার প্রয়োজন পরে না ।
নারায়ণগঞ্জের এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা নিয়ে আলোচনাকালে সদ্য নারায়ণগঞ্জে যোগদান কার রাস্টয়াত্ব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোহাম্মদ ইসমাইল নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর সাথে একান্ত আলোচনায় বলেন, “আমি পজিটিভ মানুষ । পজিটিভ চিন্তা করি । নারায়ণগঞ্জ দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখে । সেই তুলনায় উন্নয়নের দিক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ রয়েছে পিছিয়ে । আরো অনেক সুন্দর নগরী হওয়ার কথা ছিলো প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত এই নারায়ণগঞ্জ ।
Discussion about this post