ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসকসহ ৫ জেলার জেলা প্রশাসককে তলব করেছে হাইকোর্ট । এমন ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ । নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দপ্তরের দপ্তরে উচ্চ আদালতের এমন আদেশের ঘটনায় চলছে গুঞ্জন।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মস্থলে যোগ দিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় কর্মকর্তাদের অনেকেই বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তর আসলে করেন টা কি ? পরিবেশ ধ্বংস করে মোটা অংকের চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা । আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন তারা। আর এর দ্বায় নিতে হবে জেলা প্রশাসককে । জেলা প্রশাসক পুরো জেলার দায়িত্বে থাকায় কোনভাবেই দ্বায় এড়াতে না পারলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের চাঁদাবাজির মতো বিশাল অপরাদের দায়িত্ব তিনি নেবেন কেন ? এবার উচিৎ হবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মুখোষ উম্মোচন করে দেয়া
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা অমান্য করায় ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহা পরিচালককে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
আগামী ১৭ মে তাদের সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার (২০ এপ্রিল) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মহি উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন আদালতে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) এ সংক্রান্ত আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আমাতুল করিম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে মো. শাহজাহান ও দক্ষিণ সিটির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের পক্ষে ছিলেন মো. মনিরুজ্জামান।
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে উল্লিখিত পাঁচ জেলার অবৈধ ইটভাটার তালিকা করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিলেন।
একইদিন পাঁচ জেলার ডিসি এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ব্যক্তিগতভাবে জুম আইডির মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত থাকতে বলা হয়েছিলো। সেদিন তারা আদালতে উপস্থিত হলেও তাদের পক্ষে এফিডেভিট আকারে দাখিল করা প্রতিবেদনে দেখা যায়, আদালতের আদেশ সঠিকভাবে প্রতিফলন হয়নি। এ কারণে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা শুনতে আগামী ১৭ মে তাদের আবারও তলব করেছেন হাইকোর্ট।
আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন রিটকারীর পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তিনি জানান, এসব জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও বায়দূষণ রোধে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেননি ৫ জেলার ডিসি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়।
ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ বন্ধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। আবেদনে ঢাকার বর্তমান দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ের অবস্থান ও অবৈধ ইটভাটা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে চার দফা নির্দেশনা চাওয়া হয়।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, বায়ুদূষণ বন্ধ করতে ঢাকা শহরে পরিবহন গাড়িতে, নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালি/বর্জ্য ঢেকে রাখা, সিটি করপোরেশন কর্তৃক রাস্তায় পানি ছিটানো, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা, কালো ধোয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করাসহ ৯ দফা নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের সামনে পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি মোটা অংকের অর্থের বিনিময় সিজন আসলে মালিকরা অবৈধভাবে সাভার, ধামরাইসহ সর্বত্র ইটভাটা চালাচ্ছে।
এর আগে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বায়ুদূষণ রোধে ঢাকা শহরের প্রবেশমুখ গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পানি ছিটানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের আইনজীবী মুনিরুজ্জামান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি আদালতের আদেশ অনুসারে পানি ছিটানো। কিন্তু আমাদের কাছে পানি ছিটানোর মেশিন নেই। শুধু পাইপ দিয়ে পানি ছিটানো হয়।
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে একই বছরের ২৮ জানুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
আদেশে এসব ইটভাটা বন্ধ করতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে বলা হয়। একইসঙ্গে ঢাকায় কী কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে এবং দূষণরোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করতে পরিবেশ সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আদালত। কমিটিকে পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রাজধানীতে বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি।
Discussion about this post